9.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

আমি কি লেখক হতে পেরেছি?

আমি কি লেখক হতে পেরেছি?
ছবিগ্রীন চ্যামেলিয়ন

মাঝে মাঝে আমার অলস মস্তিষ্কে চিন্তা আসে আমি কি লেখক হতে পেরেছি ? আমার চিন্তাটা পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই মস্তিষ্কের কোষ গুলো থেকে হাজারটা ঝিঝি পোকা ঝিঝি করে চিৎকার করে বলে না তুমি এখনো লেখক হতে পারো নি । তাদের চিৎকারে মাথা নিচু করে মেনে নেই হে আমি জানি আমি পারিনি ।লেখক হওয়া কি এতো সহজ ? লেখকদের অনেক ভাবনা থাকে কল্পনা থাকে , অনবরত লিখে যাবার ক্ষমতা থাকে , সব চাইতে বড় কথা লেখার ধৈয্য লাগে।

আমার যে একেবারে কিছুই নেই সে ভাবনাও ভাবতে চাই না। ছোট বেলা কিশোর বেলা কোন বেলাতেই আমার কখনো মনে হয়নি আমি লেখক হতে চাই বা আমি লিখবো । আসলে আমি জীবনে কিছুই হতে চাইনি । শুধু কল্পনা বিলাসী হয়েছি যেখানে বাস্তবতার কোন বাড়ী ঘর নেই । লেখার একটু আধটু হাত ছিলো কিন্তু আমাকে অনুপ্রেরনা দেবার কেউ ছিলো না। একমাত্র আমার ভাইটা ছাড়া । যদিও আমার এই ভাইটি আমাদের সবাইকে ছেড়ে পর কালে চলে গেছে।আমি বাড়ির ছোটো মেয়ে বলে আমার লেখার ব্যাপারটা কেউ আমালই দেয় নি ।

- Advertisement -

লিখতে শুরু করেছি অনেক পরে । তার আগে আমার সখ বা সুযোগ কোনটাই হয় নি । আমার বর মাঝে মাঝে হালকা পাতলা অনুপ্রেয়না জাগিয়েছে লেখার ব্যাপারে । কিন্তু সেটা এতো বেশী জোরালো ও ছিলো না যে সেটা আমাকে একজন লেখিকা তৈরী করে ফেলতে পারে । অতঃপর নিজের তাগিতেই নিজে লিখতে শুরু করি। কোন বিশেষ ঘটনা যখন আমার মনে বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং মন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে তখনি আমি লিখতে বসে গেছি । এভাবে লেখা শুরু করলেও পরবর্তীতে লেখাটা একটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে। যদিও আমার অলসতা ও কল্পনা বিলাসী মন আমাকে পেছনে টেনে ধরে

সব ঘটনা ও ভালো কাজের পেছনে কেউ না কেউ থাকে।অনেক দেরীতে হলেও দু’একজন মানুষের আন্তরিকতায় এবং সহযোগীতায় আমার সাথে ছিল ।
তারপরে আবার নিজের মনের তাগিদে লিখতে শুরু করি। আমার বই প্রকাশের ব্যাপারেও ছিলো আমার এক লেখক বন্ধুর অনুপ্রেয়না। সত্যিকারের লেখক হতে হলে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয় যা কিনা ঘর সংসারের রক্ষা করে একজন মহিলা লেখকের পক্ষে এতোটা সহজ না যেমন সহজ না একজন নারীর লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া।

মানুষ তো জীবনে স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে। আমিও জীবনে অনেক অবাস্তব সপ্ন দেখেছি।

প্রবাদ আছে” আপন থেকে পর ভালো রে ভাই, পরের চেয়ে বন” আপন থেকে পর কথাটা মেনে নিলেও বনের কথাটা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বন মানে সংসার বৈরাগী হয়ে সন্যাসী হয়ে বেঁচে থাকা না সেটা সম্ভব না। এটা অবাস্তব। কারন আমি বিয়ে করবো ভেবেছি আমার একটা বর হবে ভেবেছি ।এই অবাস্তব কল্পনাটা আমি না ভাবলেও সে ধরনেরই আরেকটি কল্পনা ছিলো এবং এখনো মাঝে মাঝে সে কল্পনাটা আমার মাথায় ডিঙ ঢং আওয়াজ তুলে বেজে উঠে। অবাস্তব সপ্নের মাঝে একটা স্বপ্ন ছিলো , এখনো আছে।

সেটা হোল আমি পাহাড়ে চলে যাবো । সেখানে ছোট একটা ঘর বানাবো । ভোরের বেলা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙবে । সূর্যের আলো ঝিলমিল করে আমার ঘরে ঢুকবে । পাশে একটা ঝরনা বয়ে যাবে সে ঝরনা থেকে আমি পানি তুলে আনবো । মাটির চুলাতে রান্না করবো । পাহারের বুনো ফুলগুলোর পাশে বসে লিখবো আমার মনের কথা, জীবনের কথা ।কিন্তু পাহাড়ে আমি কোথায় খাবার পাবো সে বাস্তব চিন্তাটা আমার মাথায় আসে নি। আরো কতো অবাস্তব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরতো । এখনো কতো অবাস্তব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরে। যার কোন শুরু বা শেষ কিছুই নেই। হাজারো অবাস্তব চিন্তার সাথে আমার কিছু সুস্থ বাস্তব চিন্তাও ছিলো সেটা এখনো আছে। ভাবতাম যখন সংসারের ব্যস্ততা কমে যাবে তখন যে জিনিষ গুলো সময়ের অভাবে করতে পারি সে গুলো করবো যেমন আমার বিছানার পাশে অনেক ভালো ভালো বই স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখবো । আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন আমি আমার ভালো লাগার বই গুলো পড়বো । অনেক গান শুনবো । যে গান গুলো আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে যাবে। সে গানগুলো আমি বার বার শুনবো এখনো তাই করি। প্রচুর লিখবো । যে লেখাগুলো মাথার ভেতর থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে তাদের জাগিয়ে তুলবো । কখনো ঘরে বসে কখনো বাগানে বসে ড্যাকে বসে লেখাগুলো শেষ করবো । আমার এই বাস্তব চিন্তাগুলো পুরোটা শেষ করতে না পারলেও আংশিক ভাবে করেছি। যেদিন আমি আমার বাস্তব স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তাবাইত করতে পারবো সেদিন ভাববো আমার অবাস্তব কল্পনা বিলাসি ভাবনাগুলো থেকে বের হতে পেরেছি।

কিন্তু আমি সত্যিকারের একজন লেখক হতে পেরেছি কিনা অথবা ছোট খাট লেখক সে ভাবনা থেকে এখনো বের হতে পারছি না। হয়তো কোন দিনই আমার এই ভাবনার মুক্তি আসবে না।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles