11.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

র‍্যাগিংয়ে ধর্ষণের মঞ্চায়ন: রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ছাত্র

র‍্যাগিংয়ে ধর্ষণের মঞ্চায়ন: রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ছাত্র
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত সোমবার প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রদের র‌্যাগিং করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বুধবার ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের পাঁচ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী এক ছাত্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ রাত ছিল সেদিন। আমি হল থেকে পর দিনই নেমে গিয়েছি, আর জীবনে হলে উঠব না। এখন সিনিয়র ভাইদের জন্য ক্যাম্পাসে আসতেও ভয় করে।’

- Advertisement -

এ ভুক্তভোগী বলেন, ‘গত সোমবার হলে উঠেছি। সেদিন রাতে দ্বিতীয় বর্ষের সিনিয়ররা মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর রুমে আমাদেরকে পরিচিত হওয়ার জন্য ডাকেন। আবাসিক তিনটি হলে নতুন ওঠা আমাদের ব্যাচের সবাইকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। ওই রুমে সিনিয়ররা আমাকে ডাকলে প্রথমে যাইনি। পরে তারা আমাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ১০-১৫ জন আমাদের সঙ্গে পরিচয়ের নামে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।’

র‌্যাগিংয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এই ছোট্ট জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সিনিয়ররা আমাদের দুই জনের একজনকে ধর্ষক আরেকজনকে ভুক্তভোগী সেজে অভিনয় করে দেখাতে বাধ্য করেন। এ দৃশ্য করানোর পর ওনাদের মনঃপূত না হওয়ায় এক ভাই বলে ওঠেন, ‘‘তোরা তো ঠিকঠাক একজন আরেকজনকে রেপটাও করতে পারলি না রে!’’ ওই সময় নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছিল। এমন দৃশ্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা পরিবেশে পাব তা জীবনেও ভাবিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে সময় আমার আরেক ব্যাচমেটকে যৌনকর্মী সেজে তার দেহ প্রদর্শন ও খরিদদার ধরার অভিনয় করতে বাধ্য করা হয়। দর-কষাকষির মাধ্যমে একজন যৌনকর্মীর দাম কীভাবে ২ হাজার থেকে ১০০ টাকায় নিয়ে আসা যায় ওই দৃশ্যও করতে বলেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গানের সঙ্গে যৌন উত্তেজক অঙ্গভঙ্গি দেখাতে বাধ্য করেন আমাদের। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যেভাবে ট্রেনে টাকা নেয় তার দৃশ্যেও অভিনয় করানো হয়। এতে একবার অভিনয় করে শেষ হলে আবার বলে সেটা হয়নি পুনরায় করে দেখা।’

ভুক্তভোগী এ ছাত্র বলেন, ‘সিনিয়ররা বলে আমার নাম বলার পর তার সঙ্গে একটা গালি যোগ করে পরে সেটি উচ্চারণ করতে। এরকম অনেকগুলো গালি দিয়ে যৌনতা সম্পর্কিত শব্দ যোগ করে বলতে বলেন। বলতে অস্বীকার করলে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন, পাশাপাশি অবিরাম ধমক দেন।’

তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে থেকে একজন কথা বললেও বাকিরা ভয়ে কথা বলছেন না। তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন এই ভুক্তভোগী।

এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ব্যবসায় প্রশাসনের বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের মো. আপন মিয়া, মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও মো. আশিক হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে বুধবার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ে জড়িত থাকার ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে পাঁচ ছাত্রকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনাটির অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স। র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles