3.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

কোরআনে বর্ণিত রোজা বিষয়ক ৮ বিধান

কোরআনে বর্ণিত রোজা বিষয়ক ৮ বিধান

পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে রোজার আলোচনা এসেছে, যেসব আয়াতে আল্লাহ প্রধানত রোজার বিধি-বিধানগুলো বর্ণনা করেছেন। নিম্নে রমজান ও রোজা সংক্রান্ত আয়াতগুলো বর্ণনা করা হলো।

- Advertisement -

১. রমজানের রোজা ফরজ : আল্লাহ প্রত্যেক সাবালক ও সুস্থ মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

২. অসুস্থ ব্যক্তির রোজার বিধান : কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার ব্যাপারে শরিয়তের বিধান হলো—‘রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের খুব বেশি কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া—একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

৩. কোরআন নাজিলের মাস রমজান : আল্লাহ রমজানে কোরআন অবতীর্ণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

৪. রোজার সময়সীমা : কতটুকু সময় রোজা রাখতে হবে আল্লাহ তা কোরআনে বলে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কোরো। আর তোমরা পানাহার কোরো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কোরো। তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হইয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং এগুলোর নিকটবর্তী হইয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনাবলি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা আল্লাহভীরু হতে পারে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

৫. রোজা হজ-ওমরাহর প্রতিবিধান : হজ ও ওমরাহর সময় যদি ব্যক্তি কোনো বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়, তবে রোজার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে পারবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পূর্ণ কোরো। কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে সহজলভ্য কোরবানি কোরো। যে পর্যন্ত কোরবানির পশু তার স্থানে না পৌঁছে তোমরা মাথামুণ্ডন কোরো না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় কিংবা মাথায় কষ্টদায়ক কিছু থাকে, তবে রোজা বা সদকা অথবা কোরবানি দ্বারা তার ফিদয়া দেবে। যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজের আগে ওমরাহ দ্বারা লাভবান হতে চায়, সে সহজলভ্য কোরবানি করবে। কিন্তু যদি কেউ তা না পায়, তবে তাঁকে হজের সময় তিন দিন এবং ঘরে ফেরার পর সাত দিন এই পূর্ণ ১০ দিন রোজা পালন করতে হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)

৬. রোজা ভুলে হত্যার প্রতিবিধান : রোজা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃত হত্যার দায় থেকে রেহাই পেতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত করলে তা স্বতন্ত্র; এবং কেউ কোনো মুমিনকে ভুলে হত্যা করলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে এবং তার পরিজনকে রক্তপণ দেওয়াই বিধান, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয়, তবে একজন মুমিন দাস মুক্ত করাই বিধান। আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যার সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ, তবে তার পরিবারকে রক্তপণ দেওয়া এবং মুমিন দাস মুক্ত করাই বিধান। সে সামর্থ্য রাখে না, সে ধারাবাহিক দুই মাস রোজা পালন করবে। তাওবার জন্য এটা আল্লাহর ব্যবস্থা। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৯২)

৭. রোজা শপথ ভঙ্গের প্রতিবিধান : কেউ যদি শপথ ভঙ্গ করে তবে প্রতিবিধান হিসেবে রোজা রাখতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদের দায়ি করবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোরো সেসবের জন্য তিনি তোমাদের দায়ী করবেন। অতঃপর এর কাফফারা ১০ দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাবার দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদের খেতে দাও, অথবা তাদের কাপড় দান বা একজন দাস মুক্তি এবং যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোজা পালন। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা, তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কোরো। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন। যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কোরো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮৯)

৮. রোজা জিহারের প্রতিবিধান : জিহার হলো স্ত্রীকে নিজের মায়ের সঙ্গে তুলনা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা অপরাধ। রোজার মাধ্যমে এই অপরাধের দায়মুক্তি ঘটে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে জিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, তা দ্বারা তোমাদের উপদেশ দেওয়া যাচ্ছে। তোমরা যা করো আল্লাহ তার খবর রাখেন। কিন্তু যার এ সামর্থ্য থাকবে না, একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে তাকে ধারাবাহিক দুই মাস রোজা পালন করতে হবে; যে তাতে অসমর্থ, সে ৬০ জন অভাবগ্রস্তকে খাওয়াবে। এটা এ জন্য যে তোমরা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে বিশ্বাস স্থাপন করো। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান; অবিশ্বাসীদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ৩-৪)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের কল্যাণ দান করুন। আমিন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles