10.7 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

গণতন্ত্র ও হীরো আলম

গণতন্ত্র ও হীরো আলম
ছবি ফ্রেড মুন

স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম দুটো গুরতর অভিযোগ করেছেন। ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে বগুড়া-৪ এবং ৬ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন, ‘আমার বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রের ভোট গণনা বাদ দিয়েই ফলাফল দিয়েছে প্রশাসন। এই কেন্দ্রগুলোতে কত ভোট পেলাম তা জানানো হয়নি আমাকে। আমাদের নন্দীগ্রামে যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয়, সেখানে ৪৯টি কেন্দ্র। নির্বাচন কর্মকর্তা ৩৯টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা দিয়ে থেমে যান। এরপর সরাসরি বাকি ১০ কেন্দ্রে তানসেন জয়ী বলে ঘোষণা দেন। এই ১০ কেন্দ্রেই ফলাফল কারচুপি করা হয়েছে। আমার বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রের ভোট গণনা বাদ দিয়েই ফলাফল দিয়েছে প্রশাসন। এই কেন্দ্রগুলোতে কত ভোট পেলাম তা জানানো হয়নি আমাকে।’

‘কিছু কিছু শিক্ষিত লোক আমাকে মেনে নিতে চায় না। তারা ভাবে আমি পাশ করলে দেশের সম্মান যাবে, অনেকের সম্মান যাবে। অফিসারদের লজ্জা যে হিরো আলমেক স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে। আমাকে জিততে দেওয়া হয়নি।’

- Advertisement -

এরশাদের সময়কাল যারা দেখেছেন, তারা জানবেন, যে এই একই অভিযোগটি এরশাদের বিরুদ্ধে করতো তৎকালে জাসদ (ইনু), ওয়ার্কাস পার্টি, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জামায়াত। বিশেষ করে জাসদ ইনু গ্রুপ সবচেয়ে বেশী সরব ছিল এই বলে যে এরশাদের আমলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময়, হঠাৎ করেই কিছুক্ষণের জন্যে কন্ট্রোল রুম থেকে বন্ধ করা হতো এবং দু এক ঘন্টা পরে যে ফল ঘোষণা করা হতো তা পুর্বে ঘোষিত ফলাফলের ধারাবাহিকতার সাথে মিলতো না। দেখা যেত অধিকাংশ কেন্দ্রে নৌকা এগিয়ে, হঠাৎ করেই কয়েকটি কেন্দ্রের ফল উল্টে দিয়ে লাঙলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হতো। এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী সরব ছিল যেই জাসদ ইনু গ্রুপ তারাই আজ প্রথম সুযোগেই হিরো আলমের বিরুদ্ধে একই কাজ করে ভোটের ফলাফল উল্টে দিয়েছে। সুতরাং বলা যায়, এরশাদ বা জাসদ ইনুর কোন পার্থক্য নেই, কখনো ছিলও না। ক্ষমতাটা কে পাবে সেটাই এদের কাছে মুখ্য। অযথা কিছু মানুষ এদের কথায় জীবন বিসর্জন দেয় আর সারাজীবন তার খেসারত দেয় সন্তানহারা সেই পরিবারটি।

অপর গুরতর অভিযোগটি হিরো আলম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে জনগণ ক্ষমতার উৎস নয়। জনগণ ভোট দিলেই সবাইকে সবাই মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। হিরো আলম এমপি হলে জাতীয় সংসদ হিরো আলমের সংসদ হয়ে যাবে, এটা একটা মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে যায় না?
সিলেট সদর উপজেলায় ১৯৯০ সালে মানুষ খেপে গিয়ে ছক্কা ছয়ফুরকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে দিয়েছিল। সেটা ছিল এরশাদের আমলে। জনগণের সেই রায়কে উল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হয় নি, বছর বছর প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট ছক্কা ছয়ফুর সিলেটের বাঘা বাঘা প্রার্থীকে হারিয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিল জনগণের ভোটে, কারণ সেই ভোটের রায় নিরপেক্ষভাবে প্রকাশের সুযোগ ছিল সেই কথিত স্বৈরাচার এরশাদের আমলে। আর আজ হিরো আলমকে এমপি হতে দেয়া হলো না, এমনকি কোন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের কাছে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরকৃত ফলাফল দেয়া হয় নি বলেও অভিযোগ করেছেন হিরো আলম। আর এসব করে জাসদ ইনু একজন এমপি পেলেন বটে, তবে জনগণ আবারও পরাজিত হলো। প্রমানিত হলো যে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে কখনো থাকে না, থাকতে দেয়া হয় না। জাসদ ইনুও সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়ে গেল, যা বড়ই লজ্জাস্কর বলে ইতিহাসে লেখা থাকবে।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles