2.7 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ২৫, ২০২৫

শনিবারের দিনলিপি

শনিবারের দিনলিপি - the Bengali Times
শনিবারের দিনলিপি

শনিবার।
গিন্নি এসে বলল- আমার অনেক সেলাই জমা পরে আছে; পারলে দুপুরের খাবারটা তুমি সার্ভ করো। আজ কোনো রান্না না। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে দিলেই হবে
– শিওর, তুমি নাকে তেল দিয়ে সেলাই করো, সব দায়িত্ব নিলাম, যাও!

ঠিক করছি অনেক কাজ করবো আজকে। আমি নাকি কাজ পারি না। ঘর পরিষ্কার করে বাগানের আগাছা তুলবো, গ্যারেজের দেয়াল ভেঙে গেছে; সিমেন্ট দিয়ে ঠিক করবো, বাসন মাজবো, কাপড় ধুবো, ফুলের টবে পানি দিবো..।

- Advertisement -

কাজ ভালোই চলছিল।
দুপুরের আগে ছেলেটা হঠাৎ আমার কাছে অগ্নিমূর্তি নিয়ে এসে বলল- আব্বু সকালে কেউ আসছিল?
– রজার্স এর ছেলে-পেলে, ইন্টারনেটের অফার দিতে
– তুমি জিজ্ঞেস করছিলা কেন আসছিল?
– প্রতি শনিবারেই তো ওরা আসে
– ওরা কে ছিল জানো? আমার ফ্রেন্ডস! হাতে বল ছিল দেখোনি? জিজ্ঞেস না করে মুখের সামনে দরজা আটকায়ে দিলা? আমাদের মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা। ওরা কী ধারণা নিয়ে গেলো? এরকম স্টুপিড কাজ কীভাবে করো তুমি আব্বু?

দুপুরের পর বাগানের আগাছা তুলে, লন্ড্রীতে এক গাদা কাপড় ধুতে দিয়ে, সারা বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে রেস্ট নিতে থাকি। আমার মেয়েটা কাছে এসে বলল- আব্বু, তুমি না ব্রাউন জুতা পরে কুকুরের গু পাড়াইছিলা?
– হু, তোর মনে আছে, হিহি!
– ঐ জুতা ধুইছিলা?
– মনে থাকে না। আচ্ছা ধুবো..
– আমার জামার সাথে ওয়াসারের মধ্যে ঐ জুতা কেন?
– মানে!
– তোমার নিজের জামার সাথে ধুইতা? নতুন জামা কিনলাম দুইদিন আগে, পরশুদিন স্কুলে পরবো। একটা জামা ছিড়েও গেছে জুতায় বেধে। দশটা জামা একসাথে ফেলে দিবো?
– আসলে হইছে কি, দরজার সামনে সব জামাকাপড় জমা করা ছিল। একসাথে তুলতে গিয়ে জুতাটাও উঠে গেছে জামা-কাপড়ের সাথে, খেয়াল করিনি।
তুমি আমার কোনোকিছু কেয়ার করো?- বলে মেয়েটা দৌড়ে পালালো কাঁদতে কাঁদতে..

চিশতীর ফোন- এই রিপন!
– দোস্ত?
– আমার গাড়ি নিয়ে গতমাসে স্টিলস এভিনিউ তে গেছিলি?
– হ্যা, ঐ যে.. চাইনিজ দোকানে..
– তুই আবার রেড লাইটে ক্রস করছিস?
– কোই না তো?
– আজকে যে আমার কাছে চিঠি আসলো? তুই না করলে তাহলে কে টিকিট খাইছে? ভুতে চালাচ্ছিল? তিনশো পঁচিশ ডলার ফাইন দিছে। তিনটা পয়েন্ট যে যোগ হলো? আর কয়েক পয়েন্ট যোগ হলে আমার গাড়ি চালানো শেষ, লাইসেন্স সাসপেন্ড হবে! মানুষ রেডলাইট খায় কাটায় কাটায়, আর তুই খাইছিস সাত মিটার দূর থেকে! তোর ড্রাইভার লাইসেন্সের ছবি পাঠা, পে আমি করবো। কিন্তু তোর পয়েন্ট তোকেই নিতে হবে। বুকা..

সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে রাত দশটায় বেডরুমে শুয়ে ছিলাম। গিন্নি এসে পাসে বসে বলল- চাঁদু, আজকে তুমি মেলা কাজ করছো। এত কাজ করতে তো বলিনি?
আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে লেপের তলায় মটকা মেরে শুয়ে থাকি।
তুমি ঠিক দুই মিনিট আগে পেন্সিলে এক ভদ্রমহিলার কমেন্টে রিপ্লাই দিয়ে লিখলা ‘থ্যাংক ইউ’। আমি জানি তুমি জাগা..
– কী হইছে?
– কিছু না, বাথরুমের স্যান্ডেল খুঁজতে খুঁজতে এখানে পেলাম তাই একটু বসলাম। ঐ নোংরা স্যান্ডেল পরে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছো?
– ভুলে গেছিলাম
– আমার ধারণা তুমি ইচ্ছা করে এগুলা করে আমাকে রাগাও। আবার কাপও নাকি ভাঙছো? দখিনা দেখছে
– এক্সপায়ারি ডেট ওভার হয়ে গেছিলো [আমি লেপের তলা থেকেই উত্তর দেই]
– কাপেরও এক্সপায়ারি ডেট থাকে? আর কত জোকারী করবা? যত খুশি কাপ ভাংগো, ফুলদানি ভাংগো; কিন্তু গিফটের জিনিসে তোমার এতো আগ্রহ কেন? কাপটা আমার ভাবি দিছিলো ছয় বছর আগে
– সরি
– তুমি কাপড় ধুইছো কেন? তোমাকে তো বলি নাই আমার জামা ধুতে? নতুন সাদা জামাটাকে লাল বানাইছো। দাঁত মাজতে গিয়ে দেখি আমার ব্রাশ ভেজা, পেস্টের গন্ধ..! চান্দু, আবার তুমি.. থাক আর না বলি, লাভ নাই।
[সে একটা বিরাট দীর্ঘশ্বাস গিলে ফেলল]

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles