7.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

‘স্থূল দেহ’ নিয়েও বাজিমাত করা যায়, প্রমাণ করলেন এই তরুণী

‘স্থূল দেহ’ নিয়েও বাজিমাত করা যায়, প্রমাণ করলেন এই তরুণী
তানভি গীতা রবিশঙ্কর

সুন্দরী নারীর সংজ্ঞা কী? সুন্দরী তকমা পাওয়ার জন্য চেহারার গড়ন ছিপছিপে হওয়া কী জরুরি? এক সময় এসব ধারণা থাকলেও এখন ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে তা। স্বাস্থ্যবান নারীরাও এখন র‌্যাম্পে হেঁটে অবাক করছেন বিশ্বকে। স্থূল দেহ নিয়েও ফ্যাশন দুনিয়া মাতানো সম্ভব কিংবা ‘পাঠান’র ‘বেশরম রং’ গানের তালে কোমর দুলিয়ে তাক লাগানো যায়। এমনটাই করে দেখিয়েছেন মুম্বাইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটার তানভি গীতা রবিশঙ্কর।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর বলছে, নিজের অতিরিক্ত ওজনকে কখনোই প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি তানভি। সেই চেহারা নিয়েই চারদিকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী এই তরুণী। যিনি দেখতে বলিউড নায়িকা দীপিকার মতো ছিপছিপে নয়। তারপরও তানভির চোখে-মুখে রয়েছে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসীই সুন্দরী করে তুলেছে তাকে।

- Advertisement -

‘পাঠান’ এর ‘বেশরম রং’ গান প্রকাশের পর শুরু হয়েছিল নানা বিতর্ক। সেই একই গানে দীপিকার মতোই পোশাক পরে নেচেছেন তানভি। যার ভিডিও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন তিনি। রিলসটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সোশ্যালে। স্বাস্থ্যবান হওয়ার পরও দীপিকার মতো যেভাবে কোমর দুলিয়েছেন তানভি, তা দেখে অবাক হয়েছেন নেটাগরিকরা।

স্বাস্থ্যবান হওয়ার পরও বিকিনিতে নিজেকে মেলে ধরা যায়, এই আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ তানভি। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস একদিনে অর্জন হয়নি। এ জন্য অনেক বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে তাকে। একটুও দমে না গিয়ে জেদ ও আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে ফ্যাশন দুনিয়ায় মেলে ধরেছেন নিজেকে। ফ্যাশনের প্রতি ঝোঁক ছিল। নানা পোশাক পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও পছন্দ তার। কিন্তু সমস্যা হয় ওজনে। স্থূল দেহ নিয়ে কি ‘ক্যাটওয়াক’ করতে পারবেন?

মনের মধ্যে এই প্রশ্ন থাকলেও এমন সময়ই সুযোগ আসে তানভির। প্রথমবার একটি সংস্থা ‘প্লাস সাইজ’ ফ্যাশন শো’র আয়োজন করে। সেই সুযোগই বদলে দেয় তানভির জীবন। যে চেহারার জন্য কটূক্তি শুনতে হয়েছে, সেই চেরারা সঙ্গী করেই র‌্যাম্প মাতান তিনি। দেখলেন, তার মতো আরও অনেক নারী রয়েছেন। ওই ফ্যাশন শো আরও আত্মবিশ্বাস জোগায় তানভির। তবে এখন অতিরিক্ত ওজন নিয়েই খুশি। প্রথমে এই স্বাস্থ্যের জন্য রাতের ঘুম উড়েছিল তার। ওজন কমাতে নানা চেষ্টা করেছিলেন। তাতে ওজন কমলেও শরীর ভেঙে গিয়েছিল তার।

তানভির পরিবার দক্ষিণী ভারতীয় হলেও মুম্বাইয়ে থাকেন তারা। পুনে শহর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়লেখা শেষ করার পর মুম্বাই ফেরেন তিনি। ইচ্ছা ছিল পেশাদার নৃত্যশিল্পী হবেন। তানভি ছোট থেকে নাচ করতে পছন্দ করতেন। মাত্র ৩ বছর বয়সে নাচ শিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত ওজনের জন্য নাচ নিয়ে বিশেষ কিছু করতে পারবেন না—এমন কথা শুনতে হয়েছিল। এতে একটুও নাচের প্রতি ভালোবাসা কমেনি তানভির।

তানভি নাচ শেখার জন্য ডান্স একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনও কমান। এই ওজন কমানো মোটেও সহজ ছিল না। এক সাক্ষাৎকারে তানভি বলেছেন, ‘যা খেতাম তা বমি করে ফেলতাম। সারাদিন নাচের পর জিমে শরীর চর্চা করতাম। তারপর বাড়ি ফিরে দুটো সিদ্ধ ডিম খেতাম। দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা শরীর চর্চা করতাম। এভাবে ২৫ কেজিন কমে। তাতে আমার শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’

যে কারণে এত কষ্ট করে ওজন কমালেন তাতেও কোনো লাভ হলো না তানভির। ২৫ কেজি ওজন কমানোর পর ডান্স একাডেমিতে যোগ দিতে পারেননি। তাকে আরও ওজন কমানোর জন্য বলা হয়েছিল। তানভি বলেন, ‘সেই সময় প্রায় না খেয়ে থাকতাম আমি। কোনো ধারণাই ছিল না যে আমি ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগছিলাম।’

তবে এসবে ভেঙে পড়েননি তিনি। কষ্ট সহ্য করে নিজের ইচ্ছাপূরণ করছেন এই তরুণী। ইনস্টাগ্রামের রিলসে তার নাচের বিভিন্ন ভিডিও এখন অনেকের মন কেড়েছে।

তানভি স্বাস্থ্যবান হওয়ার পরও স্যুইমসুট পরেন। এ নিয়ে সমালোচনা হলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করেন না তিনি। ২০১৭ সালে প্রথমবার বিকিনি পরেন। তারপর থেকে চেহারা নিয়ে থাকা ভীতি কেটে যায় এই ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটারের। তার ভাষ্যমতে, শরীরের গড়ন নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগা ঠিক নয়। যা কিছু ভাববেন, তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করুন। ওই আত্মবিশ্বাসই ধরা পড়বে আপনার চেহারায়।

অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান এই তরুণী মোহময়ী হতে পারেন না, সেই ধারণা বদলে দিতে বার্তা দিয়েছেন। তানভির মতে, স্বাস্থ্যবান মানুষরা হট নন, এটা একদমই ভুল ধারণা। কাকে লাস্যময়ী লাগছে, সেটা মনের ব্যাপার। চেহারার ব্যাপার নয়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles