22.1 C
Toronto
সোমবার, মে ২০, ২০২৪

সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা, কটাক্ষ বিজেপির

সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা, কটাক্ষ বিজেপির
মমতা বন্দোপাধ্যায়

ভারতের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর সম্পদের তালিকায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ই একমাত্র নাম যিনি কোটিপতি নন। তার ঘোষিত সম্পত্তির মূল্য ১৫ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ্র প্রদেশের জগনমোহন রেড্ডির সম্পত্তি ৫১০ কোটি টাকা। ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখে এমন একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (এডিআর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তারা অবশ্য নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য জোগাড় করেনি।

সংগঠনটি বলছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময়ে যে হলফনামা দিয়ে নিজের সম্পত্তির কথা জানাতে হয়, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে এ তালিকা সংকলন করেছে তারা।

- Advertisement -

তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, আর দ্বিতীয় স্থানে আছেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। তার সম্পত্তি ১৬৩ কোটি টাকার। এরপর তৃতীয় স্থানে আছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। তার সম্পত্তি ৬৩ কোটি টাকার। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ১৭ কোটি আর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার রয়েছে ১৩ কোটি টাকার সম্পত্তি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের নীতিশ কুমারের সম্পত্তির পরিমাণ তিন কোটি টাকা করে। আবার কেরালার বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সম্পত্তি এক কোটি। তালিকার একেবারে শেষ নামটি মমতার।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘কখনো কখনো সর্বভারতীয় কোনো তালিকায় সবচেয়ে নিচে থাকতে পারাটা গর্বের বিষয়।’

তার কথায়, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায় তিনবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, সাতবার সংসদ সদস্য হয়েছেন আর তিনবার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নেন না, সবটাই চলে যায় ত্রাণ তহবিলে। আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বেতন বা সংসদ সদস্যের বেতন ও প্রাক্তন সংসদ সদস্যের পেনশন–এগুলো যোগ করলেই তো কয়েক কোটি টাকা হয়ে যায়। কিন্তু তিনি এখনো টিনের চালের বাড়িতেই থাকেন। তার গ্রাসাচ্ছাদন চলে তার বই বিক্রির রয়্যালটি থেকে।

এদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম ধনবান মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকার একেবারে নিচে থাকা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলটির অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র কেয়া ঘোষ বলেন, ‘উনি নিজেই বলেছেন যে ছবি বিক্রি, গান লেখা বা বইয়ের রয়্যালটি থেকে তার খরচ চলে। তা সেই হিসাবগুলো কোথায় গেল? তার মাপের একজন নেত্রীর এই সম্পত্তি সত্যিই হাস্যকর। নিজেকে এতটাই সৎ আর সহজ সরল দেখানোর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই তো?’

‘সংবাদপত্রেই তো বেরিয়েছিল যে কালীঘাট অঞ্চলে তার পরিবারের নামেই ৩৫টা জমি আছে। আবার তার ভ্রাতৃবধূ কিছুদিন আগেই কলকাতা পৌরসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, তার সম্পত্তিই তো পাঁচ কোটি টাকা। তার পরিবারের সদস্যদের যে ঠাটবাট, তারা বিদেশে চিকিৎসা করাতে যান, এগুলোর হিসাবও বের হোক তাহলে।’

কেন মুখ্যমন্ত্রীদের সম্পত্তির তালিকা?

এডিআর বলছে, তারা নানা সময়ে জনপ্রতিনিধিদের আয় সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশ করে থাকে। বিশেষত নির্বাচনের আগে নিয়মিতই তারা প্রার্থীদের আয় সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে নিয়ে আসে।

এডিআরের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কোঅর্ডিনেটর উজ্জয়িনী হালিম বলছিলেন, ‘সাধারণ মানুষ প্রার্থীদের বা বিধায়ক, সংসদ সদস্যদের আয় আর সম্পত্তির হিসাব জানতে পারলে তাদের ভোটদানের সময়ে জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এজন্যই আমরা এ ধরনের তালিকা প্রকাশ করি। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে তারা তথ্য দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন।’

নেতা-নেত্রীদের সম্পদ বা আয় কি সত্যিই সাধারণ মানুষ বা ভোটারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে? এ প্রশ্নের জবাবে অবশ্য উজ্জয়িনী হালিম বলেন, ‘সেটা বোঝা কঠিন যে কোনো ভোটার যাকে ভোট দিচ্ছেন, সেই সিদ্ধান্ত তিনি কীসের ওপরে ভিত্তি করে নিয়েছেন। তবে ‘মানি পাওয়ার’ আর ‘মাসল পাওয়ার’ যে রাজনীতিতে বাড়ছে, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের কাজ সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা।’

মমতার সততায় কি কালির দাগ লাগছে?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত সততা একটা সময় প্রশ্নাতীত ছিল, যেমন ছিল তার টিনের চালের বাড়িতে থাকা, সাধারণ সুতির শাড়ি আর হাওয়াই চটি পায়ে দেওয়ার মতো অভ্যাস। কিন্তু বিরোধীরা বলেন তার সেই ইমেজে কালির দাগ লেগেছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।

তার দলের বেশ কয়েকজন নেতা সারদা চিট ফান্ড মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য, রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা নেত্রীর ঘনিষ্ঠতার কথাও সামনে এসেছিল।

আবার ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ‘নারদ’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকার স্টিং অপারেশনে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-নেত্রী, বর্তমান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নগদ টাকা নিতে। শুভেন্দু অধিকারী যদিও এখন বিজেপির হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা।

ওইসব ঘটনার প্রভাব ভোটের যন্ত্রে দেখা যায়নি। বিশ্লেষকদের মতে তার কারণ ছিল মমতার সততা নিয়ে কোনো সন্দেহ মানুষের মনে ওঠেনি। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে মমতার মন্ত্রীসভার দু’ নম্বর সদস্য, যিনি আবার দলের মহাসচিব ছিলেন, সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন গ্রেপ্তার হলেন, আর তার ঘনিষ্ঠ এক অভিনেত্রীর ফ্ল্যাট থেকে নগদে প্রায় ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার হলো, সেটা মানুষের মনে একটা সন্দেহ তৈরি করে দেয়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা, শিক্ষা পর্ষদগুলোর প্রধানসহ অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলোর হাতে। রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে নিয়মিতই শুনতে পাওয়া যায় এরকম মন্তব্য যে এতবড় নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যব্যপী নেটওয়ার্ক চালিয়ে আর মুখ্যমন্ত্রী তাদের দুর্নীতির সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না? এ ধরনের মন্তব্য আগে খুব একটা শোনা যেত না।

তবে তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘একটা দলে যে সবাই সৎ হবে, এটা তো আশা করা যায় না। কিন্তু এটাও দেখতে হবে, দুর্নীতির প্রশ্নে মমতা বন্দোপাধ্যায় কিন্তু জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেন। খুবই বড় একজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাকে কিন্তু দল আর মন্ত্রিসভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র : বিবিসি বাংলা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles