8.1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

প্রবাসীর ছদ্মবেশে ১৫ বছরে ৩০০ প্রবাসীকে লুটেছে তারা

প্রবাসীর ছদ্মবেশে ১৫ বছরে ৩০০ প্রবাসীকে লুটেছে তারা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টি চক্রের তৎপরতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেলেও বিমানববন্দর এলাকায় তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য দীর্ঘদিনের। বিমানবন্দরের টার্মিনালে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশে একটি চক্র ওত পেতে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাংলাদেশি প্রবাসী ও শ্রমিকদের টার্গেট করে এই চক্র সর্বস্ব লুটে নেয়। গত ১৫ বছরে এই চক্রের খপ্পরে পড়েছেন তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদশি। সম্প্রতি কুয়েতপ্রবাসী এক বাংলাদেশির দায়ের করা মামলায় এই চক্রের মূল হোতা মো. আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

- Advertisement -

আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন জানান, শুধু প্রবাসীই নন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংক ইত্যাদি স্থানে সাধারণ যাত্রীদেরও টার্গেট করে থাকে। এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।

র‍্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার আরও জানান, গত মাসের শুরুর দিকে কুয়েতপ্রবাসী এক ব্যক্তি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এ সময় বিমানববন্দরে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাঁকে টার্গেট করে এবং ঢাকা থেকে বগুড়ায় যাওয়ার পথে তাঁকে অজ্ঞান করে সোনা ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় র‍্যাবের গোয়েন্দারা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তারপর অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা ও ১৫টির বেশি মামলার আসামি মো. আমির হোসেন ও তার তিন সহযোগীকে রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় লুটের স্বর্ণ ও মোবাইল ফোন এবং অজ্ঞান করতে ব্যবহার করা বেশ কিছু উপকরণও উদ্ধার করে।

প্রবাসীর ছদ্মবেশে ১৫ বছরে ৩০০ প্রবাসীকে লুটেছে তারা

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আট থেকে নয় সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে রাজধানীতে এ কাজ করে যাচ্ছে। মূলত বিমানবন্দর ও টার্মিনালগুলোতে ওত পেতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষা করে। এ সময় হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাসফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তাঁরা। পরে এই চক্র এমন প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে, যাঁর জন্য অপেক্ষমাণ কোনো আত্মীয় বা গাড়ি নেই। তারা কৌশলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিত। পরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে একই এলাকার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এরপর এই চক্রের সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বাসের টিকিট কেটে যাত্রা শুরু করে। গাড়ি বা বাসে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা প্রবাসী ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধমিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করে। তারপর অজ্ঞান হয়ে গেলে প্রবাসীর কাছে থাকা যাবতীয় মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যায়।

র‍্যাবের সংবাদ সম্মলেন বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আমির হোসেন জানিয়েছেন, তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক একটি অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূল হোতা। তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে বগত ১৫ বছর ধরে এই অপকর্ম করছেন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাঁদের মূল্যবান মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়েছেন। চক্রের আরো ছয়-সাতজন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে একাধিক সদস্য বর্তমানে কারাগারে আছে।

র‍্যাবের সংবাদ সম্মলেন আরও বলা হয়, আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি বেশ কয়েকবার কারাভোগ করেছেন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া আরেক সদস্য লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি মাইক্রো গাড়ির ড্রাইভার পেশার আড়ালে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি একাধিকবার একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে চক্রটি কৌশলে প্রবাসী যাত্রীদের মাইক্রোবাসে পরিবহন করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। তখন তিনি মাইক্রোবাস চালানোর দায়িত্বে থাকতেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের অনুসরণের কাজ করতেন। গ্রেপ্তার হওয়া আরেক সদস্য আবু বক্কর পারভেজ আট-নয় বছর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। স্বর্ণের দোকানও ছিল তাঁর। এই জুয়েলারি দোকানের আড়ালে তিনি দুই-তিন বছর যাবৎ চক্রটির লুটকৃত স্বর্ণ গ্রহণ, রূপ পরিবর্তন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাকির হোসেন নামের আরেক সদস্য ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে আমিরের মাধ্যমে তিনি এই চক্রে যোগ দেন। তিনি লুট করা স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সূত্র : আজকের পত্রিকা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles