13 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

উপজেলা চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠদের ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য

উপজেলা চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠদের ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য - the Bengali Times

ক্যাম্পাসের আশপাশে জায়গা থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। বনজঙ্গল, পাহাড় ও টিলায় ঢাকা এসব জমি কেনা নিয়ে উঠেছে জবরদস্তি ও বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। আর প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই বেশিরভাগ জমি কিনে রাখেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িচালকের নামেই রয়েছে প্রায় ৫০ বিঘা জমি।

- Advertisement -

এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থানীয় বিজয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতারাও জবরদস্তি করে এসব জমি কিনেছেন প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই। স্থানীয়রা বলছেন, ব্যবহার অনুপযোগী পাহাড়ি এ অঞ্চলে জমি বেচাবিক্রি হয়নি গত কয়েক দশকে। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৮ সালে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠরা এসব জমি কেনা শুরু করেন। অনেক ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্যে, আবার অনেককে পরে টাকা দেওয়ার কথা বলে এসব জমি কেনা হয়। যদিও বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য এসব জমি জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করবে, এমন তথ্য জানা ছিল না স্থানীয়দের। ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে একনেকে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একটি প্রকল্প পাস হয়।

‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ নামের ওই প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়; যার বড় একটি অংশ ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে। প্রকল্পের আওতাধীন ভূমি অধিগ্রহণে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই মৌজার ৭, ৯, ১২ এবং ১৩ নম্বর শিটে অন্তর্ভুক্ত জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ১২ ও ১৩ নম্বর হচ্ছে রাজারখলা গ্রামে, যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও অধিগ্রহণ প্রকল্প পাস হওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাস বিভক্তিকরণের’ অভিযোগ তুলে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদ করেছেন স্থানীয়রাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সারওয়ারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক। মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনের এ চাকরিজীবীর নামে কুবির নতুন অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বিভিন্ন দাগ নম্বরে জমি রয়েছে প্রায় ৫০ বিঘা। এই জমি কেনা হয়েছে অধিগ্রহণ প্রকল্প পাস হওয়ার কিছুদিন আগে।

অধিগ্রহণের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহণকৃত জমির এক দলিলেই ৭২ বিঘা জমি রয়েছে চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠদের। বিভিন্ন দাগ নম্বরে থাকা এসব জমির মালিকানার তালিকায় রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ারের গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক, বাগমারা উত্তর ইউপি ছাত্রলীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মোমিন মজুমদার, তানভীর হোসেন পারভেজ ও মোস্তফা কামালের নাম।

উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মাসুম। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে মাহমুদুর রহমান মাসুম, ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা এবং বাগমারা উত্তর ইউপি ছাত্রলীগ সভাপতি নাছির উদ্দীনের নামে ৬১২২ দাগে ৫৩৮ শতক জমি রয়েছে। নাছির উদ্দীনের নামে ৬১২১ দাগে আরও ২৬১ শতক জমি রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা মোস্তবা জামান লিটনের নামে ৪৩১১ নম্বর দাগে জমি রয়েছে ৪৬ শতক। ৪২৯২/৪৭৫০ নম্বর দাগে মাহমুদুর রহমান মাসুমের জমি রয়েছে ১৩২ শতক।

উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাগনে মো. ফারুকের নামে ৪২৭০ নম্বর দাগে ২০ শতক, ৪২৬৯ নম্বর দাগে ৪৭৯ শতক জমি রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দীনের নামে ৪৮৫৯ নম্বর দাগে ২৮ শতক, ৪৮৬০ নম্বর দাগে ৭০ শতক, ৪৮৬১ নম্বর দাগে ৬০ শতক জমি রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকার স্ত্রী তাহমিদা হকের নামে ৪৮৬৯ নম্বর দাগে ২০১ শতক, উপজেলা চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ তানভীর হোসেনের স্ত্রী তাসমিয়া আহমেদের নামে ৪৮৭১ নম্বর দাগে ১৭৭ শতক জমি রয়েছে। তাসমিয়া আহমেদ কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে চাকরি করেন।

ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দীনের নামে ৪৮৭৩ নম্বর দাগে ৬০ শতক, পাশেই অন্য একটি দাগে ১৬৪ শতক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মোমিন মজুমদারের নামে ৪০ শতক, স্থানীয় নেতা রুবেল মিয়ার নামে ৪৩ শতক, মোস্তবা জামান লিটনের নামে ২০৭ শতক জমি রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. রুবেলের ৪৮৭৫ নম্বর দাগে ৭৮ শতক জমি রয়েছে।
৪৮৭৭ নম্বর দাগে ৩১৬ শতক জমি রয়েছে নাছির উদ্দীন, আবদুল মোমিন মজুমদার ও মো. রুবেলের নামে। ৪৮৭৮ নম্বর দাগে ৮৫ শতক জমি রয়েছে আবদুল মোমিন মজুমদার ও নাছির উদ্দীনের নামে। এ ছাড়া ৪৮৭৯ নম্বর দাগে ১০ শতক জমি রয়েছে নাছির উদ্দীনের। ৪৮৮০ নম্বর দাগে নাছির উদ্দীন, মোমিন মজুমদার ও মো. রুবেলের নামে ৩৪৩ শতক জমি রয়েছে। মো. রুবেল, মোস্তবা জামান লিটন ও আবদুল মোমিন মজুমদারের নামে ৪৮৮১ নম্বর দাগে ২১৯ শতক জমি রয়েছে। অধিগ্রহণকৃত এলাকায় নিজ এবং বোনের নামে জমি রয়েছে কুবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিনের। সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের নিজ নামেই জমি রয়েছে।

এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আলী মনসুর ফারুকের জমিও রয়েছে। জমি রয়েছে কুবির ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অ্যাসিট্যান্ট প্রফেসর ও তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাসির হুসাইনের। এ ছাড়া বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জিএম মনিরুজ্জামান, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আ. লতিফ তার স্ত্রীর নামে জমি কিনেছেন। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী, প্রশাসন ঘনিষ্ঠ বিশ^বিদ্যালয়ের মোট ২৭ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার নামেও জমি রয়েছে।

সরেজমিন অধিগ্রহণ করা লালমাই পাহাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় ছোট-বড় অসংখ্য টিলা এবং পাহাড়। কোথাও সমতল জমি নেই। অনেক দুর্গম এলাকায় ত্রিপ্রা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। এসব পাহাড়ি জায়গায় উন্নয়ন কাজ শুরু হলে প্রাণ ও প্রকৃতি বিনষ্টের পাশাপাশি এসব উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদেরকেও এলাকা ছাড়তে হবে।

পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ক্ষোভ ও কষ্টের কথা। তারা কেউই ভয়ে মুখ খুলতে চান না। জমি লিখে দিতে না চাওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে নতুন করে বিপদে পড়তে চান না তারা।
বিশ^বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিশ^বিদ্যালয়ের আশপাশের জায়গা অধিগ্রহণের জন্যই প্রথমদিকে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল।

তবে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। পরে তিন কিলোমিটার দূরে জমি অধিগ্রহণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অধিগ্রহণকৃত একটি দুর্গম এলাকায় দেখা মেলে কয়েকটি পরিত্যক্ত টিনের ঘর। পাহাড়ে বসবাসকারী স্থানীয় কয়েকজন জানান, এখানে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প পাস করার পরে হঠাৎ একদিন ঘর তোলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মাসুম। জমির জরিপ কাজে জেলা প্রশাসন থেকে কর্মকর্তারা আসার দিনে কিছু মুরগি এনে রাখা হয় এসব ঘরে। তবে ওইদিন বিকালেই আবার মুরগিগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায়ই রয়েছে ঘরগুলো।

স্থানীয় অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তবে কেউই ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চাননি। এর মধ্যে একজন জানান, তার জমি জোর করে দখলে নিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মাসুম। এমনকি জমি রেজিস্ট্রি করতে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পালিয়ে এলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি। পরে জমি লিখে দেন মাসুমকে।

স্থানীয় ত্রিপ্রা সম্প্রদায়ের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা এই পাহাড় ছাড়তে চাই না। আমাদের অনেকেই ত্রিপুরায় চলে গেছে। আত্মীয়স্বজন অনেকেই সেখানে। কিন্তু আমরা এই পাহাড় ছাড়তে চাইনি। এখন বোধহয় ছাড়তে হবে।
সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতের আঁধারে পাহাড়ের বড় বড় গাছ ও বাঁশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় দিনের বেলাও ট্রাক ভরে এসব নিয়ে যাওয়া হয়। আর এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাসেল আহমেদ নামের একজন স্থানীয় প্রভাবশালী।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল কোথায় জমি অধিগ্রহণ করবে, তা ঠিক করা। ইউনিভার্সিটির আশপাশেও জায়গা ছিল, তা নিতে পারত। বদ্দারবাজারের কাছাকাছি বড় একটি জায়গা ছিল, সেটিও নিতে পারত। কিন্তু এখন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়টিকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়া হলো। পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হলো। আরও এদিকে আনা দরকার ছিল। নতুন জায়গা অধিগ্রহণ, নতুন জায়গার প্রস্তাব করা- এসব বিষয় নিয়ে একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে একটি সুন্দর জায়গায় আমরা ভালো একটি বিশ^বিদ্যালয় করতে পারতাম।’

তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে নানা কথা রয়েছে। তদন্ত করলে হয়তো পাবেন। যারা জানত পাহাড়ে বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে যাবে, তারা সেখানে আগেই জমি কিনে রেখেছিল।’

কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি। বিস্তারিত জানি না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত বলতে পারব।’

তিন কিলোমিটার দূরে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘মাঝখানে বনের জায়গা রয়েছে, তাই দূরে নেওয়া হয়েছে। বনের জায়গা কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘এখনো মানুষ জমি বিক্রি করতে আসে। চাইলে যে কেউ জমি বিক্রি করতে পারে। কেউ যদি কিনে আর কেউ যদি বিক্রি করে, তাতে কার কী করার আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ির চালক আবদুর রাজ্জাক জমির পাওয়ার নিয়েছে, কেনেনি। নাছির উদ্দীন খুব অল্প জমি কিনেছে। এটা কোনো বিষয় না। আমার পরিচিতি তেমন কেউ নেই।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইউনিভার্সিটির সভাপতি অনেক জমি কিনেছে। জমির গাছগুলো কাটা হচ্ছে, এর জন্য দায়ী ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ। জমির মালিকরা এখন জায়গায় যেতে পারছেন না। ইনকাম করতে পারছেন না। বিশ^বিদ্যালয় নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। তারা তা করছেন না।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমার বোন এবং ভাগিনারা জমি কিনেছে। কেন কিনেছে, বিষয়টি আমার জানা নেই।’ তবে নিজের নামে জমি থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles