9 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

যত গর্জে ততো বর্ষে না

যত গর্জে ততো বর্ষে না
ফাইল ছবি

আমি দেশ ছেড়েছি বেশ কয়েকযুগ আগে। যখন দেশ ছেড়েছি তখনকার সময়ের সাথে এখনকার তুলনায় যদিও অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ণ হয়েছে কিন্তু মানুষের মূল্যবোধ বা অন্তরের তেমন কোনো উন্নয়ণ হয়নি। বরং দেশের খাবরাখবরে যা দেখা যায় তাতে অবনতিই হয়েছে।
আমি জানি না হুজুগে বাঙালি শব্দগুলি কে আবিষ্কার করেছিলেন। যেই করুক না কেন, তার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতেই হয়।
আমরা যত দুঃখে, কষ্টে, দুর্দশায় থাকি না কেন আমাদের হুজুগের কমতি নেই।

নিঃসন্দেহে পদ্মা ব্রিজ বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এবং এতে ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অনেক সুবিধা হয়েছে। তবে এই ব্রিজ উদ্বোধনের আগে ব্রিজের কারণে দক্ষিণাচলের মানুষের উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছিলো। কিছু মানুষের কথাবার্তায় মনে হচ্ছিলো ব্রিজ হওয়ার পরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি মানুষ যেন মিলিয়ন ডলারের লটারি পাওয়ার মতো জীবন বদলে ফেলবেন। বেশ কয়েকমাস তো হয়ে গেলো, আমার জানতে ইচ্ছা করে যেই পরিমানের হুজুগ ছিল সেই পরিমানের কোন কোন মানুষের (সাধারণ মানুষ) ভাগ্য বদলে গেছে।

- Advertisement -

আমার বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে, আমার নিজের পরিবারের বা আমাদের আত্মীয়স্বজনের এই ব্রিজের কারণে কোনো রকমের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। হাঁ, ঢাকা থেকে আসতে এখন বেশি সময় লাগে না, ফেরি পারাপারের উপর নির্ভর করতে হয় না, সেটা ঠিক আছে কিন্তু কারো ভাগ্যের কোনো রকমের পরিবর্তন হয়নি। আর আমি আমার নিজের বা আমার পরিবারের কারো যদি কোনো রকমের উন্নতি না হয় তাহলে যত ধরণের উন্নতিই হোক না কেন আমার সেই পরিমানের হা হুতাশ বা হুজুগ নেই।
যেমন ধরুন আমার একটি বোন থাকতো নোয়াখালীতে, সেখানে সে তার একটি ছেলে এবং স্বামী সহ মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল, কিন্তু দুৰ্ভাগবশতঃ ২০১৭ সালে তার বরের একটি এক্সিডেন্ট হয়ে, তারপর মাস খানেক ঢাকায় চিকিৎসার পরে বাড়ি যাওয়ার পরে হার্ট এটাক করে মারা যায়। তারপর তাদেরকে তাদের নোয়াখালীর সংসার শেষ করে দেশে চলে আসতে হয়। বর্তমানে তারা আমাদের বাড়িতেই থাকে।

তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এই পর্যন্ত তার ছোট খাটো একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু কোনো ফলাফল নেই। আমরা আহামরি তেমন কিছু চাই না, শুধু তার যোগ্যতা অনুযায়ী ছোটোখাটো একটি কিছু হলেই হয়, যাতে করে সে মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারে।
কিন্তু না, তেমন কিছুই হচ্ছে না। আমরা দেশে নেই, তাছাড়া আমরা দেশে সক্রিয়ভাবে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না অথবা আমাদের কোনো হোমরা চোমড়ার সাথে সক্ষতা নেই সে জন্যে হয়তো কিছু হচ্ছে না, কিন্তু সেটা কি হওয়া উচিৎ।

আমর কাছে উন্নয়নের বাতাস তখনি আসবে যখন এই জাতীয় সমস্যার সমাধান আসবে। উন্নয়নের যত সূচক দিয়ে যত উপরে উঠান না কেন তাতে কি আমার এই বোনের মতো আরো অসংখ মানুষের বিন্দুমাত্র কাজে আসবে ? সেই জন্য বললাম যত গর্জে ততো বর্ষে না, মনে হচ্ছিলো ব্রিজের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ তাদের জীবন উন্নয়নের ঠেলায় ভেসে যাবে। আমাদেরকে এই জাতীয় হুজুগ কমাতে হবে।

আমি এই কানাডাতে আছি বেশ কয়েকবছর ধরে। প্রফেশনালি কাজ করছি ১৫/১৬ বছর ধরে। এই সময়ের মধ্যে সরাসরি ভাবে মেন্টোরিংয়ের মাধ্যমে ৫০উর্ধ মানুষকে তাদের প্রফেশনাল চাকরির ব্যাপারে সাহায্য করেছি এবং আল্লার রহমতে তারা অনেক ভালো আছেন। এদর অনেকেই এক সময় সরকারকে মাসে ৩/৪০০ ডলার ট্যাক্স দিতেন এখন তারা মাসে ১/২০০০ ডলারের মতো ট্যাক্স দেন। আর যদি পরোক্ষভাবে বলেন তাহলে আল্লাহর রহমতে শতাধিক মানুষকে তাদের প্রফেশনাল (আমার ফিল্ডে) চাকরির ব্যাপারে সহায়তা করতে পেরেছি। এখন ব্যস্ততার কারণে আগের মতো আর সময় পাই না। তবে এই জাতীয় সাপোর্টের জন্য কাউকে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হয়নি, বা কোনো টাকা পয়সা দিতে হয়নি বা তাদেরকে কোনো হোমরা চোমরা ধরতে হয়নি। যে যার যোগ্যতামোতো পেয়েছেন। তাদের শুধুমাত্র কিছু গাইডেন্স দরকার ছিল, আমি সেটাই provide করেছি।

উপরে কথাগুলি বলার কারণ হলো, যে এখানে আমার ক্ষুদ্র সামর্থ দিয়ে এতগুলি মানুষের যতদূর পারি সাপোর্ট দিতে পেরেছি কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার জন্মদেশে আমার বোনের জন্য ছোটোখাটো কিছু হওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই, যদিও চোখের সামনে অযোগ্য অনেকেরই অনেক কিছু হতে দেখছি। সেই জন্য ঐসমস্ত হুজগে কথা শুনলে আমার ভালো লাগে না।

কথাগুলি আমার মনের কথা, বা আক্ষেপ বলতে পারেন। আমার বাপ যখন আমাদেরকে ফেলে ৯ মাস যুদ্ধে ছিলেন, নিশ্চয় তিনি বা তার সঙ্গীরা এই অবস্থা কামনা করেননি।

আশা করি চলমান অবস্থার অবসান হবে।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles