1.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

সেই সময়

সেই সময়
ফাইল ছবি

সেদিন সন্ধার সময় আব্বা ডেকে পাঠালেন।-তুই কার রেডিও ছাড়িয়ে দিয়েছিস?-কেন? আমি জানতে চাইলাম।-সুবেদার এসে বললো -তোমার ছেলের জন্য আমি একজনকে ছেড়ে দিলাম। কি সাংঘাতিক কথা? আমি শিউরে উঠলাম। আব্বাকে বললাম-মান্নান ভাইকে খবর পাঠান যেন রেডিও সমেত এখনই চলে আসেন।

আমি মান্নান ভাই সুবেদারের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে রেডিও । সন্ধা কেবল নামছে। -ওস্তাদ ও মুক্তি নেহি। ভাইকে বললাম-রেডিওটা তার হাতে দেন। সুবেদার রেডিওটা আবার হাতে নিলো। -ও মুক্তি হলে আর আসতো না। সুবেদার চুপ করে থাকলো। মনে হলো আমার কথা তার বিশ্বাস হয়েছে। রেডিওটি তার হাতে দিলো। আমরা দুজন রেল লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে দূরে চলে এলাম। -আপনি আর ভুলেও এদিকে আসবেন না। মান্নান ভাই এর হৃদ কম্পন মনে হয় আমি শুনতে পাচ্ছি। রেল লাইন পার হয়ে তিনি গ্রামের পথে অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। আমি বাসায় ফিরে এলাম। আব্বা চিন্তিত মুখে বসে আছেন।
পর্ব-১৫

- Advertisement -

ক’দিন পর দেখলাম সুবেদার লোটা কম্বল গোছাচ্ছে আমাকে দেখে বললো-দেখ ইয়ে হামারা নোকরী হায়। ওরা বেনাপোল সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় চলে গেল। নতুন আর এক দল এলো ব্রীজ পাহারা দিতে। একদিন খবর এলো সুবেদারকে গেরিলা বাহিনী গুলি করেছে এবং সে ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে। পুরা বাজারটাতে পাকসেনারা ঘুরে বেড়াতো। ভয়ে বাইরে বের হতাম না তবে কিছু প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই বাইরে আসতে হতো। একদিন দুপুরে চুল কাটাতে নাপিতের কাছে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি সেই খান সেনা রেল ষ্টেশনের মধ্যে। -তুম কিদার যাতা হো? সে আগেও এখানে দাঁড় করিয়েছিলো।-ওস্তাদ চুল কাটাতে যাতা হায়। আমি মাথায় হাত দিয়ে চুল ধরে দেখিয়ে বললাম। সে ক্ষেপে গেল। -চুল কিয়া হায়? বাল হায়। আমি একটু ভড়কে গিয়ে বললাম-বাল কাটতে যাতা হায়। আমি দ্রুত চলে গেলাম।

আমরা বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান শুনতাম। সন্ধায় রেডিও নিয়ে বাড়ীর নিচের একটি ঘরে বসতাম। এ ঘরটি আব্বার অফিস ঘর। একদিন আবিস্কার করলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বিবিসি শোনা কমে গেল। এখন সন্ধা হলে অফিস ঘরটায় রেডিও নিয়ে বসি। কয়েকজন প্রতিবেশীও আসেন। বেশ ভালোও লাগে। এম আর আকতার মুকুলের জল্লাদের দরবার অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে। রথীন্দ্র নাথ রায় এর কন্ঠ এখনও মনে বাজে।

অনুষ্ঠান আমরা ঠিকই শুনতাম সাথে ভয়ও লেগে থাকতো কারণ পাকিস্তনীদের কানে সংবাদ পৌছে দেয়ার মতো লোকও আছে আশে পাশে। আমাদের বাসায় সে সময় আব্বার সাথেই একটি ছেলে থাকতো। তার কাজ চা সিগারেট দোকান থেকে এনে দেয়া আর সব সময় আব্বার সামনে থাকা। আব্বা এদেরকে অনেক আদর আর যত্ন করতেন। বাড়ীতে আসার সাথে সাথেই আমরা ভাই বোনরা হতাম ওদের মামা আর আব্বা-মা নানা-নানী। মাঝে মাঝে আমি আমার এই ভাগ্নে কে পাইলট বলে ডাকতাম।

পাইলটকে বাইরে বসিয়ে রাখতাম গোয়েন্দাগিরি করার জন্য। সন্ধা থেকেই আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে বসতাম। কেউ আমাদের এ ঘরের দিকে পা বাড়ানোর আগেই পাইলট এসে খবর দিতো। রেডিও’র সেন্টার পরিবর্তন করে সাথে সাথে চলে যেতাম বিবিসি’র অনুষ্ঠানে।

একদিন বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখি একটি হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিয়ে চলে গেল। হেলিকপ্টারের পেছনে আমরা এলাকার ছেলেরা ছুটতে লাগলাম। যেখানটাতে আমাদের স্কুল সেখানে ধান ক্ষেতের মধ্যে ততক্ষণে নেমে পড়ছে। আমাদের এই স্কুলটি এখন আশ্রয় শিবির। গ্রাম থেকে গরীব কিছু লোকজনকে এরা বন্দুকের মুখে নিয়ে এসে শিখিয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিলো, শরনার্থী শিবিরে ছিলো, সেখানে টিকতে না পেরে ফিরে এসেছে।
স্কুলের সামনে প্রচুর লোকজনের ভীড়। এই হেলিক্পটারে প্রিন্স করিম আগা খান এসেছেন। তাকে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে আশ্রয় শিবিরটাকে। করিম আগাখানকে এক পর্যায়ে দর্শকদের কাছে নিয়ে আসা হলো। তার দু’পাশে মাজায় পিস্তলগোজা দুজন খান সেনা। করিম আগাখান এসেছিলেন পরিস্থিতি জানতে, বুঝতে কিন্তু এ অবস্থায় কে মুখ খুলবে?

ভীড়ের মধ্য থেকে কে যেন বললো-বাবু ভালো ইংরাজী পারে,-এই বাবু তুই কিছু বলনা আগাখানকে।-বলনা ওদের অত্যারের কথা। মৃত্যুর কথা কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাদেরকে স্তবদ্ধ করে দেয়। জানতাম এখানে সাহস দেখানোর পরিণাম কি তাই মুখ বন্ধ করে ভীড়ের পিছনে চলে এলাম। অল্প পরেই আগাখানের হেলিকপ্টার ধানক্ষেত থেকে আকাশে উড়লো। দূর থেকে দেখলাম রাইফেল হাতে ৬/৭জন পাক সেনা ধানক্ষেত থেকে বেরিয়ে আসছে।
সেদিন রাতে রেডিও পাকিস্তান খুলনা কেন্দ্র থেকে আগা খানের ঐ পরিদর্শনের বিবরণ শুনলাম। শোনানো বুলি মতে আশ্রয়

শিবিরের কয়েকজন আগাখান কে বলছে-আমাদের হাতে রাইফেল দেন আমরা যুদ্ধ করবো। সে সময় বিদেশীদের দেখানোর জন্য এসব নাটক করা হতো যে বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধ চায়না।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles