8 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

সৌদি আরবে ‘বন্দি’ হাজারো বাংলাদেশি

সৌদি আরবে ‘বন্দি’ হাজারো বাংলাদেশি

বিদেশে গেলেই ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। ধরা দেবে স্বপ্নের সোনার হরিণ। এমন আশায় বিদেশে গিয়ে অনেকের জীবন এখন ক্যাম্পের চার দেওয়ালে বন্দি। সম্প্রতি সৌদি আরবের বিভিন্ন শহর ও এলাকায় গিয়ে এমন অভিজ্ঞতায় পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি। ক্যাম্পের মধ্যেই কাটছে তাদের দিন-রাত। ব্র্যাকের হিসাব অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ সৌদি আরব থেকে ফেরত এসেছেন।

- Advertisement -

ভাগ্য বদলের আশায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার ওসমান আলী। কিন্তু ছয় মাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো কাজ পাননি তিনি। ক্যাম্পের মধ্যেই কাটছে তার সময়। মাঝে কয়েকদিন সুইপারের কাজ করে পেয়েছেন ৫০০ রিয়াল।

ক্যাম্পবন্দি জীবনের কথা বলতে গিয়ে ওসমান বলেন, ‘কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিন কাটছে। খুবই কষ্টে আছি ভাই। কেউ না দেখলে বুঝবে না কতটা কষ্টে কাটছে আমাদের দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পে বর্তমানে ২০০ বাংলাদেশি আছেন। যখন এখানে আর ধরে না তখন অন্য ক্যাম্পে নিয়ে যায় তাদের। এদের অনেকগুলো ক্যাম্প আছে। কেউ ছয় মাস, কেউ আট মাস, কেউবা এক বছর ধরে আছেন। এতো টাকা খরচ করে বিদেশে এসে কিভাবে খালি হাতে ফিরব। ভাই আমরা অনেক কষ্টে আছি।’

সৌদি আরবে এই শ্রমিকদের পাঠিয়েছে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। চার লাখ টাকা দিয়ে চার মাস আগে সৌদি আরব আসছেন গাজীপুরের কোনাবাড়ির নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকা এনজিও থেকে ঋণ করে ও নিজের স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আমি বিদেশে আসছি। ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের এমডি মোশায়েদ হাসানের কাছেই এই টাকা দিয়েছি। চার মাস ক্যাম্পে রেখেও তারা যখন চাকরি দিচ্ছিল না, তখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় আমাকে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা নাসির হোসেনকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো চাকরি পাচ্ছি না। এ দিকে প্রতি মাসে এনজিওর ঋনের কিস্তি দিতে হচ্ছে আমাকে। কীভাবে দিচ্ছি তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।’

গত ৭ জুলাই সৌদি আরব গেছেন মুজিবর রহমান। তাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। ক্যাম্পেই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। বিষয়টি পরিবারকে জানালে তার চাচাতো বোন তাফসিনা ইয়াসমিন যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি বিষয়টি সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাস, জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষন ব্যুরো (বিএমইটি) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় মেইল করেছেন। পুলিশ নিয়ে হাজির হয়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে। এরপর মুজিবরের আকামা করে দেয় এজেন্সি। তারপরও কাজ পাননি তিনি।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩ আগস্ট শুনানির আয়োজন করে বিএমইটি। সেখানে এজেন্সির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। শুনানি গ্রহণ করেন বিএমইটির উর্ধ্বতন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

বিএমইটির উর্ধ্বতন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘তারা নিজেরাই আলোচনা করে একটা সমঝোতায় এসেছেন। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। উনি সমঝোতা না করলে আমরা আমাদের মতো সিদ্ধান্ত নিতাম। সেই সুযোগতো তিনি দেননি। বরং তিনি অভিযোগের নিষ্পত্তি করে গেছেন।’

মানবপাচার ও জিম্মির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে গত ১৯ মে গ্রেপ্তার হয়েছেন ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশায়েদ হাসানসহ (২৬) পাঁচ কর্মকর্তা। অন্যরা হলেন, গোলাম আজম সৈকত (৪২), মেহেদী হাসান শান্ত (২৩), মোহসিন হোসেন (২৬) ও নাইফ উদ্দিন রুদ্র(২০)।

পল্টন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রমাণ পাওয়ায় পল্টন থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই পাঁচজন এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত এই চক্রের আরেক সদস্য ক্যাম্পের দায়িত্বপালনকারী মো. নাসির উদ্দিনসহ (৫০) মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles