12.8 C
Toronto
রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

হাতুড়ি খুঁজতে গিয়ে বিপুল গুপ্তধন পান এই ব্যক্তি!

হাতুড়ি খুঁজতে গিয়ে বিপুল গুপ্তধন পান এই ব্যক্তি! - the Bengali Times
এরিক লয়েস

খুঁজতে গিয়েছিলেন হারিয়ে যাওয়া একটি হাতুড়ি। তবে হাতে উঠে এসেছিল ১৬শ’ বছর আগের গুপ্তধন। এতে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় ইংল্যান্ডের এক বৃদ্ধের। তার নাম এরিক লয়েস। অবশ্য তখনও পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে অজান্তেই হাত দিয়ে ফেলেছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় সম্পদে!

ঘটনাটি ঘটে ব্রিটেনের সাফোক কাউন্টির ওক্সন গ্রামে। ১৯৯২ সালের ১৬ নভেম্বর ওই বিপুল গুপ্তধনের খোঁজ পান এরিক লয়েস।

- Advertisement -

এ ঘটনার বছর পাঁচেক আগে মালির কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। অবসরের পর গুপ্তধন খুঁজে বেড়ানোই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার। সেজন্য ৭০ বছরের লয়েসকে একটি মেটাল ডিটেক্টরও উপহার দিয়েছিলেন স্ত্রী গেটা।
গেটার উপহার দেওয়া মেটাল ডিটেক্টরটির দাম ছিল সাড়ে ৪০০ ডলার। তবে এর সাহায্যেই যে এত ‘ধনপ্রাপ্তি’ হবে তা কে জানত! ১৯৯২ সালে তার আর্থিক মূল্য ছিল ১৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই আজ তার বাজারদর আরও অনেক বেশি।

কীভাবে ওই বিপুল সম্পদের খোঁজ পেলেন লয়েস? গণমাধ্যমকে লয়েস জানিয়েছিলেন, একটি হাতুড়ি-সহ কয়েকটি যন্ত্রপাতি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেসব খুঁজতেই মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে বাড়ির কাছে একটি মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, “মাঠে গিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে খোঁজাখুঁজি করছিলাম। মাঠের এক জায়গায় মেটাল ডিটেক্টরে ‘বিপ’ করে শব্দ হতেই মাটি খুঁড়তে শুরু করি। দেখি, কিছুটা নীচে একটা রুপোর রোমান মুদ্রা। এক ফুটের মধ্যেই আরও একবার ‘বিপ’ করে শব্দ হয়। এবার বেশ বিকট আওয়াজ। সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে কয়েকশ’ সোনা-রুপার মুদ্রা ও চামচ বের করি।”

সম্পদের সন্ধান পেতেই পুলিশ ডেকেছিলেন লয়েস। খবর যায় সাফোক কাউন্টি কাউন্সিলেও। ঘটনাস্থলে ছুটে যান কাউন্সিলের প্রত্নতত্ত্ববিদ জুডিথ প্লভিয়েজ। একটি ওক কাঠের বাক্সে ঠাসা ছিল সোনাদানা-গয়নাগাঁটি। ধনসম্পদ উদ্ধারের পর তা পরিষ্কার করে যাচাই করার জন্য ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাঠানো হয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমে সে সময় জুডিথ জানিয়েছিলেন, সম্পদের আর্থিক মূল্য যাচাই করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এর বাজারদর হয়তো দেড় কোটি পাউন্ড। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এটি অমূল্য সম্পদ!

জুডিথের দাবি, প্রায় ১৬শ’ বছর আগে রোমান শাসনাধীন ব্রিটেনের কোনও ধনী পরিবার হয়তো একটি বাক্সের ভিতরে ওই ধনসম্পত্তি লুকিয়ে রেখেছিলেন। প্রসঙ্গত, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩ থেকে পরের প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত রোমানদের দখলে ছিল ব্রিটেন। জুডিথ বলেছিলেন, “রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে যে তথ্যপ্রাপ্তি হবে, তার নিরিখে একে অমূল্য সম্পদ বলা যায়।”

বিপুল সম্পদের খোঁজ পেলেও তা সরকারের ঘরেই জমা হয়েছিল। কারণ, যে মাঠটি থেকে লয়েস সম্পদের খোঁজ পেয়েছিলেন, তা সাফোক কাউন্টির মালিকানাধীন ছিল। ফলে আপাতত রোমান সাম্রাজ্যের বিপুল সম্পদের ঠাঁই হয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।

ওক্সনের ওই মাঠ থেকে কী কী উদ্ধার হয়েছিল? ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, একটি ছোট বাক্সে রোমান সাম্রাজ্যের ১৪ হাজার ৮৬৫টি সোনা-রুপা-ব্রোঞ্জের মুদ্রা রাখা ছিল। এছাড়াও সোনা-রুপার কাটাচামচ, পাত্র-সহ প্রায় ২০০টি জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পুরোপুরি রুপার একটি প্যান্থারের মূর্তি। সোনার চেইন, বহুমূল্য পাথর বসানো কয়েকশ’ গয়না। এক পাউন্ডেরও বেশি ওজনের চুনি বসানো একটি সোনার হার।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছিলেন, ২০২০ সাল পর্যন্ত এর আর্থিক মূল্য ৩৬ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকারও বেশি।

বিপুল ধনসম্পত্তির খোঁজ পাওয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী অর্থপ্রাপ্তিও ঘটেছিল লয়েসের। ১৯৯২ সালের খোঁড়াখুঁড়ির পর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, প্রায় ১৫ লাখ ডলারের আশা করতে পারেন তিনি। ২০২২ সালে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles