3.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

‘অন্ধকারের’ ফাঁদ থেকে রক্ষা দুই ক্যাডেটের

‘অন্ধকারের’ ফাঁদ থেকে রক্ষা দুই ক্যাডেটের - the Bengali Times
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ায় মসজিদে মসজিদ ঘুরে রাত কাটাচ্ছিলেন দুই মেধাবী তরুণ। কখনও আবার আশপাশের পাহাড়ে এলোমেলো ঘোরাঘুরি করছিলেন। তারা দু’জনই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের এইচএসসির ছাত্র। দু’জনকে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করতে দেখে ১২ মে উখিয়ার স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’- এ কল দেন। এরপর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পরে ঢাকায় এনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে (সিটিটিসি) তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে বেরিয়ে আসে দুই বন্ধুর ঘর ছাড়ার নেপথ্য কারণ। তাদের মধ্যে একজনকে উগ্রবাদের দিকে নিতে ‘মগজ ধোলাই’ করা হয়েছে। আরেকজনও সেই প্রক্রিয়ায় ছিল। পরে ওই দুই তরুণকে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাড়ি ছাড়ার পর ভূঞাপুর ও ঘাটাইল থানায় জিডি করেছিল দুই তরুণের পরিবার।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঈদের ছুটিতে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের এক ছাত্র তার নানাবাড়ি কালিহাতী বেড়াতে যায়। ঘাটাইল থেকে সেখানে যাওয়ার পর তাকে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা যায়। ওই এলাকায় তার ক্যাডেট কলেজের পুরোনো বন্ধুর বাড়ি। এরপর ৮ মে একসঙ্গে দুই ছাত্র কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘর ছাড়েন।

- Advertisement -

পরিবারের জিডির পর পুলিশ তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। পরে ১২ মে উখিয়ার পুলিশ জানায়, নিখোঁজ দুই তরুণকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই তরুণকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা একজনের নামও পেয়েছি। যিনি ভুল বুঝিয়ে ওদের উগ্রবাদের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কাউন্সেলিং করানোর জন্য দুই ছাত্রকে গতকাল পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, অপরাধের ধরন ও বয়স বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি পুলিশ।

জানা গেছে, ক্যাডেটের দুই ছাত্রের একজনের বাবা একটি এনজিওতে চাকরি করেন। আরেকজনের বাবা ধানের কুঁড়ার ব্যবসায়ী। নিজের মেধাবী সন্তান নিয়ে তাদের অফুরান স্বপ্ন রয়েছে। সন্তানকে ফেরত পেয়ে তারা খুশি।

দুই তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত সিটিটিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মাস কয়েক আগে অনলাইনে ইসলামিক কালচার অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যাওয়ার্ড নামে অনুষ্ঠানে অংশ নেন ওই ছাত্র। এরপর থেকে ইসলাম নিয়ে নানামুখী গবেষণার চেষ্টা করেন তিনি। নিজেও লেখালেখি শুরু করেন। এর পরই প্রচলিত পড়াশোনা ও জীবন দর্শনের প্রতি তার এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়। এরপর ঈদের ছুটিতে নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পর ক্যাডেট কলেজের আরেক বন্ধুকেও নিজের সঙ্গে যুক্ত করেন।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ৮ মে কালিহাতী থেকে দুই বন্ধু একসঙ্গে ঢাকায় আসেন। এরপর পাঁচ কেজি খেজুর কেনেন। এরপর মহাখালী থেকে বাসে চট্টগ্রাম যান। চট্টগ্রাম থেকে যান কক্সবাজারে। এরপর পাহাড় দেখতে বেরিয়ে যান। পরে সেখানকার আরও কয়েকটি মসজিদে ঘুরে ঘুরে রাত কাটাতে থাকেন। স্থানীয় লোকজন অচেনা দুই তরুণকে দেখে সন্দেহ করেন। বেলা অবধি মসজিদে ঘুমানোর কারণে কেউ কেউ তাদের ইয়াবা কারবারি হিসেবে ভাবতে থাকেন। এরপর স্থানীয়রা ৯৯৯-এ কল করেন। উদ্ধারের পর এক তরুণের কাছে বেশ কিছু খাতা পাওয়া গেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য- মেধাবী দুই তরুণকে উদ্ধার করা না গেলে তা বিপদের কারণ হতে পারত।

ওই দুই ছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, ঈদের সালামি ও আগের জমানো ১০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে তারা ঘর ছাড়েন।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, ইসলামিক কালচার অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যাওয়ার্ড নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পেজ রয়েছে সেখানে ৩৬ হাজারের মতো ‘লাইক’ রয়েছে। কে বা কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা চালু করেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভূঞাপুর থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, দুই তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় আরও গভীরভাবে তদন্ত চলছে। যদিও তাঁরা এখন পরিবারের জিম্মায় আছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles