1 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

‘আমাকে পুলিশ ধরেছে, টাকা লাগবে’

‘আমাকে পুলিশ ধরেছে, টাকা লাগবে’

গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশি ইয়াকুব আলীর ব্যবহৃত ইমো থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে দেশে থাকা তার স্ত্রীর ইমোতে একটি মেসেজ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘আমি ঝামেলায় পড়েছি, আমাকে পুলিশ ধরেছে। ছাড়া পেতে ৩০ হাজার টাকা লাগবে।’

- Advertisement -

প্রতারকদের মেসেজের কোনো রিপ্লাই না দেওয়ায় তারা আরেকটি মেসেজ পাঠায়। সেখানে বলা হয়, ‘কী হলো কিছু বলতেছ না কেনো, আমার হাতে সময় খুব কম, টাকা পাঠাতে কতক্ষণ সময় লাগবে তাড়াতাড়ি জানাও আমাকে, আমাকে খুব মারছে, আমার বিকাশ নম্বর ০১৮৯২৩৩১৮৮০। আমাকে ৩০ হাজার ৬০০ টাকা পাঠাও, টাকাটা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও। না হলে পুলিশ ১ বছরের জন্য জেল দিবে।’ এ ভাবেই একের পর এক আবেগী মেসেজ পাঠানো হয় ইয়াকুব আলীর স্ত্রীর কাছে।

মোবাইল ফোন কাছে না থাকায় তাৎক্ষণিক মেসেজগুলো দেখেননি প্রবাসীর স্ত্রী। এক পর্যায়ে ইমো থেকে কোনো রিপ্লাই না আসায় ইয়াকুবের ইমো থেকেই কল দেওয়া হয় তার স্ত্রীকে। কল রিসিভের পর এক ব্যক্তি বলেন ‘আপনার স্বামীকে পুলিশে ধরেছে তাকে ছাড়তে চাইলে ওই নম্বরে ৩০ হাজার ৬০০ টাকা বিকাশে পাঠান। নয়তো ১ বছরের জন্য জেলে দিবে।’ এ কথা বলে কল রেখে দেয় ওই ব্যক্তি।

এসব কথা শুনে এবং স্বামীর মোবাইল থেকে পাওয়া মেসেজ দেখে ভেঙে পড়েন ইয়াকুবের স্ত্রী। তখন তিনি গ্রিসে থাকা তাদের আত্মীয়র মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্বামীর ইমো হ্যাকারের কবলে পড়েছেন। পরে তিনি হোয়াটসআপে কল দিয়ে নিশ্চিত হন তার স্বামীকে পুলিশ ধরেনি। তিনি ভালো আছেন এবং তার ইমো হ্যাকের কথা জানান।

প্রবাসী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর মোবাইলে ‘বিডি এম্বাসি’ লেখা একটি ইমো থেকে কল আসে। কল দিয়ে এক লোক বলে আপনার হাতের নম্বর বন্ধ কেনো। আপনাকে অনেকবার কল দিয়ে পাচ্ছি না। তখন আমি বলি, আমার সিম চালু আছে, তখন অপরপ্রান্ত থেকে বলে তাহলে লাইনে থাকেন আমি কল দিয়ে দেখি। এ বলে একটি গ্রিস নম্বর থেকে কল দেওয়া হয় মোবাইলে। তখন আমাকে বলে এখন কল গিয়েছে, আমি বললাম হ্যাঁ এখন কল এসেছে। তখন সে বলে আমার যে নম্বর থেকে কল গিয়েছে তার শেষের চারটি নম্বর বলেন। তখন আমি সরল মনে লাস্টের ৪ সংখ্যা বলে দেই। এরপর ভালো থাকেন পরে কল দিচ্ছি বলে রেখে দেয়।’

ইয়াকুব আরও জানান, এরপরই তিনি বুঝতে পারেন তার ইমো হ্যাকারের ফাঁদে পড়েছে। তার ইমো থেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে মেসেজ দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। এমন কি তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও তার স্ত্রীর কাছে মেসেজ ও কল দেয় প্রতারক চক্রটি। এক পর্যায়ে ভয়ে তিনি ইমো ডিলিট করে দেন। তার পরিচয়ে কারও কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছি কিনা তা এখনো জানতে পারেননি ইয়াকুব।

এভাবেই প্রবাসীদের ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ইয়াকুবের স্ত্রীর মতো কেউ হয়তো ভাগ্য বা বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেলেও, অনেকে সরলতার কারণে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তেমন একজন গ্রিস প্রবাসী নজরুল ইসলাম। ইমো প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রতারক চক্রকে টাকা দিয়েছেন তার বোন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইমোতে কল করে দূতাবাস কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন প্রবাসীকল্যাণ কার্ড বানানোর জন্য আমার নাম তালিকাভুক্তির কথা জানান। এ জন্য মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য একটি কোড পাঠিয়ে শেষের ৪ সংখ্যা জানতে চাইলে আমি বিশ্বাস করে দিয়ে দেই। এরপরই আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারকরা আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ ৩০-৩৫ জনের কাছে টাকা ধার চেয়ে মেসেজ পাঠায়। এ সময় আমার ছোট বোনের বিকাশ নম্বর দিয়ে পাঠানো মেসেজে লেখা ছিল, ‘আপা আমি খুব বিপদে আছি। আমার ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন, তাড়াতাড়ি দিলে খুব উপকার হবে।’ প্রবাসী ভাই বিপদে পড়েছে মনে করে বোন বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

গত ৩-৪ বছর ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো গ্রিসে এমন ইমো প্রতারণার ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চক্রের সদস্যরা ইমোর মাধ্যমে প্রবাসীদের নম্বর সংগ্রহ করে পরে একটি ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে ওটিপি নিয়ে সেই আইডি হ্যাক করে। প্রবাসীদের তারা বেশিরভাগ সময়ই দূতাবাসের কর্মকর্তা পরিচয়ে কল দেয়। ইমো অ্যাকাউন্টটি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেই সাধারণত ওই অ্যাকাউন্টধারীর আত্মীয়-স্বজনের কাছে কল করে বা মেসেজ পাঠিয়ে বিপদে থাকার কথা বলে টাকা ধার চায় প্রতারকরা।

এমনকি চক্রটির ফাঁদে পড়েছেন প্রবাসে থাকা অনেক নারীরা। বহু নারী ব্ল্যাক মেইলের শিকার হয়েছেন। ইমোর গোপন ছবি ও রেকর্ডকৃত কণ্ঠকে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ। আবার অনেকেই প্রতারকদের কল পেলেই বুঝতে পারেন। তাই তাদেরকে ফাঁদে আটকাতে পারে না।

দূতাবাসের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার বিষয়টি এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের নজরে এসেছে। এরইমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ রকম কোনো ফোন করা হচ্ছে না। দূতাবাস থেকে ফোন করে কখনও কোনো কোড চাওয়া হয় না।’

মিনিস্টার ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সচেতনতার বিকল্প নেই। আমরা সে দিকেই বেশি জোর দিচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও কমিউনিটির সমাবেশ-অনুষ্ঠানগুলোতে বিষয়টি তুলে ধরে প্রবাসীদের সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles