9.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

নকশা পরিবর্তন ও সংশোধন করে হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল

নকশা পরিবর্তন ও সংশোধন করে হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল - the Bengali Times

নকশায় কিছুটা পরিবর্তন ও সংশোধন এনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় থার্ড টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মূল নকশায় ভিভিআইপি টার্মিনাল ছিল। পরে এটি বাদ দিয়ে নকশা সংশোধন করা হয়। এখন আবার ভিভিআইপি টার্মিনাল করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ ছাড়া থার্ড টার্মিনালসংলগ্ন এলাকায় দুটি পিয়ার বাড়ানো হবে। এ দুটি অতিরিক্ত কাজে তৃতীয় টার্মিনালে যোগ হবে আরও ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা।

- Advertisement -

সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়। এর পর থেকে চলছে নির্মাণকাজ। এবার থার্ড টার্মিনালের নকশায় দ্বিতীয় দফা পরিবর্তন আসছে। জানা গেছে, ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। মহামারীর মধ্যেও কাজ চলমান। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা। তবে তার আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে এখন চুক্তির অতিরিক্ত কাজ যুক্ত করতে চাইছেন তারা। এর আগে কিছু কাজ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র মতে, ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তিতে জাপানিজ আধুনিক টেকনোলজিসমৃদ্ধ স্টিল স্ক্রুয়েড পাইল (এসএসপি) দিয়ে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের পাইলিংয়ের কাজ করার কথা। কিন্তু পরে দেখা যায় টার্মিনাল ভবনের ভ‚গর্ভস্থ মাটি এসএসপি ব্যবহারের অনুপযোগী। সেজন্য তা বাতিল করে দেশে প্রচলিত বোরড পাইলিং পদ্ধতিতে টার্মিনাল ভবনের ফাউন্ডেশনের কাজ করা হয়। প্রকল্প কর্তাদের দাবি, এতে করে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার সাশ্রয় হয়েছে। ওই সাশ্রয়কৃত অর্থ দিয়ে এখন দুটি পিয়ার বর্ধনকাজ এবং একটি নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক।

এর আগে প্রকল্পের মূল নকশায় নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন বিমানবন্দর এলাকায় একটি ভিভিআইপি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ অন্তর্র্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সেটি প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মূল টার্মিনাল ভবনে ভিভিআইপি সুবিধাযুক্ত করে ডিজাইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান শেষে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিও করা হয়। কিন্তু সার্বক্ষণিক অপারেশনাল কার্যক্রম অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এলাকায় নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের দরকার বলে বেবিচকের নজরে আসে।

অপরদিকে পিয়ার নির্মাণকাজটি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় করার পরিকল্পনা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, ১ম দফার কাজ শেষে ৩য় টার্মিনালসহ এর সম্মুখ অ্যাপ্রোনের অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। তাই পিয়ার নির্মাণের কাজটি প্রথম দফায় সারতে চাইছে সংশ্লিষ্টরা। এ অতিরিক্ত কাজ দুটি মূল চুক্তির অধীনে করা হবে। পৃথক দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দুটি করতে গেলে সময় বেশি লাগবে। তাই এখন একই ঠিকাদারের অধীনে করার ব্যাপারে অভিমত দিয়েছে বেবিচক। এ জন্য প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছে মতামত চাওয়া হয়। এতে করে আইনগত জটিলতা নেই বলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে। একইভাবে জাইকার পরামর্শ চাইলে সেখান থেকে অনাপত্তি মিলেছে। ভেরিয়েশন অর্ডারের মাধ্যমে কাজ দুটি করা সম্ভব। এতে করে ৩য় টার্মিনালের এলাকা ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার থেকে বেড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটারে উন্নীত হবে। একইভাবে বিমানবন্দরে একটি নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল সুবিধা যুক্ত হচ্ছে। এতে করে নির্মাণ খরচ বাড়বে না। ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তিমূল্য অপরিবর্তিত রেখে অতিরিক্ত কাজ করা হবে প্রকল্পের কন্টিজেনসি ফান্ড এবং অন্যান্য উপকরণের সঞ্চয় থেকে। আপাতত পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিপিপি সংশোধন করার সময় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে একনেকের অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মাকসুদুল ইসলাম বলেন, থার্ড টার্মিনালের কাজে কিছু ভেরিয়েশন আসতে পারে। তবে এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সূত্র মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের জন্য ৯৩০২ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন। বেবিচকের নিজস্ব জমি সেখানে নেই। রানওয়ের পশ্চিম পাশের এলাকাটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনস্থ। ভিভিআইপি টার্মিনাল, ভিভিআইপি অ্যাপ্রোন, কার পার্ক, রোড ইত্যাদি ভৌত অবকাঠামোর জন্য বিমানবাহিনীর জায়গাটি উপযুক্ত। এজন্য রানওয়ের পশ্চিমে ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিমানবাহিনীর জমি চেয়ে প্রস্তাব গেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ফেইজ (১) ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেক থেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের ১ম সংশোধিত ডিপিপি ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় অনুমোদিত। এ প্রকল্পে জাইকার ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ২০১৭ সালের ২৯ জুন এবং ২০২০ সালের ১২ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে দুটি ঋণচুক্তি হয়েছে। এ প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে জাপানের মিটসুবিশি করপোরেশন, ফুজিটা করপোরেশন ও কোরিয়ান কোম্পানি। এর নাম দেওয়া হয় এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম।

এ প্রকল্পের বিল্ডিং নির্মাণ অংশের ৩০৪৯টি পাইল এবং ৬৮৪টি পাইল ক্যাপ কাজ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে এ অংশের বেজমেন্ট এরিয়া ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ। টার্মিনাল ভবনের উভয় অংশে ৩য় তলার ট্রাস সংযোজন চলমান। বহুতল কার পার্কিং ৩৯৬টি পাইলিংয়ের সবগুলোর কাজ শেষ।

বর্তমানে দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই কাজ চলছে। কার্ব সাইড ও এলিভেটেড ড্রাইভওয়ে অংশের ৭৪২টি পাইলিংয়ের মধ্যে ৬৭৭টির কাজ শেষ। এ অংশে মোট ১৬৯টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ১৩৩টি পাইল ক্যাপ ও ৬৮টি কলামের কাজ হয়ে গেছে। আর টানেল অংশে ৪৭৮টি পাইলিংয়ের কাজ শেষ করার পর এ অংশের বেজমেন্টের স্ল্যাব এবং আরসিসি ওয়াল নির্মাণকাজ চলমান। শেষ হয়েছে হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের এসফল্টের কাজ। মূল অ্যাপ্রোন অংশের ভূমি উন্নয়ন ও স্যান্ড ফিরিং শেষে ড্রেনেজের কাজ চলছে। একই সঙ্গে চলছে কনক্রিটের (এলএমসি) কাজ। এক্সপোর্ট কার্গো ও ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের পাইলিং শেষ করে স্টিল স্ট্রাকচার ফেবরিকেশনের কাজ চলছে। তা ছাড়া ইউটিলিটি বিল্ডিংস অংশে ওয়াটার রিজার্ভারের বোর পাইল এবং জেনারেটর হাউসের পিএইচসি পাইলিং কাজ শেষ করে এখন ফাউন্ডেশন কাজ চলমান।

জানা গেছে, ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন ও ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স, ১১৫টি চেক-থার্ড টার্মিনাল ইন কাউন্টার- সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে। এ ছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রাখা হবে ফানেল টানেল।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles