1.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

আমাদের ১৬ ডিসেম্বর

আমাদের ১৬ ডিসেম্বর - the Bengali Times
ফাইল ছবি

খুব ইচ্ছে হয় ষোলোই ডিসেম্বর বাংলাদেশ থাকি।
দেশে থাকতে খুশিতে কী করবো ভেবে পেতাম না। একদিকে বিজয়ের আনন্দ, অপরদিকে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের বেদনা। মুখে হাসি, চোখে অশ্রু। দিনটাতে নিঃশ্বাসও নিতাম জোরে; স্বাধীন বাতাসকে বুকে টেনে আরও তীব্রভাবে অনুভব করতে। আব্বা খোঁজ নিতো, ছাদে পতাকা ভালমতো টাঙানো হয়েছে তো?

আমাদের বাড়ির গলির নামটা অদ্ভুত সুন্দর- ‘সকালসন্ধ্যা’! গলি থেকে বের হয়ে হাঁটা দিতাম বাজারের দিকে। কুষ্টিয়ার সে কী গৌরবময় স্মৃতি! ডিসি কোর্টের সীমানা পেরোলেই হাতের বামে পাড়ার বড়ভাইদের কিছু দোকান পাট। ছেলে-পেলেরা শামিয়ানা টাঙিয়ে মাইকে বাজাতো শাহানাজ রহমতউল্লাহ, আব্দুল জব্বার, আপেল মাহমুদের গান। সাদ্দাম বাজার ছাড়িয়ে আমাদের জিলা স্কুল রং-বেরঙের কাগজে, পতাকায় ঝলমল করতো।

- Advertisement -

বাস স্ট্যান্ডে জাহাঙ্গীর হোটেলকে পাশ কাটিয়ে ডানে মোড় নিতেই কাপড়, প্লাস্টিক সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স দোকানের সারি। আরও এগিয়ে চলে যেতাম চার রাস্তার মোড় -এ। এটা কুষ্টিয়ার প্রাণকেন্দ্র। সন্ধ্যা হতে না হতেই কী জমজমাট আসর! রিকশাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতেই সময় চলে যেত। যুবক-যুবতী, স্বামী-স্ত্রী, পরিবার নিয়ে মানুষ বেড়াতে যাচ্ছে প্রিয়জনদের বাসায়। কেউবা শুধু রিকশায় ঘুরতে বেরিয়েছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেলে দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে।

বাংলাদেশের নারীদের সবচাইতে মানায় যখন রং-বেরঙের সুতি শাড়ি পরে, খোঁপায় রজনীগন্ধা-বেলি ফুল গুজে, গালে ছোট্ট লাল সবুজের পতাকা আঁকে! যে আনন্দের মাঝে লুকিয়ে আছে লক্ষ মা বোনের কষ্ট, বীরাঙ্গনাদের বীরত্বের রক্ত হিম করা অমর কাহিনী। ঘোমটা পরা, আলতা-নুপুর পায়ে আদরের মা বোনের আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস!

এক দিকে সম্পূর্ণ লোডেড, ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ট্রেইনিংপ্রাপ্ত আর্মি বাহিনী; আর তাদের পা চাটা লক্ষ বেঈমান। আর আরেকদিকে আকাশে বাতাসে শুধু একটা প্রতিশ্রুতি- “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!”

আমাদের কিচ্ছু ছিল না।

ছিল শুধু ইজ্জত, প্রত্যয়, নেতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, মাটির প্রতি বাঁধভাঙা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা! ক্ষেত খামারের কামলাখাটা, কারখানা, অফিসে কাজ করা খেটে খাওয়া মানুষ, মাঝি, ছাত্র-ছাত্রী; কে ছিল না ওই দলে? একতার মতো বড় হাতিয়ার যে আর কিছু হতে পারে না, সেটা নির্বোধ রাক্ষস বাহিনী ধরতে পারে নাই। ওরা খেটে খাওয়া রিক্সাওয়ালাদের পর্যন্ত রেহাই দেয় নাই..
প্রতিটা অক্সিজেন অনুতে তোমাদের ঋণ।

হায়েনারা ধরতেই পারে নাই বাঙালির সরলতা মানে বোকামি নয়। হাঁসি, কোদাল, কাস্তের কত শক্তি!
শুধু বুলেট দিয়ে কাজ হলো না।

তারপর শুরু করে দিলি ইতিহাসের নিকৃষ্টতম খেলা! মারার আগে তোরা দেখেছিস, কিভাবে তাঁরা বিনা বাক্যে স্যান্ডেল লুঙ্গি পরে শহীদ হতে চলে গিয়েছিল? কখনো পিছন ফিরে তাকায়নি! তোরা হলে কী করতি শকুনের দল; ঐখানেই প্যান্ট ভিজিয়ে হার্টফেল করতি! বুদ্ধিজীবীদের তালিকা, নাম লিখে ধরে ধরে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন! এ ব্যাপারে তোরা বিশ্বে ফার্স্ট!

আমি শুধু চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষ দেখতাম। শাড়ি উড়িয়ে, পাঞ্জাবি উড়িয়ে মানুষের ঢল। মুক্ত বিহঙ্গ! শুনতাম রিক্সার টুংটাং, ছাপড়া চায়ের দোকানের টুংটাং! আর ভাবতাম- আমরা বিজয়ের আনন্দ পেলেও পুরোপুরি স্বাধীনতার আনন্দ কবে পাবো?
সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles