2.7 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ২৫, ২০২৫

আমরা আছি, হয়তো অপেক্ষায় আছি

আমরা আছি, হয়তো অপেক্ষায় আছি - the Bengali Times
আমরা আছি হয়তো অপেক্ষায় আছি

তিনি নেই আমরা আছি।…. কাজ করতাম তখন বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তখনো হইনি আর্ট ডিরেক্টর অথবা সিনিয়ার আর্ট ডিরেক্টর,ছিলাম আর্ট সেকশানের একজন সাধারণ আর্টিস্ট। থাকতাম এটাচড্ বাথ সহ ওয়ান বেড বাাসায় মৌচাক মার্কটের পাশে। সামনে দিয়ে বের হলে মৌচক,পেছনের গ্যারাজ দিয়ে বেরুলে সিদ্ধেশ্বরী। এক সন্ধ্যায় সিদ্ধেশ্বরী দিয়ে মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরছি। ভাবছি নারী যখন সুন্দরী হয় তাহলে কি ভাগ্য খোলে! মডেল মিতা নূর এসে ছিলো ছোট খাটো মডেলিং এর কাজ পেতে। বিটপী সাম্রাজ্যের অধিপতি রেজা আলী সাহেবের চোখে মনে হলো এ মেয়েতো সুপার মডেল হতে পারে! ব্যাস,ঠিকই হয়ে গেলো। অলিম্পিক ব্যাটারীর –আলো,আলো টিভি এ্যাড করে সবার পরিচিত জনপ্রিয় মুখ তখন মিতা নূর। বর্তমানে যেমন পরিমনি,নারী থেকে রাতারাতি পরিতে রূপান্তর।  এই সবই ভাবছিলাম। আচমকা আমার নামে ডাক –ইকবাল! চমকে থমকে দাঁড়িয়ে মাথা ঘোরাতে দেখি শ্রদ্ধেয় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ডাকছেন। কাছে যেতে প্রশ্ন – এখানে কি করো? ভয়ে তো আর জিজ্ঞেস করা যাবেনা যে  – আপনি কি করেন। তাই মাথা চুলকে বলে ছিলাম – এইতো ডানে মোড় ঘুরলে বাসা,এখানেই একা থাকি। তিনি বল্লেন – বাহ ভালোইতো! বাঁদিকের সুন্দর বড় বাড়িটি দেখিয়ে বল্লেন –এইযে এই বাড়িটি আমার বড় ভাইয়ের। এসো তোমার সাথে আলাপ করিয়েদি। একা থাকো যখন ইচ্ছে হয় এসে খেয়ে যেও,ভাবী খুবই মাদারলী মানুষ। ভাবীর বাড়ি মিরসরাই,চট্টগ্রামে পড়েছে। তবে তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন না। তাতে কি, গেলে মায়ের মতই আদরে খাওয়াতেন। ফর্সা মত মায়ের ভাই মামাও ছিলেন একজন। তখনি পেলাম বরণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর দুই ভ্রাতুষ্পুত্রদের। শোয়েব চৌধুরী আর সাইদ চৌধুরী। শোয়েব তখন বালক খোলোস ছাড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাইদ বালক সীমান্তে। সারাক্ষণ লাফিং বুদ্ধার মত হাসতেই থাকে সাইদ। আমার ছিল তখন ইয়াহামা হান্ডরেড মোটর বাইক। শোয়েব কে নিয়ে ঘুরতাম। পরে শোয়েব ও কিনলো মোটর বাইক আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ রবীন্দ্রসঙ্গীত গুণগুণ করতো। এই রবিগুণগুণ আজও থামেনি শোয়েবের তখন আশি সিসি হোন্ডা বাইক চালিয় গুণগুণ করতো,আর এখন বিমানের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার চালাতেও রবিগুণগুণ তার থামেনি সাারাক্ষণ। তবে হ্যাঁ ঘুরিয়েছে তার বাাইকে আমাকেও। তবে বেশি নিয়ে যেত তার গুরু সাংবাাদিক সঙ্গীতজ্ঞ সহজ সরল জ্ঞানী ফেরেস্তা মানুষ ওয়াহিদুল হককে। তিনি যে কতটা ভালোবাসতেন শোয়েবকে তা আমার চোখে দেখা। তখনো বাংলাদেশে আমেরিকান জিন্স আসেনি। গ্রীন রোড কিংবা গাওসিয়াতে ইব্রাহীম নামের এক টেলারিং শপ ডেনিম কাপড় আর জিন্স সেলাইয়ের মেসিন এনে ছিলো। আমি বাানিয়ে ছিলাম,ভালোই। শোয়েব সায়ীদ আবদার করতে ইব্রাহীমে তাদের ও মাপ নিতে নিয়ে গেলাম। তারা নিজের মাপের জিন্স পরে মহা খুশি।আজ শোয়েব বিমানের সিনিয়ার পাইলট, সায়ীদ সান হোজে কালিফোর্নিয়াতে বড় কাজ করে চাইলে অনেক-অনেক লী কিংবা রেঙলার আমেরিকান অরজিনাল জিন্স কিনতে পারে,তবে সেই বয়সে প্রথম জীন্স পরার যে আনন্দ তাদের চোখে মুখে দেখে ছিলাম তা এখন  হয়তো আর পাওয়া সম্ভব নয়। শোয়েব জীবন সঙ্গীও পেয়েছে দারুণ রবীন্দ্র বলয়ের নিষ্পাপ মুখাবয়বের রবীন্দ্র্রসঙ্গীত শিল্পী এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষক তাানিয়া মন্নানকে। তানি ও আমার প্রিয় মানুষ। তাদের প্রথম সন্তান মুধুরমাকে কোলে নিয়েছি আজ সেও বিশ্বখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার ছাত্রী। অনেক পেরিয়েছি সময়কাল। পেছনে ঘুরে তাকালে ঝাপসা আর স্পষ্টের মিশ্রণ। এমনকি নিচের এই ছবি রাতের পর রাত এক অলৌকিক সঙ্গীত মূর্ছনায় ভরপুর বেঙ্গলের ভারতীয় ক্ল্যাসিকেল মিউজিক ফেস্টিভ্যালে ধানমুন্ডি আবহনী মাঠে তোলা অথচ সালটি মনে আসছে না। আজকাল কাইয়ুম চৌধুরী যে বাংলা গ্রন্থের আধুনিক প্রচ্ছদ ডিজাইনের যে পথিকৃত ছিলেন তা বলতে বা লিখতে দেখাই যায়না। কত বড় কাজ তিনি একাই করে গেলেন। বাংলাদেশের বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাাইনকে মানসম্মত করে দিয়ে গেলেন। তিনি না করলে কে করতো এই  কাজ। তাই আজ যখনই বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করতে বসি স্মরণ করি তাঁর মুখ।মহাপ্রান শিল্পী আচমকা চলে গেছেন। আমরা আছি, হয়তো অপেক্ষায় আছি- যাওয়ার।

 

- Advertisement -

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles