5.1 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

কল্পনাকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ কে দেবে?

কল্পনাকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ কে দেবে?

মা-বাবা ছাড়া সন্তানের জীবন কতটা কষ্টের হতে পারে, নওগাঁর ১৩ বছরের কিশোরী কল্পনার (ছদ্মনাম) অবস্থা তাই বলে দিচ্ছে। ১০ বছর আগে তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। চট্টগ্রামে বাবা ও ফরিদপুরে মা নতুন সংসার শুরু করেন। একা হয়ে যায় মেয়েটি। কেননা, বিচ্ছেদের পর তারা কেউই ছোট্ট মেয়েকে আশ্রয় দেয়নি। তাই নানির কাছে বড় হতে থাকে সে। নানিও একদিন তাকে অন্যের বাসায় ‘কাজের বুয়া’ হিসেবে রাখে। সেখানেও বিভীষিকায় ভরে ওঠে তার জীবন।

- Advertisement -

রাজশাহীতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম কবিরের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে রাখা হয়েছিল কল্পনাকে। এই অধ্যাপকের দাবি, চার হাজার টাকা বেতনে গত পাঁচ মাস ধরে তার বাসায় কাজ করছে মেয়েটি।

কল্পনার নানির আশা ছিল, শিক্ষকের বাসায় ১৩ বছরের মেয়েটি ভালোই থাকবে। অন্তত থাকা-খাওয়ার আশ্রয়টুকু তো জুটবে! কিন্তু কল্পনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) দেওয়া একটি চিঠি জানিয়ে দিচ্ছে, কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটির সময়।

ওই শিক্ষকের বাসায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কল্পনা। সে এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি। সেখান থেকেই গত ৯ জানুয়ারি ডিসির কাছে চিঠি লেখে মেয়েটি। সেই চিঠিতে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চেয়েছে সে।

চিঠিতে কল্পনা লেখে, রাজশাহীতে গোলাম কবির নামের একজনের বাসায় কাজের জন্য তাকে রেখে আসে তার নানি। সেখানে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। প্রায় সময় তার গায়ে হাত দেওয়া হয় (যৌন নির্যাতন)। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭ নম্বর বেডে (পরে ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। গোলাম কবির তাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল থেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মেয়েটি ডিসির কাছে অনুরোধ জানায়।

মানুষের প্রয়োজনে সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সমাজের ‘স্তম্ভ’ বলা হয় শিক্ষকদের। তারাই সমাজের ‘আলোকবর্তিকা’। শিক্ষকের জ্ঞানের আলোয় পুরো পৃথিবী আলোকিত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা আমাদের সামনে আসে, যা মানুষের সব ধরনের স্বাভাবিক চিন্তাকে থামিয়ে দেয়।

শিক্ষকের বাসা থেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে কল্পনার বেড়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তার কাছে সেই বাসাটি এখন ‘অন্ধকার নরক’। সেই অন্ধকারে সে ফিরতে চায় না। মা-বাবা থেকেও নেই, তাই ‘নিরাপদ আশ্রয়’ খুঁজছে সে। এই সমাজ কি তাকে সেই ‘নিরাপদ আশ্রয়’ দিতে পারবে?

সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তার মা-বাবা। তাদের বিচ্ছেদ যে একজন সন্তানের জীবন কতটা কষ্টে ফেলতে পারে, কল্পনা তার বড় উদাহরণ।

জনশুমারি-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। দেশের মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় বিবাহ বিচ্ছেদের হার (তালাকপ্রাপ্ত) শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। (সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, জুলাই ২৭, ২০২২)

এই সংখ্যাতাত্তিক বিশ্লষণ করলে হয়তো মূল সংকটে পৌঁছানো যাবে না। কিন্তু একটি পরিবারে মা-বাবার বিচ্ছেদ যে তার সন্তানের জীবনকে নরক করে দেয়, তা সহজেই অনুমেয়। অনেকে সন্তানের মন্দ জেনেও বিচ্ছেদ করেন, আলাদা হয়ে যান। হয়তো সবার ভাগ্য কল্পনার মতো নয়। অনেক শিশু বিচ্ছেদের পরও তাদের মা-বাবাকে পাশে পান। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা আর সুন্দর থাকে না। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই তাকে বড় হতে হয়।

শিক্ষকের বাসায় কল্পনার সঙ্গে কী ঘটেছে, তা খুঁজে বের করার দায় প্রশাসনের। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা খতিয়ে দেখবে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনবে। কল্পনার জন্য এই পৃথিবী আবার সুন্দর হয়ে ওঠুক। সব নারী-শিশুর জন্য এই সমাজ হোক ‘নিরাপদ আশ্রয়’। কল্পনাও বেড়ে ওঠুক সেই ছায়ায়।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles