1.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ডলারমা এবং কাউন্টডাইন

ডলারমা এবং কাউন্টডাইন
ফাইল ছবি

আজ বিকেলে বাসায় ফিরে বাজার-সদাই রান্নাঘরের সামনে রাখলাম। কিছুক্ষণ পর বিত্ত এসে চারদিক নজর বুলিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। বিশেষ কিছু না পেয়ে বলেই ফেলল, আব্বু কী কী কিনছো?
– এই তেমন কিছু না, বাজার [আমি ডাইনিং টেবিলে ভাত খেতে বসে উত্তর দেই]
– ডলারামা থেকে কিছু কিনছো? ডলারামার খালি ব্যাগ দেখতে পাচ্ছি
– আইসিং সুগার; তোর কেকের জন্য
– আর কী?
– তেমন কিছু না। আচ্ছা বিত্ত, তোর জন্মদিনে এবার কিছু না দিলে কেমন হয়?
– হি হি! আব্বু, আজকের বাজারের রশিদগুলা আমাকে দেওয়া যাবে?
– কোথায় যে আছে..

সে আর কিছু না বলে রহস্যজনক মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল। ও জানে, আমি ফান করে বলছি কিছু কিনিনি। তার প্রচন্ড আস্থা আমার ওপর। পেছন থেকে বললাম, ঠিক এগারোটা ঊনষাট মিনিটে পাবি।
[বাচ্চা ছেলে, পাছে যদি সত্যিই ভেবে বসে কিছু কিনি নাই? বলা যায়..]
.
রান্নাঘরে গিন্নিকে ফিসফিস করে বললাম, বুঝতে পারছো কী কেনা হইছে?
– হু [সে হেসে ফেলল], আন্দাজ করতে পারছি।
গিন্নি কেক বানানোর যাবতীয় উপকরণ সাজিয়ে রাখছে। অনেক মমতা নিয়ে একটু পরে তার ছেলের জন্য সাধ্যের মধ্যে বেস্ট কেকটা বানাতে বসবে।

- Advertisement -

সোফায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের লেটেস্ট নিউজ দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর দখিনা এসে আমার গায়ের উপর শুয়ে খুনশুটি করতে লাগল। মতলব, এখন তাকে পাউরুটিতে নাটেলা স্প্রেড করে খেতে দিতে হবে। বিকাল পাঁচটার দিকে এটা তার চাই।
ডাডা, তোমাকে না বলছিলাম বার্থডে কার্ড কিনতে?
– হু কিনছি। আর কী দেয়া যায় রে?
– বুঝতে পারতেছি না। আমার জন্মদিনে বিত্তকে পঁচিশ ডলারের রব্লক্স গেম্স্ কার্ড কিনে দিছিলা। বিত্ত’র জন্মদিনে আমাকে দিবা না?
– হুমম.. তোর কথায় লজিক আছে..
– তুমি বাইরে যাবা না?
– নাহ, আজকে আর বের হবো না
– বিত্ত’র জন্য কিছু কিনো?
– ও হ্যা, একটা গিফট তো আছে! ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়া বের করছি..

আমি এখান-সেখান খুঁজেও আর প্যাকেটটা পাই না। শেষে বাইরে গিয়ে গাড়ির ভেতর খুঁজে পেলাম। মেয়েটার হাতে পাউরুটি-নাটেলার সাথে প্যাকেটটা দিয়ে বললাম, যা.. বিত্তকে দিয়ে আয়
– কী এটা?
সে খানিক্ষন প্যাকেটটা নাড়াচাড়া করে, টিপে-টুপে পর্যবেক্ষণ করে, বত্রিশ পাটি বের করে বলল- ডাডা! আন্ডারওয়্যার?
– হু
– হি হি!
– আগেরটা নাকি তার ছোট হয়
– ওহ.. আমার নটি ডাডা..
বিত্ত উপর থেকে উচ্চস্বরে আমাকে ডাকলো- আব্বু!
– বল! [আমিও চিল্লিয়ে প্রতি-উত্তর দেই]
– থ্যাঙ্ক ইউ!
– ইউ আর ওয়েলকাম বাবু! লার্জ সাইজের আনছি, পরে দেখিস..
দুই ভাই-বোনের হাসাহাসির শব্দ কানে আসতে থাকে।

রাট সাড়ে দশটার দিকে বিত্ত খাওয়া দাওয়া করে তার ঘরে চলে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কোনো এক ডকুমেন্টরি দেখতে বসলো। আমি চুপি চুপি গিন্নি আর দখিনাকে খাবার টেবিলে ডেকে এনে সবাই মিলে কার্ডের ওপর মজার কিছু লিখতে বসি।

কী আশ্চৰ্য!
ছেলেটার আজ চোদ্দ বছর হয়ে যাচ্ছে! সেপ্টেম্বর থেকে সে হাই স্কুলে পড়বে? এই সেদিন না ঢাকার খিলগাঁও’তে সন্ধ্যাবেলা আমার কাঁধে চড়ে রেলগেইটে ট্রেইন দেখতে যেত? তাকে ঘর থেকে বের করলে খুশিতে আটখানা হয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যেত। প্রবল বিস্ময় আর আনন্দে মুহূর্তে মুহূর্তে চড়ুই পাখির মতো মাথা ঘুরিয়ে আশপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতো। ঠোঁটে লেগে থাকতো মিষ্টি একটা হাসি। যেন মহাবিশ্ব জয় করতে চলেছে! তারপর দোকান থেকে একটা ছোটখাটো খেলনা হাতে বাসায় ফিরতো।

রাত বারোটা প্রায় বাজতে চলল!
ছেলেটা কম্পিউটারের সামনে বসা।
আমরা তার জন্মদিনের কার্ড, একটা মোবাইল সেট, একটা সিম কার্ড ছোট একটা গিফট ব্যাগে ভরে অপেক্ষা করতে থাকি পাশের ঘরে। ছেলেটা ইচ্ছে করেই তার ঘর থেকে নড়ছে না।
দখিনা খুব উত্তেজিত!
সে কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছে..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles