-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

উত্তেজনায় আমার হাত কাঁপছিলো

উত্তেজনায় আমার হাত কাঁপছিলো
তাসরীনা শিখাছবিমনির বাবু

প্লেনে উঠার পর মনটা একটু উদাস হোল এই ভেবে , আমার মনে হোল আমার চোখে একটু জল আসা উচিৎ ছিলো কিংবা একটু বিরহ কাতর চেহারা । কোনটাই হোল না।

এসব ভাবতে ভাবতেই ঢাকা পৌঁছে গেলাম। শুরু করলাম পড়াশুনা । তার সাথে বন্ধুদের ইন্টারভিও, ১৫ টা দিন কি করে কাটলো । ১ সাপ্তাহ ২ সাপ্তাহ ৩ সাপ্তাহ কেটে গেলো । আমার একটা চিঠিও এলো না। মনে মনে খুব অপমানিত বোধ করতে লাগলাম । আম্মা জিজ্ঞেস করে জামাইর চিঠি পেয়েছিস ? আমি বলি না। বোনরা জিজ্ঞেস করে কিরে তোর বরের চিঠি পেলি? আমার একি জবাব না। পেলে তোমাদের জানাবো । এক মাস পেরিয়ে গেলো আমার কোন চিঠি এলো না। নিজের মনে মনে খুব অপমানিত বোধ করলাম।

- Advertisement -

এক মাস পরে হঠাৎ করে নীল খামে ১০ টা চিঠি এসে হাজির। এতো গুলো চিঠি কোথা থেকে এলো ? বুঝে গেলাম সে লিখেছে। প্লেন তো রোজ আসে না তাই এক সাথে জমে এতগুলো চিঠি । ভাগ্য ভালো রুমে আমি ছাড়া কেউ ছিলো না। ১০ টা চিঠি হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করছিলাম। কোন চিঠিটা আগে পড়বো? উত্তেজনায় আমার হাত কাঁপছিলো । নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিলো । সে দশটা চিঠি লিখে ফেললো আর আমি একটাও লিখলাম না। আমি একে একে চিঠি গুলো খুলে পড়তে লাগলাম । প্রত্যেকটা চিঠি শেষ করেছে এই বলে আমি জানি আমি দু চার দিনের মাঝেই তোমার কয়েকটা চিঠি একসাথে পাবো । ছি ছি আমিতো একটা চিঠি ও তাকে লিখি নি। তারপর থেকে শুরু হোল আমারো তাকে প্রতিদিন একটা করে চিঠি লিখা। আমিও পাই কয়েকদিন পর পর তিনটা চারটা চিঠি সেও তাই।

চিঠির মধ্য দিয়ে আমরা হয়ে উঠলাম প্রেমিক প্রেমিকা। পুরাতন প্রেম ভেসে গেলো জলে নতুন প্রেম আমাকে ভরিয়ে দিলো নতুন ভালোবাসায় । আমাদের ১৫ দিনের হানিমুনে যে কথা গুলো বলা হয়ে উঠে নি, সে কথাগুলো প্রকাশ করতে লাগলাম চিঠির ভাষায়। তার চিঠি গুলো আমার হৃদয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে লাগলো । যার থেকে বিদায়ের আগে আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা জল পরে নি। যার জন্য আমার কোন রকম বিরহ বেদনা জাগে নি। সে মানুষটির সাথে পত্র মিতালী হয়ে আমি প্রেমের জোয়ারে ভাসতে লাগলাম । আমাদের স্বপ্ন , আমাদের ভালোবাসা চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ করতে লাগলাম । আমাদের প্রেম আমাদের ভালোবাসা হৃদয়ের চারপাশে ঘুরতে লাগলো ।

তারপর সব কিছুর পরে শুরু করতে হোল আমাদের নতুন জীবন , নতুন সংসার । আমরা স্বইচ্ছাতে প্রেমিক প্রেমিকার পদ থেকে পদত্যাগ করলাম এবং স্বামী স্ত্রী র পদ গ্রহন করে নিলাম।

আমি এবং সে ভালই আছি। নতুন সংসারের আনন্দে আমি আপ্লূত । ঘর সাজাচ্ছি। রান্না করার চেষ্টা করি প্রতিদিন। কোন দিন কিছুটা ভালো হয় আবার কোন দিন কিছুই হয় না। সে খাবার খেয়েও সে মহা আনন্দিত ।

এভাবে আমি এবং সে ভালোই আছি। তারপরও দুজনের কিছুটা অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। সে ভেবেছিলো এমন একজন মেয়েকে বিয়ে করবে যে কিনা গান করতে জানে । তারমানে আমার মতো গুনগুন করে গান করা না। ভালো করে হারমনিয়াম বাজিয়ে গান করা। সেটা সে পেলো না। কি করে পাবে? এতো তাড়াহুড়ো করে কি এসব হয়।

আর আমি? আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী একজন কাব্যিক মনের মানুষ হবে। কবিতা আবৃত্তি করবে, কবিতা ভালবাসবে জোৎস্নার আলো তাকে আপ্লুত করবে। ফাগুন হাওয়া, ফুলের সুবাস, সুন্দর ফুলের বাগান তাকে উচ্ছেসিত করবে, অসম্ভব দমকা হাওয়া দিয়ে যখন বৃষ্টি নামবে তখন সে আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে নামবে । নাহ সে রকম কোন ঘটনা ঘটে নি আমাদের জীবনে । কারন আমরা স্বামী স্ত্রী । আমরা এখন চিঠির প্রেমিক প্রেমিকা নই।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles