15.2 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

মুসার দাবি- প্রিন্সেস ডায়ানাও ছিলেন তার বান্ধবী

মুসার দাবি- প্রিন্সেস ডায়ানাও ছিলেন তার বান্ধবী - the Bengali Times I Bengali Newspaper in Canada
ফাইল ছবি

বহুল আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি গাড়িতে ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন ৬টা ৫৫ মিনিটে। অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে নিজের চিরায়ত স্বভাবমূলক ভঙ্গিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নানা ‘গল্প’ শোনালেন তিনি। তার দাবি, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব, এর পর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। তবে সে সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। তিনিই ছিলেন ডায়ানার প্রথম প্রেমিক। সে প্রেম ভেঙে গেলে ডায়ানা আরেক সম্পর্কে জড়ান।

মুসার ভাষ্য, তার প্রিন্স উপাধি দেখেই ডায়ানা তার প্রতি আকৃষ্ট হন। মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তিনি যখন এই প্রেমের গল্প বলছিলেন, তখন তার পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী ও সন্তান। এক পর্যায়ে মুসাকে তার স্ত্রী বলেন- ‘এখানে কেন এসব কথা বলো? নিজের বানানো এসব রূপকথার গল্প নাতি-নাতনিদের শোনাবে। এবার এসব বাদ দাও। চুপ করো।’

- Advertisement -

সারাবিশ্বের হার্টথ্রব ডায়ানার সঙ্গে মুসার প্রেমের গল্প শুনে ডিবি কর্মকর্তাদের মধ্যে হাস্যরসের পরিবেশ তৈরি হয়। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে এসব তথ্য জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বলেন, মুসা অত্যন্ত সাবলীলভাবে প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছিলেন। অর্থ-সম্পদ নিয়ে যেভাবে মুখরোচক গল্প বলেছেন, একইভাবে ডায়ানার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও ভুয়া সব তথ্য দেন তিনি। ডায়ানার সঙ্গে তার সম্পর্ক তো বহু দূরের কথা, ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, মুসা দাবি করেছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা; এর একক কৃতিত্ব তার। কারণ তিনিই প্রথমে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেটা না করলে কোটি কোটি টাকার রেমিট্যান্স কীভাবে আসত? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের উন্নয়ন করার স্বপ্ন প্রথমে দেখান তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে মুসার দাবি, প্রিন্স উপাধি তার গর্বের। সৌদি বাদশা তাকে এ উপাধি দিয়েছেন। সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। ডিবি বলছে, মুসার এই প্রিন্স উপাধিও ভুয়া। মুসা জানান, এক সময় বিশ্বের এক নম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। বহু দেশের অস্ত্র কেনাকাটায় দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। মুখে এসব কথা বললেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।

ডিবির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কাদের এক বড়মাপের প্রতারক। তবে কাদেরের সঙ্গে প্রতারণা করতে চেয়েছিলেন মুসা। তার সঙ্গে পরিচয়ের পর মুসা তাকে প্রস্তাব দেন, তাকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হলে মাসখানেক পর ২০ কোটি টাকা ফেরত দেবেন। এর পর এটা বিশ্বাসযোগ্য করতে কাদেরকে ২০ কোটি টাকার একটি চেক দেন মুসা। তবে সত্যিকার অর্থে প্রতারক কাদেরের কাছ থেকে এ যাবৎ ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন বিতর্কিত এই ধনকুবের। তার ধারণা ছিল, কাদেরের কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। তিনি সত্যিই একজন অতিরিক্ত সচিব। প্রতারক কাদেরের কিছু অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন মুসা।

মুসার ব্যাপারে তার স্বজনের ভাষ্য, তিনি বানিয়ে নিজের অর্থ-বিত্ত নিয়ে গল্প বলতে পছন্দ করেন। তার অনেক বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। মুসা মানসিকভাবে অসুস্থ বলেও ডিবির কর্মকর্তাদের জানান তার পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া তার শরীরের একটি অংশ অবশ। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত তিনি।

বর্তমানে কী ধরনের ব্যবসায় জড়িত- জানতে চাইলে মুসার স্বজনরা জিজ্ঞাসাবাদকারীদের জানান, এখন কোনো ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মুসা জড়িত নন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় অধিকাংশ সময় তিনি বাসায় থাকেন।

ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, প্রতারক কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুসার সঙ্গে সখ্যের বিষয়টি সামনে আসে। কাদের যা দাবি করেছিলেন, তার সত্যাসত্য যাচাই করতে মুসা এবং তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এর আগেও মুসা বিভিন্ন সময় কয়েক সংস্থা বা ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের অর্থ অনুদানের ঘোষণা দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের আগে তিনি বড় অঙ্কের অনুদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল, তখনও সুইস ব্যাংকে তার টাকা আছে দাবি করে মুসা সেই অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি বলেন, সে অর্থ উদ্ধার করতে পারলে পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন। দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করে দেবেন, আর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বানাবেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles