5.8 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

জনগণের কাছেই ফিরে যেতে হবে

জনগণের কাছেই ফিরে যেতে হবে
ফাইল ছবি

ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ৬৪ বছর বয়সী ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ৬০ শতাংশ ভোটে জয়ী হয়ে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
“গত বৃহস্পতিবার বংবং নামে পরিচিত এই রাজনীতিকের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রায় তিন যুগ পর আবারও মার্কোস জমানায় ফিরল দেশটি!

এক গণ-অভু্যত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। এ পরিবার বিশ্ব জুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করে তাদের দুর্নীতির জন্য। গণ-অভু্যত্থানের বিপ্লবী কর্মীরা যখন ম্যানিলায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিল, তখন সেখানে মার্কোস পরিবারের বহু চমত্কার তৈলচিত্র, সোনায় মোড়ানো জাকুজি, ১৫টি মিংক কোট, ৫০৮টি ডিজাইনার গাউন এবং ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের তিন হাজার জোড়া জুতার সংগ্রহ দেখতে পান। মার্কোস পরিবার কীভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বেআইনিভাবে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে, কীভাবে নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটানে কয়েকটি বাড়ি কিনেছে, তার দলিলও পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়। কিছু মামলায় পরিবারের সদস্যদের দণ্ড হয়, অন্য কিছু মামলায় তারা খালাস পান। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতারণার আলোচিত একটি মামলায় ইমেলদা মার্কোস জুরিদের বিচারে খালাস পান এবং তিনি আবার ফিলিপাইনে ফিরে আসেন।

- Advertisement -

পরিবারের এমন কুখ্যাতির পরও বংবং মার্কোজের ভূমিধ্বস জয়ে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। বংবং এর বিরোধী শিবিরের লোকজন এজন্য দায়ী করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। তাদের মতে, এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, মার্কোস পরিবারের কলঙ্কময় অতীত মুছে ফেলা হয়েছে। তবে মার্কোস পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বরং তাদের দাবি নির্বাচনে এই পরিবারের প্রতি জনগণের আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।

বিপুল ভোটে জয়ী হওয়া বংবং-এর রানিং মেট ছিলেন সদ্য সাবেক হওয়া প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে। সারা আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা জুড়ে ১৫ হাজারের মতো নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়। অভিষেকের কয়েক দিন আগেই কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন মার্কোস জুনিয়র, কিন্তু তার পরও তার প্রেসিডেন্ট হতে কোনো বাধা নেই বলে রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বংবং-এর এই অভিষেকের মধ্য দিয়ে মার্কোসদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কয়েক দশকের সংগ্রামের সফল সমাপ্তি ঘটল। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।”-ইত্তেফাক

লক্ষ্যনীয় যে দেশটিতে গনতন্ত্র আছে বলেই গনতান্ত্রিক ব্যবস্হার সুযোগ নিয়ে সাবেক স্বৈরশাসকের ছেলে হয়েও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারলো।

এই ঘটনাটি ঠেকাতে বিরোধী দলসুমহ ও দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সুপ্রীম কোর্ট কোন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে যায় নি। রেডিও টিভি তথা নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া হয় নি। সাবেক স্বৈরশাসকের ছেলেকে ঠেকাতে কোনরকম স্বৈরতন্ত্রের আশ্রয় নিতে হয়ে নি। ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ করে বংবংকে জনগণের রায় পেতে বাঁধা দেয়া হয় নি।

এটাই গনতন্ত্রের শিক্ষা। জনগণ যদি ভুল করেও কোন স্বৈরাচারকে কিংবা মৌলবাদী শক্তিকে নির্বাচিত করে সেটাকে মেনে নেয়াই প্রকৃত গনতন্ত্র। জনগনের রায়কে ঠেকাতে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পন্হায় কোন স্বৈরচারকেও ঠেকানো যায় না এটাই প্রকৃত গনতন্ত্রের শিক্ষা। জনগণের ভুলকে সংশোধন করতে হলে আবার জনগণের কাছেই ফিরে যেতে হবে এবং তাদের রায় নিয়েই আগের স্বৈরাচারকে বিদায় করতে হবে। যদি সেই দেশে গনতান্ত্রিক ব্যবস্হা চালু থাকে।

আর যদি এক স্বৈরাচারকে বিদায় করতে গনতান্ত্রিক ব্যবস্হার সুযোগ নিয়ে নিজেরাই আবার স্বৈরাচার হয়ে উঠতে চায় কেউ এবং স্বৈরতাম্ত্রিক ব্যবস্হা চালু করে তাহলে বুঝতে হবে সেটা হলো গনতন্ত্রের ছদ্মাবরণে রাক্ষসের পরিবর্তে খোক্কসের পুনর্জনম।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles