9.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

লেডি অপরাধী সিলেটের পপি বেগম

লেডি অপরাধী সিলেটের পপি বেগম - the Bengali Times

ব্যাগের ভেতরে টাকা। হাত ঢুকিয়ে দিলো পপি। টাকাও নিয়ে নিলো হাতে। এমন সময় হাতেনাতে পড়লো ধরা। হুলুস্থুল শুরু হলো। এগিয়ে এলো আনসার সদস্যরা। আটক করলো পপিকে। এরপর আরও কয়েকজন মহিলা এগিয়ে এলেন।

- Advertisement -

জানালেন- কারও কানের দুল, কারও গলার চেইন নেই। ভিড়ের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু পপি স্বীকার করছে না। গতকাল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এভাবেই আটক করা হয় মহিলা চোর সিন্ডিকেটের প্রধান পপি বেগমকে। এক বছরে পাঁচবার গ্রেপ্তার হলো পপি। কখনো ছিনতাই, আবার কখনো মাদক বিক্রি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার। তবুও বদলায় না তার স্বভাব। পুলিশ বলছে, পপিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালেও সে জামিনে বেরিয়ে আসে।

বের হয়েই শুরু করে অপরাধ কর্মকাণ্ড। পপি বেগম সিলেট ওসমানী হাসপাতালে এক নামেই পরিচিত। চোর হিসেবে তাকে চেনেন সবাই। গত ৩ বছর ধরে ওসমানী হাসপাতালে চোরদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। তার নেতৃত্বে রয়েছে ১০-১২ জনের মহিলা চোরচক্র। ওসামানী হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জয়নাল হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, এক বছরে ৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছে পপি। সে ও তার অপরাধ সহযোগী মহিলারা এখন সবার কাছে পরিচিত। এরপরও বোরকা পরে চলে আসে পপি।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মহিলাদের মালামাল চুরি করে। তিনি বলেন, পপি ও তার সহযোগীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ। তারা হাসপাতাল এলাকায় এলেই গ্রেপ্তার হবে। এদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কয়েকদিন ধরে ভিড় আর ভিড়। ওখানে রয়েছে ভ্যাকসিন সেন্টার। প্রতিদিন শ’ শ’ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে হাসপাতালে যান। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গত শনিবার থেকে গণটিকা শুরু হওয়ার কারণে আরও ভিড় বেড়েছে। আর এই সুযোগে দলবল নিয়ে পপি নেমেছে চুরি করতে। কর্তব্যরত আনসার ও সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বোরকা পরে পপি ও তার সহযোগীরা চুরি করতে নেমেছে। তারা মানুষের সঙ্গে মিশে লিফটে যাতায়াত করে। আর ভিড়ের মধ্যে তারা হাতিয়ে নেয় টাকা। গতকাল সকালে এক মহিলার ১০ হাজার টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে।

এরপর পাশাপাশি থাকা মহিলারা দেখতে পান কারও গলার বা কানের দুল নেই। অনেকেরই মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। এ কারণে পপিকে গ্রেপ্তারের পরপরই হৈচৈ শুরু হয়। এরপর পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও স্বর্ণ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি পপি। হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, চুরি করার সময় পপির সঙ্গে থাকে তার সহযোগীরা। চুরির পরপরই তারা হাতবদল করে মালপত্র হাওয়া করে ফেলে। দ্রুতই সেগুলো বাইরে নিয়ে যায়। এ কারণে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এদিকে, গতকাল পপি গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়েছেন পুলিশ। সিলেটের লেডি অপরাধী পপি বেগমের বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বিণ্ডন্ডা গ্রামে। স্বামী আব্দুল আউয়াল। দীর্ঘদিন ধরে নগরীর উপশহরের বাসিন্দা পপি বেগম। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে উপশহরের সাদারপাড়া, তেররতন, সৈয়দাবাগসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করেছে।

আর এসব এলাকায় বসবাসের সময় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হওয়ায় সে সবার কাছে পরিচিত। সাদারপাড়া এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় এক যুগ আগে স্বামী আবদুল আউয়ালের সঙ্গে সিলেটে আসে পপি বেগম। এরপর থেকে তারা নগরের উপকণ্ঠে সাদারপাড়া এলাকার একটি কলোনিতে বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করে। স্বামী রিকশা শ্রমিক হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। একেক সময় একেক কাজ করতো। ওই সময় পপি বেগম কলোনির ভেতরে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তাকে নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। অসহায় মহিলাদের এনে পপি অসামাজিক কাজে লিপ্ত করতো।

স্থানীয়দের বাধার মুখে শেষে পপি বেগম তার বাসাও বদল করে। পরে তেররতন ও সৈয়দানীবাগসহ কয়েকটি এলাকায় একই ভাবে সে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ক্ষোভের মুখে পড়ে। পপির নেতৃত্বে ছিল কয়েকজন মহিলা। তাদের দিয়েই সে অসামাজিক কাজ করাতো। প্রায় ৪ বছর আগে পপি ও তার সঙ্গের মহিলারা নগরীতে ছিনতাই, চুরি শুরু করে। সিলেট নগরীর বিপণীবিতান ও মার্কেটে লেডি চোরেরা ঢুকে কাপড়, কসমেটিকস, মার্কেটে আসা মহিলাদের মোবাইল, ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি শুরু করে। উঠতি যুবকদের ফাঁদে ফেলে করে ছিনতাই। উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা পপি। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে পপি বেগম এখন এইচ ব্লকে বাসা কিনেছে। তার গোটা পরিবারই মাদকের সঙ্গে জড়িত।

সূত্র : নতউন সময়
এন এ/ ২৮ ফেব্রুয়ারী

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles