2.1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হিসাব কারও কাছেই নেই

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হিসাব কারও কাছেই নেই

পুরান ঢাকার ছিদ্দিকবাজারে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ২০ জনের। এর দুদিন আগে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ যায় তিনজনের। এ ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়। এ ধরনের একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা রাজধানীর ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে দেখা গেছে, রাজধানীতে কখনই কারিগরিভাবে ভবন পরীক্ষা করা হয়নি। কেবল ‘চোখের দেখায়’ কিছু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা হয়েছে।

- Advertisement -

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্য মতে, রাজধানীতে ২৬ লাখ ভবন রয়েছে। সংস্থাটির দাবি, প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ হাজার নতুন ভবন রাজধানীতে যুক্ত হচ্ছে। এসব ভবনের ৯০ শতাংশের ব্যবহার ছাড়পত্র (অকুপেন্সি সনদ) নেই। যদিও পাঁচ বছর পরপর ভবনের ‘অকুপেন্সি সনদ’ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এ জন্য ভবন মালিকদের ওপর দায় চাপাতে চায় রাজউক।

সংস্থাটির দাবি, ভবন নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদন নেওয়ার পর যখন ওই ভবনে বসবাস শুরু হয়, তখন আর কেউ রাজউকে আসে না। সেবা সংস্থাগুলো (সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি) যখন তাদের সংযোগ দিচ্ছে, তখন রাজউকের কাছে আসেন না ভবন মালিকরা। তাই রাজউকের চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র। তবে এখন আর ছাড় দিতে চায় না রাজউক। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, পুরনো ভবনে যাই ঘটুক, নতুন করে কেউ যেন অকুপেন্সি সনদ ছাড়া ভবনে উঠতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থ্রা প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে কতটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তার কোনো তালিকা বা হিসাব রাজউকের কাছে নেই। এর আগে কেবল ‘আরবান রেজিলিয়েন্স’ প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ২৫০টি সরকারি ভবনের ঝুঁকি সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে ‘চোখের দেখার’ ওপর একটি জরিপ করেছিল বলে জানিয়েছেন রাজউকের কর্মকর্তারা।

নিয়ম অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শেষে ‘অকুপেন্সি সনদ’ দেওয়ার কথা রাজউকের। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা। কিন্তু এসব কর্মকর্তা কখনো ভবন পরিদর্শনে যান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ছিদ্দিকবাজারের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে রাজউক। তাদের আওতাধীন সব ভবনের বেজমেন্ট তথ্য সংগ্রহে নামছে সংস্থাটি। এ কাজের জন্য আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে রাজউক কর্মকর্তাদের। তাদের ১৬ মার্চের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তালিকা ধরে অভিযান চালানো হবে। তবে ২৬ লাখ ভবনের বেজমেন্ট পরিদর্শন করে এত দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে।

ভবনে বিস্ফোরণে রাজউকের দায় দেখেন না সংস্থাটির সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বিধিমালায় আছে পাঁচ বছর পরপর অকুপেন্সি সনদ নিতে হবে। কিন্তু ভবন মালিকরা সেটি নেন না। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা প্রত্যেক ভবন সার্ভে করতে পারি না। আমাদের কারিগরি লোক ছিল না। এখন নতুন করে ১০০ পরিদর্শক নেওয়া হচ্ছে; তারা প্রত্যেকেই টেকনিক্যাল। এখন কাজে গতি আসবে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি নতুন ভবনগুলোর ক্ষেত্রে। পুরনো ভবন যখন গড়ে উঠেছে, তখন রাজউকের নিয়মনীতি কঠোর ছিল না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদি হাসান আনসারী আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকা শহরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা বিক্ষিপ্তভাবে হয়েছে। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কারিগরিভাবে কখনো হয়নি। সময় এসেছে, এখন সেটি করতে হবে। সিটি করপোরেশন, তিতাস, ডিপিডিসি, ওয়াসা, রাজউক- কোনো সংস্থাই বিস্ফোরণের দায় এড়াতে পারে না। রাজউকের উচিত ছিল ভবন ব্যবহারের সদন যাচাই করা, তারা সেটি করেনি। আর অন্যান্য সেবা সংস্থার উচিত ছিল সঠিক নিয়ম মেনে তাদের সেবার সংযোগ দেওয়া। কাজেই দায় সবারই আছে।

তিনি বলেন, ঝুঁকি যাচাইয়ের জন্য সব ভবনের তথ্য চাওয়ার অধিকার রাজউকের রয়েছে। রাজউক শর্ত দিয়ে দেবে- কোন কোন জিনিস না থাকলে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এসব শর্ত ভবন মালিকরা পূরণ করবেন। নইলে ভবন ব্যবহার বাতিল করে দিতে পারে রাজউক। এমন কড়াকড়ি না করলে কখনো নিরাপদ নগর গড়ে উঠবে না।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয় রাজউক। ভবন মালিকরা ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কিনা, সেটি দেখার দায়িত্ব কার? রাজউকের অথরাইজড অফিসার কি ভবন পরিদর্শনে যান? আসলে জবাবদিহি নেই বলে রাজউক এমন দায়সারা কথা বলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিরূপণে ২০১১ সালে জাইকার সহযোগিতায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর পরিচালিত চার বছর মেয়াদি এক জরিপে বেরিয়ে আসে- গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে নির্মিত ঢাকার ২ হাজার ১৯৩টি সরকারি ভবনের ৫৯ শতাংশই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জরিপে বলা হয়, ভবনগুলোর বয়স ২০ বছরের বেশি হওয়ায় ইটের গাঁথুনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০০৪ সালে পুরান ঢাকায় ভবন ধসে ১৭ জনের মৃত্যুর পর অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি জরিপ করে। জরিপের তথ্য অনুসারে ওই সময় রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল প্রায় ৫০০টি। এরপর আরও দুর্ঘটনা ঘটেছে; তবে কখনই কোনো সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করেনি।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles