10.1 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

চলে গেলেন সতীশ কৌশিক

চলে গেলেন সতীশ কৌশিক
টরন্টোতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঠিকই ঘুরে ঘুরে আসবে ব্রাদার সতীশ কৌশিক আপনি আর কখনো আসবেন না

সতীশ কৌশিক।বলিউড সিনেমা অভিনেতা ও পরিচালক। ফিল্ম এ্যান্ড টলিভিশন ইনিস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া প্রাক্তন ছাত্র। সদ্য মারা গেলেন ৬৬বয়সে। গত ২০০৫ থেকে ২০০৮ একটানা আমি প্রেস কার্ড গলায় ঝুলয়ে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১০ দিন পেট ভরে মগজ ভরে সিনেমা দেখেছি। চোখের সামনে হলিউডে বিগ নেইম বিগ স্টারদের দেখেছি,তবে ধারেকাছে যাইনি। সুযোগ ছিলো গোটা বিশ্বের ছবি দেখার। দেখতামও ইন্দোনিশিয়া,মঙ্গোলিয়া,ইসলাইল,ভিয়েৎনাম এমন কি সুরিনামের। হলিউডের রিলিজ হওয়ার আগে ব্র্যান্ড নিউ সিনেমা স্বশরীরে স্টার সহ আসতো। তবে বিশেষ ভাবে দেখতাম সাউথ এশিয়ান মুভি। যা বেশির ভাগ ইন্ডিয়ান সিনেমা। দেখে লিখতে হতো। তখনি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে ছিলো বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত,রাহুল বোস,সতীশ কৌশিক,নন্দিতা দাস আর সোনালী বোসদের সঙ্গে।

আজ সতীশ কৌশিকের কথা শুধু বলি। ফাঁক পেলে পেইন্টিং দেখতে আর টরন্টো টিম হর্টন কফি খুব পছন্দ করতেন অন্যদের মত সতীশ কৌশিকও। তখনো টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কিং স্ট্রীটে নিজস্ব ১২ ভ্যানু ‘লাইটবক্স’ তৈরী হয়নি। ভ্যানু ছিলো বে স্ট্রীট এন্ড ব্লোর রাস্তা মোড়েব ভ্যারাইটি নামে গুচ্ছ সিনেমা হল আর সেটির লাগোয়া ইন্ডিগো বইয়ের দোকান দিয়ে বাইরে বেরুলেই ‘টিম হর্টন’ কফি শপ। এখানে সতীশ কৌশিক বসতে ও কফি পছন্দ করতেন। এক ব্লক হাঁটলেই রম রয়েল অন্টারিও মিউজিয়াম সেখানে সিনেমা পরপর দেখতে-দেখতে চোখ জ্বালা করলে পেইন্টিং দেখাতে নিয়ে যেতাম। বলিউডের এমন নামী অভিনেতা আবার দামী পরিচালক অথচ এমন সহজ সরল আচরণ যে টেরই পাওয়া যেতনা। কতটা সরল আর ভালো মনুষ ছিলেন কৌশিক তার একটা উধারণ দিলে বুঝবেন। কথায় কথায় তিনি একবার বলে ছিলেন অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা সম্পর্কে। তখন নীনা যৌবনের শিখরে। নাম করছে হাতে অনেক ছবিও রয়েছে মহা ব্যস্ত সে। বন্ধু ছিলো তবে ওকে ভীষণ ভালো লাগতো আমার। বলার সাহস হতোনা তকে সে কথা।

- Advertisement -

আমার মত গোলগাল মটুমটু মানুষকে সুন্দরী অভিনেত্রী কেন পছন্দ করবে,সেটাই ভয় ছিলো! সে বিভোর হয়ে প্রেমে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেটসম্যান ক্রিকেটার ভিভ রিচর্ডের। কুমারী হিসেবে সন্তান ধারণও করে ফেল্লো। ভিভ যথারীতি ছেড়ে চলে গেলো। বেচারী নীনা কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় ছিলো। আমি তাকে তখন বলে ছিলাম- যদি চাও বলতে পারো আমার মানে সতীশ কৌশিকের সন্তান ধারণ করেছো।কালো হলেও লোকে বুঝবে আমিতো যথেষ্ঠ কালো,বিশ্বাস করবে সবাই। আমরা দুইজন মিলে বিয়ে করে বড় করবো তোমার মেয়ে মাসাবাকে। নীনা বড়ই সাহসী নারী।আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে মিডিয়া সহ সবাই কে জানিয়ে দিলো কুমারী হিসাবেই সে ভিভ রিচর্ডে সন্তানের মা হতে যাচ্ছে। এনিয়ে তার কনো লজ্জা দুঃখ গ্লানি নেই।

সে একাই তার মেয়েকে বড় করবে। এমন ঘটনা আগে কখনো বলিউডে ঘটেনি পরেও ঘটেনি। নীনার মত সাহসী আত্মসন্মানে ভরপুর নারী বলিউডে আর একটি নেই। আমি সতীশ কৌশিক তাকে সেদিন স্যালুট করে আজীবন ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো বলে ছিলাম,আজো আছি বন্ধু রয়েছি। সদ্য প্রকাশিত নীনা গুপ্তার নিজের লেখা বায়োগ্রাফী ‘সচ কাঁহু তো’ বইটিতে এই কথা সতীশ কৌশিক সম্পর্কে লিখেছেন তিনি লিখেছেন।

কৌশিক ১৯৮৩ সালে নাসিরউদ্দিন শাহ অভিনীত কমেডি হিট সিনেমা ‘জানেভী দো ইয়ারো’ চিত্রনাট্য লিখে সুনাম পান,পরিচিত হোন । বলিউড সিনেমা ইতিহাসে মাইলস্টোন হয়ে আছে সতীশ কৌশিক পরিচালিত অনীল কাপুর অভিনীত ১৯৮৭সালে করা ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমাটি। ২০০৩ করা তার ‘তেরে নাম’ সুপার হিট সিনেমা। সালমান খান তখন সুপার ডুপার স্টার।কৌশিকে এক কথায় রাজী হয়ে গিয়ে ছিলেন ১৯৪০ স্টাইলে সামনে টেনে চার্লী চ্যাপলীনের মত হেয়ার কাট করতে যা তাকে দুধ ওয়ালার মত লাগছিলো। ছবিটি রিলিজের পর গোটা ভারতেতো বটে বাংলাদেশের মফস্বল শহর গুলোতে পর্যন্ত সালমান খানের ‘তেরে নাম’কাট দিতে সেলুনে যুবকদের লাইন পড়তো তখন। পরিচালক সতীশের শেষ সিনেমা ‘কাগজ’ (Kagaaj ২০২১) কাগজে কলমে একজন মৃত্য অথচ সে জীবীত একজন মানুষ। সেযে জীবীত তা প্রমাণ করতে তার যে যুদ্ধ এটাই ছবির গল্প।

একটু দেরী করে হলেও তিনি বিয়ে করে ছিলেন। তার ১০ বছরের মেয়েটি ছিলো তার জানপ্রাণ।
টরন্টোতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঠিকই ঘুরে ঘুরে আসবে ব্রাদার সতীশ কৌশিক আপনি আর কখনো আসবেন না! * তিনি আমাকে ব্রাদার ইকবাল করে ডাকতেন। গুড বাই ব্রাদার গ্রেট সতীশ কৌশিক।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles