10.1 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

জনপ্রিয়তার পেছনে কখনও ছুটিনি: জয়া

জনপ্রিয়তার পেছনে কখনও ছুটিনি: জয়া
জয়া আহসান

এক দেশের সন্ধ্যাতারা কিংবা অন্য দেশের শুকতারা হয়ে তিনি দেদীপ্যমান দেবী। ঘুচিয়ে চলেছেন শিল্পী এবং শিল্পের মাঝে কাঁটাতারের ব্যবধান। কেউ একদিন হয়তো কাউকে বলতে পারেনি যে নাম, সে নাম জয়া আহসান। তাঁর শোণিতধারায় বইছে অভিনয়ের স্রোত। তাই তো নিজেকে পর্দায় মেলে ধরেন নানা অবয়বে। ডুবসাঁতারের ‘রেণু’, গেরিলার ‘বিলকিস’, চোরাবালির ‘নবনী’, আবর্তের ‘চারু’, রাজকাহিনির ‘রুবিনা’, ভালোবাসার শহরের ‘অন্নপূর্ণা’, বিসর্জনের ‘পদ্মা’সহ নানা ভূমিকায় জয়া তাঁর প্রতিভার বহুমুখিতার ছাপ রেখেছেন; জায়গা করে নিয়েছেন ভক্তদের হৃদয়ে।

অভিনয়ের মাধ্যমেই একটির পর আরেকটি চরিত্রে তিনি হাজির হন নতুন অবতারে। নতুন চরিত্র হয়ে। অভিনয়ই তাঁর একমাত্র নেশা। পেশাও বটে। শুধু এ দেশেরই নয়; কলকাতার দর্শকরাও তাঁর ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন। সাধারণ দর্শক থেকে বিদ্বজ্জন, সবার মনেই ঠাঁই করে নিয়েছেন এই সুঅভিনেত্রী। ফলে জয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী জয়া নিজেই!

- Advertisement -

গত ১৮ মে প্রায় এক দশক পর আবারও অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ‘আনন্দলোক’ পুরস্কার। এ আয়োজনে অতনু ঘোষের ‘বিনিসুতোয়’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জয়া পেলেন সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা। এর আগে পশ্চিমবঙ্গে টানা তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন এ অভিনেত্রী। তাই তো তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, দেশে পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি ভারতেও টানা তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও আনন্দলোক পুরস্কার পেলেন। নিজের এই জনপ্রিয়তা ও অর্জনকে কীভাবে দেখেন? জবাবে জয়া বলেন, ‘জনপ্রিয়তা নয়; এগুলোকে আমি বলি মানুষের ভালোবাসা। ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয়তার পেছনে কখনও ছুটিনি। আমার অভিনয় জীবনের শুরু থেকে শুধু কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছি। কতটুকু করতে পেরেছি, জানি না। তবে যতটুকু করেছি; সততার সঙ্গেই। এখনও সেই সততা নিয়ে কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

জয়ার সবচেয়ে বড় গুণ হলো সাহস। এই সাহসের কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন; নিজেকে ভাঙছেন, গড়ছেন। নিজের কমফোর্ট জোন তৈরি করতে তাঁর ব্যাপক অনীহা। সম্প্রতি তিনি কাজ করেছেন ইরানি ‘ফেরেশতে’ চলচ্চিত্রে। ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের এ চলচ্চিত্রে কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমার কাজ দেখে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল।’ ছবির গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইরানি ছবি যেমন হয়; দহরম-মহরম নেই, ঘটনার ঘনঘটা নেই। এ ছবিতে দেখানো হয়েছে আশার গল্প, বেঁচে থাকার গল্প।’ ছবির দৃশ্যধারণের সময়কার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফেরেশতে’ ছবির পরিচালক অতাশ জমজম শুটিংয়ের সময় ইরানি ভাষায় কথা বলছিলেন। তাঁর কথা একজন বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন। কাজটি করতে গিয়ে মনে হলো, সিনেমার জন্য ভাষা কখনোই সমস্যা নয়। ঠিক যেমন আমরা অনেক সময় বিদেশি অনেক ভাষার ছবি সাবটাইটেল ছাড়া দেখলেও গল্পের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারি। বলা যেতে পারে, এই সিনেমার শুটিংয়ে তা-ই হয়েছে।’

জয়া আহসান এক সময় টিভি নাটকে অভিনয় করলেও এখন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান চলচ্চিত্র ঘিরে। তাই তো একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন এই সুঅভিনেত্রী। এ মুহূর্তে প্রায় এক ডজন চলচ্চিত্রের কাজ করছেন তিনি। খুব শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে ‘ঝরা পালক’। সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ের এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবন, তাঁর ভাবনা, দুঃখ-যন্ত্রণা, আবেগ এবং তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষজনের গল্প। ছবিতে কবির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ব্রাত্য বসু আর কবিপত্নীর ভূমিকায় রয়েছেন জয়া আহসান।

‘ঝরা পালক’ ছাড়াও এ বছরে কলকাতায় মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ‘ওসিডি’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘ভূতপরী’, ‘কালান্তর’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। অন্যদিকে বাংলাদেশে খুব শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে সরকারি অনুদানে নির্মিত মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’। সম্প্রতি ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। এ ছাড়াও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’, আকরাম খানের ‘নকশিকাঁথার জমিন’ এবং নির্মাতা পিপলু আর খানের নাম চূড়ান্ত না হওয়া চলচ্চিত্র।

অভিনেত্রী জয়ার কথা তো অনেক হলো। এবার প্রযোজক জয়ার কথা জানা যাক। যিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন রঙে আঁকেন। ফলে তাঁর কাছে ব্যতিক্রমী কিছু পাওয়া যাবে, এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। সে কারণেই প্রযোজক জয়ার কাছে দর্শকের প্রত্যাশাও একটু বেশি। খুব শিগগির জয়া তাঁর প্রযোজনা সংস্থা ‘সি তে সিনেমা’ থেকে শুরু করবেন ‘রইদ’ সিনেমার কাজ। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ ছবিটি পরিচালনা করবেন মেজবাউর রহমান সুমন। জয়া বলেন, ‘পরিচালক বললেই আমরা শুটিংয়ের জন্য রেডি হবো। তবে আশা করছি, খুব শিগগির ছবির দৃশ্যধারণ শুরু করতে পারব।’ যথারীতি ব্যতিক্রমী আরও চ্যালেঞ্জিং

চরিত্রের খোঁজে আছেন অভিনেত্রী জয়া। পেয়েও গেছেন দু-একটা। সামনেই হয়তো আরও অনেক ধরনের চরিত্রে তাঁকে দেখা যাবে। তাঁর ভাষ্যে, ‘একজন মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। তাই তো শুধু এখনই নয়, আগামীতেও এমন কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই, যা দর্শকের হাসাবে-কাঁদাবে এবং জীবন সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলার পাশাপাশি রেখে যাবে কিছু প্রশ্ন। পাশাপাশি বৃত্তের বাইরে কাজ করতে চাই। তাই অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি হয়েও দর্শকদের চোখে থেকে যাই চির নতুনের মতো।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles