4.8 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

বাংলা মাইন্ড টেনশন

বাংলা মাইন্ড টেনশন
ফাইল ছবি

মানুষের টেনশনের শেষ নাই। একটা শেষ হলে আরেকটা গজায় ছত্রাকের মতো। চেইন অব টেনশনের একটা পার্ট শুধু বলবো আজকে। এই পার্টের শুরু কানাডা ব্যাক করা থেকে। যাত্রা পথে কোনো কারণে যদি রোড বন্ধ পাই? আর কল্যাণপুর পৌঁছালেও যদি ট্যাক্সি না পাই?

মাঝ পথে হোটেলে খেতে বসে আমাদের রেখেই বাস স্টার্ট দিয়ে এগুতে থাকা ছাড়া আর তেমন অঘটন বাদেই ধানমন্ডি পৌঁছে আরেক টেনশন; এয়ারপোর্টে যদি সময়মত যেতে না পারি? বিশ্ব ইজতেমা শুরু, স্বাভাবিক কারণেই জ্যাম বেড়ে যাচ্ছে। শুনেছি কেউ কেউ নাকি ফ্লাইট মিসও করেছে!

- Advertisement -

বাসা থেকে আগে বেরিয়ে সহি সালামতে প্লেনে উঠেও স্বস্তি নাই। আকাশপথ যদিও খুব নিরাপদ; ট্রেন-কারের চাইতেও। তবুও যদি কোনো অঘটন ঘটে? মিলিয়ন ভাগের এক ভাগে পড়া হতভাগ্য যাত্রী যদি আমি হই? আবার, সৌভাগ্যক্রমে আহত হয়ে প্লেন থেকে ইমার্জেন্সী ডোর দিয়ে হুটোপাটার মধ্যে যদি বের হতে না পারি? ইমার্জেন্সী ল্যান্ড করার পর যদি আগুন লাগে, তখন সর্বোচ্চ ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে বের হতে না পারলে পুড়ে মরার সম্ভাবনাই বেশি। বিত্ত’র কাছ থেকে শেখা।

দুবাই ট্রানজিটে নেমে বিরাট চ্যালেঞ্জ; দুই ঘন্টারও কম সময়ে টার্মিনাল ১ থেকে টার্মিনাল ৩ তে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। এতগুলা সিকিউরিটি পেরিয়ে, দৌড়ে, হেঁটে, ফ্লোর চেঞ্জ করে পৌঁছানো মানে বিরাট কর্ম। অনেকের ধারণাও নাই দুবাই এয়ারপোর্ট কত বড় হতে পারে। ভাগ্য ভাল, দুবাইতে নেমেই দেখি এয়ার কানাডার লোকজন দাঁড়িয়ে; তাদের টেনশন যেন আমাদের চাইতেও বেশি। প্রায় পঞ্চাশজন বাঙালিকে ভেড়ার পালের মতো তাড়িয়ে দ্রুত পথ দেখিয়ে বাসে তুলে, হাঁটিয়ে শেষ মুহূর্তে ঠিকই তুলে দিলো প্লেনে।
.
ওদিকে চৌদ্দ ঘন্টা একটানা জার্নি করে টরন্টো পৌঁছে আরেক ফ্যাসাদ। তীরে এসে তরী ডুববে না তো? অটোয়ার প্লেনের মাত্র ঘন্টাখানেক বাকি। কীভাবে সিকিউরিটি, ইমিগ্রেশন পেরিয়ে প্লেন ধরবো? তার উপর লেগেছে বাথরুম। আমি বাথরুমের কথা বলতেই বিত্ত যে চোখে তাকালো ভাই রে ভাই..! বিজ্ঞের মতো বলল- আব্বু, আমি হলে এই সিচুয়েশনে জীবনেও ওয়াশরুমে ঢুকতাম না, মরে গেলেও না। প্লেন ফেল করলে তোমার খবর আছে..

ছেলের বকাঝকা আর রক্ত চক্ষু সহ্য করে শেষ মুহূর্তে অটোয়ার প্লেনে চড়ে বসেও রক্ষা নেই। দেরি করে প্লেনে চড়ার সবচাইতে বড় ভোগান্তি হলো হ্যান্ড লাগেজ রাখার জায়গা না পাওয়া। তখন সারা প্লেন খুঁজে বেড়াতে হয় কোথায় বক্স খালি আছে..। এসব দেখে ছেলেটা আমাকে যা শুনালো.. থাক দুঃখের কথা আর না বলি। সব নাকি আমার হিসু করতে যাবার ফল…
এক ঘন্টার মধ্যেই রাজধানী পৌঁছে গিয়ে সবচাইতে বড়ো টেনশনের মধ্যে পড়লাম। সাতজনের লাগেজ আর কেবিন হ্যান্ড লাগেজের জন্য সাত-আট সিটের ভ্যান মাস্ট। ভ্যানআলা আসবে তো? যদিও তামিল টাইগারটাকে আগ থেকে বলে রেখেছিলাম। শেষ মুহূর্তে যদি ফোন না ধরে? তারচাইতেও বড়ো টেনশন বাড়িটারই বা কী অবস্থা? অটোয়ায় যত স্নো দেখছি, বাসায় ঢোকা যাবে তো? এক মাস দশ দিনের বরফ। বাসায় যদি ঢুকতেও পারি, প্রথম দিন এটা-সেটা খেয়ে কাটিয়ে দিলেও পরের দিন বাজারে যেতেই হবে। গাড়ি বের করতে পারবো তো? যদি স্টার্ট না নেয়? পাৰ্কিং এর মাজা পরিমান স্নো বেলচা দিয়ে সরাতে প্রাণ বেরিয়ে যাবে।

ভ্যানে চড়ে বসতেই বিশাল গোঁফআলা, গাট্টাগোট্টা তামিল টাইগার জিজ্ঞেস করল, তোমাদের বাসার ড্রাইভওয়ের স্নো সরানো আছে? এতগুলো লাগেজ আর তোমরা বাসায় ঢুকবে কিভাবে?
আচ্ছা, বাড়ির ইনডোর গাছগুলো কি বেঁচে আছে? বাংলাদেশ যাবার আগে টবে ভর্তি করে পানি দিয়ে এসেছিলাম। হয়তো পানিতে ডুবেই ওগুলোর মৃত্যু হয়েছে? আহা, কত শখের..
বাসার সামনে এসে দেখি বাড়ির আশপাশ, ছাদ, সামনের পার্কিং, ঢোকার রাস্তা; সব কোমড় পর্যন্ত স্নো তে ভরা। দরজা খুলে যদি দেখি বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে বরফের পানিতে সব ভেসে গেছে? কিংবা কোনো নেশাখোর আস্তানা গেড়ে নিজের বাড়ি বানিয়ে গঞ্জিকা, সিগারেট, মুরগি খেয়ে ছাই-মুতা-হাড়গোড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেনি তো? চোর-ডাকাত?

থাক ভাই, এসব চিন্তাও করতে চাই না। অবশ্য বাসায় ডাকাত এসে খুব হতাশ হবে। গরিব হওয়ার বিশেষ সুবিধা হলো চুরি/ডাকাতি নিয়ে টেনশন নাই। গ্যারেজ খুলে গাড়ি নিয়ে গেলেও বিক্রি করে খুব একটা জুৎ পাবে না; শুধু শুধু সময় নষ্ট। তবে শুনেছি হতাশ ডাকাত নাকি ব্যর্থ হাইজ্যাকারের মতোই ভয়াবহ!
বাইরে মাইনাস ষোলো ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কোনরকমে পাশের বাড়ির জায়গা দিয়ে বাসায় ঢুকে স্নো বুট আর ভারী জ্যাকেট গায়ে দিয়ে বেলচা হাতে বাইরে এসে স্নো সরিয়ে চলার মতো আপাতত শুরু রাস্তা বানিয়ে বউ-বাচ্চা আর লাগেজগুলো বাসায় ঢুকিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

মানুষের টেনশনের আসলেই কোনো শেষ নাই।

পরশুদিন থেকে অফিস যাবো। গিয়ে যদি দেখি বস ডেকে দরজা ভিড়িয়ে, কফি খাইয়ে শান্ত গলায় বলে- জাভিড, তুমি আমাদের একজন ভালো কর্মী তাতে কোনো সন্দেহই নাই। তোমার অতিরিক্ত অনুপস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়েই আরেকজনকে নিতে বাধ্য হয়েছি। তোমার অবশ্য তাড়াহুড়ার কিছু নেই, আরেকটা জব না পাওয়া পর্যন্ত না হয়..।
.
থাক বাবা, ওসব অলক্ষুনে কথা চিন্তাও করাও পাপ। যে হারে গ্যাস-ইলেক্ট্রিসিটির দাম আর মর্টগেজের রেট বেড়ে চলেছে, ওরকম কিছু হলে সাড়ে সর্বনাশ! এমনিতে বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়..
.
রান্নাঘরে ঢুকে দেখি পেঁয়াজগুলো থেকে গাছ বেরিয়ে গেছে। একটা ডিম ভুলে বাইরেই রেখে গিয়েছিলাম। এদেশে ডিম সার্বক্ষণিক ফ্রিজে রাখা হয়। ডিমটা খেয়ে দেখবো না কি? এক মাস দশদিন পর ডিম ঠিক থাকে? ফ্রিজে ডিম আছে, ওটাকে নিয়ে কাল সকালে গবেষণা করে দেখবো। গিন্নি যাবার আগে ডিপ ফ্রিজে গরু ভুনা করে রেখেছিল বলে রক্ষা।
.
ষোলো ঘন্টা টানা ঘুম দিয়ে সকালে উঠে দেখি বাড়ির সামনের স্নো সরিয়ে কেউ একজন গাড়ি রেখেছে সারা রাত। তারমানে আমাদের অনুপস্থিতিতে হয়তো প্রায়ই সে এরকম করতো? অবশ্য আমরা এসেছি টের পেলে কেটে পড়বে। মাঝে ফাউ ফাউ বরফ সরানোও হয়ে গেলো! গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেখবো? যদি ইঞ্জিন সাইন উঠে, তখন আবার বিরাট খরচ।
.
রান্নাঘরে ঢুকে চুলোয় প্যান চড়িয়ে সেই পুরানো ডিমটা হাতে তুলে নিয়ে টেনশন করতে থাকি; ভাঙলে কী দেখবো? পচা পাব?
খাওয়া যাবে তো?…

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles