12.6 C
Toronto
রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

পাকিস্তানি স্বামীর হাতে বাংলাদেশি তরুণী খুনের ভয়ংকর বর্ণনা

পাকিস্তানি স্বামীর হাতে বাংলাদেশি তরুণী খুনের ভয়ংকর বর্ণনা - the Bengali Times
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি তরুণী আরনিমা হায়াতকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ভর্তি একটি বাথটাবে ডুবিয়ে হত্যা করে তার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্বামী

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি তরুণী আরনিমা হায়াতকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ভর্তি একটি বাথটাবে ডুবিয়ে হত্যা করে তার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্বামী। কেবল পায়ের একটি অংশ ব্যতীত পুরো শরীরই বিকৃত হয়ে গেছে মেয়েটির। ফলে রীতি অনুযায়ী চিরনিদ্রায় শায়িত করার আগে ‘মেয়ের সুন্দর মুখ’ও দেখতে পারবে না তার পরিবার।

গত ৩০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিডনির নর্থ প্যারামাট্টার পেনান্ট হিলস রোডের বাড়ি থেকে ১৯ বছর বয়সী মেডিসিনের শিক্ষার্থী আরনিমা হায়াতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

- Advertisement -

এ ঘটনায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্বামী মিরাজ জাফরকে (২০) গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় সময় সোমবার ব্যাংকসটাউন পুলিশ স্টেশনে জাফর আত্মসমর্পণ করে।

জাফরের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে গত অক্টোবরে পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন আরনিমা। তখন থেকেই তিনি নর্থ প্যারাম্যাট্টার অ্যাপার্টমেন্টে জাফরের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। জাফরকে বিয়ে করার পরিকল্পনা জানালে আরনিমার বাবা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

আরনিমার বাবা আবু হায়াত (৪১) ও মা মাহাফুজার আক্তার (৩৯) ডেইলি মেইলকে বলেছেন, যা করা হয়েছে, তার কারণে ইসলামী রীতিতে মেয়েকে শায়িত করার আগে ‘মেয়ের সুন্দর মুখ’ও দেখতে পারব না। কেবল তার পায়ের একটি অংশ কেবল বিকৃত হওয়া বাকি রয়েছে।

মা মাহাফুজা বলেন, আমার সুন্দর মেয়ে… আমার মেয়ে, এত সুন্দর, আমি আমার মেয়ের মুখ দেখতে পারছি না।

আরনিমার চাচা আবু সালেহ বলেন, পরিবার আমার ভাতিজির লাশ মেডিকেল থেকে ফেরত পাওয়ার পর দেখার অপেক্ষায় ছিল। বাংলাদেশি ঐতিহ্য অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির মুখ দেখার নিয়ম রয়েছে পরিবারের। কাফনে মোড়ানোর পরও মুখ দেখা হয়। কবরে রাখার আগে তার জন্য দোয়া বা প্রার্থনা করা হয়।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ‘০০০’ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ বাথরুমের ভেতর থেকে আরনিমার লাশ উদ্ধার করে। জাফরের মা জরুরি পরিষেবা নম্বরে ফোন করেছিলেন বলে জানতে পেরেছেন আরনিমার পরিবার।

ডেইলি মেইল বলছে, ছয় মাস আগে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার আগে অধ্যবসায়ী এবং প্রাণবন্ত ‘অজি তরুণী’ আরনিমা প্রতি সপ্তাহে তার বাবা-মাকে নিয়ে সুশি এবং পাই খেতে যেতেন। অথচ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরনিমা যুক্তরাষ্ট্রে তার আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় বিমর্ষ ছিলেন।

আরনিমা তার চাচাকে বলেছিল, জাফর মদপান করত, কিন্তু সে তা চাইত না। কারণ সে মেডিসিন নিয়ে পড়ছিল। সে সার্জন হতে চেয়েছিল এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল।

আরনিমা জাফরকে বিয়ে করেছে তা বিশ্বাস করে না তার বাবা-মা। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এই দম্পতি ২০০৯ সালে আরনিমার ৯ বছর বয়সের সময় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।

আরনিমার চাচা আবু সালেহ বলেন, জাফর তার প্রথম প্রেমিক ছিল এবং সে আরনিমাকে তার পরিবার থেকে দূরে রাখতে রাজি করিয়েছিল।

টেম্প হাই স্কুলে এইচএসসিতে ৯৭ এর বেশি স্কোর করে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে পড়তে যান আরনিমা। তিনি বাবা-মাকে সার্জন হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।

আরনিমার মা মাহাফুজা বলেন, আমার মেয়ে সিনেমা, গান পছন্দ করত। ড্রাইভিং, কেনাকাটা ও সুন্দর পোশাক কিনতেও পছন্দ করত। এছাড়া মেকআপ পছন্দ ও ছবি তোলা, সেলফি এবং ভিডিও করতে পছন্দ করত।

অর্নিমা ম্যারিকভিলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন। তারপর টেম্পে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন যেখানে তিনি গণিতে বেশ পারদর্শীতা প্রদর্শন করেন। সমবয়সীদের মধ্যে তিনি দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন।

আরনিমার বাবা বলেন, আমার মেয়ে বাংলাদেশ থেকে দ্রুতই অস্ট্রেলিয়ার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। চমৎকার ইংরেজিভাষী হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ সময় পশ্চিমা খাবার খেতে চাইত।

তিনি বলেন, আমি বাইরে গেলে সে বলত ‘বাবু আমার জন্য কিছু পাই কিনে নিয়ে এসো।

টেম্পে হাই স্কুল থেকে স্নাতক শেষ হওয়ার পর, আরনিমা ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদে ভর্তি হন। তার বাবা মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি দিতেন। সপ্তাহে দুই দিন মেরিকভিল মেট্রো শপিং সেন্টারের কেমার্টে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী কাজ করতেন।

জাফরের সঙ্গে পরিচয়ের আগে, স্বাভাবিক পরিবারের মতোই আরনিমা তার বাবা-মা এবং তার আট বছর বয়সী বোনকে দোকানে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটা করতেন।

আরনিমার বাবা বলেন, প্রতি সপ্তাহে জাফরের সঙ্গে দেখা করার আগে আমরা বাইরে যেতাম, খাবার খেতাম এবং পরিবার নিয়ে উপভোগ করতাম। আরনিমা কেএফসি, আইসড কফি, আইসক্রিম এবং গং চা পছন্দ করত।

তিনি আরও বলেন, আরনিমা ধার্মিক ছিল, তবে হিজাব পরত না। তবে বাংলাদেশি নারীদের মাথা ঢেকে রাখার রীতি অনুযায়ী শুধু একটি উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ পরত। সিনেমা ও সংগীত পছন্দ করত। ইংরেজি ভালো বলতে পারত, আমি পারতাম না।

হায়াত বলেন, সে খুব ভালো মেয়ে ছিল। তার ছোট বোনের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তার বোন তাকে এখন টিকটকে দেখে এবং বলে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার বোন’।

২০০৬ সালে তার বাবা আবু হায়াত অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মায়ের সঙ্গে শৈশবে সেখানে যান আরনিমা। অস্ট্রেলিয়ায় হায়াত দম্পতি দ্বিতীয় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

হায়াত বলেন, আরনিমা খুব ভালো ছিল, কখনই কোনো সমস্যা হয়নি। তারপরে আমার মেয়ে জাফরের সঙ্গে দেখা করে, যে নিজেও মুসলিম ছিল। কিন্তু তার পরিবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।

তারা কীভাবে দেখা করেছে তা জানতেন না আরনিমার বাবা। তবে জারফের সঙ্গে আরনিমার বাবার সরাসরি ও ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি পুলিশের কাছে পরামর্শ চাইলে তাকে বলা হয় ‘কিছু করার নেই, কারণ তারা পরস্পরকে ভালবাসে।’

আরনিমার বাবা বলেন, নিউইয়র্কে বসবাসকারী তার স্বজনদের আরনিমা বলত জাফর কখনও কখনও ভালো। তবে তার সঙ্গে খারাপ সময়ও গেছে।

জাফরের সঙ্গে আরনিমার সম্পর্কের কারণে গত অক্টোবরে পরিবারের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে আরনিমা জাফরের সঙ্গে উত্তর প্যারামাট্টার পেনান্ট হিলস রোডের বাড়িতে উঠেছিল।

আরনিমাকে হত্যার পর থেকে তার পরিবার অবিশ্বাস, ক্ষোভ ও শোকের মধ্যে রয়েছে। তার মা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কান্নাকাটি করেন। আরনিমার মরদেহ দাফনের জন্য আদালত থেকে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারটি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles