1.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

দশ ও সাতাশ দফা নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি

দশ ও সাতাশ দফা নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি

সরকার পতনসহ ১০ দফা এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যাচ্ছে বিএনপি। এ জন্য ৩৮ জন নেতার নেতৃত্বে ৫৯টি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম তৃণমূলের নেতাকর্মী ও দলের সমর্থনকারী পেশাজীবীদের কাছে ১০ দফা এবং ২৭ দফার আইনি ও রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ তুলে ধরবে। এরপর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দফাগুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন সাধারণ মানুষের কাছে।

- Advertisement -

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি কেন ১০ দফা ও ২৭ দফা দিয়েছে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চাই আমরা। আওয়ামী লীগ সরকার যেসব দুর্নীতি-দুঃশাসন, প্রতিহিংসা ও দখলের রাজনীতি করেছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তা করবে না। এটি দলীয় কর্মীসহ সবাইকে বোঝাতে হবে। সে লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে গণঅবস্থান আগামী ১১ জানুয়ারি। মাঝের এই সময়টাতে নেতাকর্মীরা যেন ঝিমিয়ে না পড়েন, সে লক্ষ্য থেকেও এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

১০ ডিসেম্বর ১০ দফা এবং ১৯ ডিসেম্বর ২৭ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। সূত্রের খবর, এ নিয়ে সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে দলের নেতারা বলেন, দেশের প্রচলিত রাজনীতিতে একটা কথা চালু আছে, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই ক্ষমতায় যাক বা থাক মুখে পরিবর্তনের কথা বললেও ক্ষমতায় গিয়ে তার উল্টোটা করে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে দমনপীড়ন, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিসহ নানা আইনবহির্ভূত কর্মকা-ের বিস্তর নজিরও রয়েছে। এক্ষেত্রে শাসন ব্যবস্থার কার্যকর পরিবর্তন আনতে গেলে নেতাকর্মী-সমর্থকদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকের পর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও দলের মিডিয়া সেলের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং টকশোতে অংশ নেওয়া দলীয় নেতা ও ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন। এ বৈঠকেও ১০ দফা ও ২৭ দফার পক্ষে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সিনিয়র নেতারা।

গত শনিবারও গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সামনে ১০ দফা এবং ২৭ দফার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সিনিয়র নেতারা; বক্তব্য দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নিতাই রায় চৌধুরী ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জেলা ও মহানগর কমিটিকে একটি নির্দিষ্ট দিনে কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। সেখানে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি একদিকে কেন্দ্রীয়, অন্যদিকে উপজেলা, পৌরসহ বিভিন্ন কমিটির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমন্ত্রণ জানানো হবে পেশাজীবীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেই কর্মসূচিতে ১০ দফা ও ২৭ দফা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরবেন যেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। এর পাশাপাশি তৃণমূলের যৌক্তিক কোনো মতামত থাকলে, তাও গ্রহণ করা হবে।

মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিএনপির ২৭ দফা সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যারা বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। এ বৈঠকে ২৭ দফা রূপরেখা সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, তারাও জনগণকে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন। এ ছাড়া রূপরেখার পক্ষে-বিপক্ষে যেসব মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে, সেসবও সংগ্রহ করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচিতে যৌক্তিক কোনো মতামত পাওয়া গেলে আমরা তা আমলে নিয়ে প্রস্তাবিত রূপরেখা আরও সমৃদ্ধ করব।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ ও ২৭ দফার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে গতকাল রবিবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সরকার পতনে ঘোষিত আন্দোলনের ১০ দফা এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফার বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাসভার আয়োজন করতে হবে।

বিএনপির জেলা বা মহানগরের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ, সাবেক এমপি, জেলা মহানগর কমিটির সব নেতা, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের শীর্ষপর্যায়ের ৫ নেতা, সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা বা মহানগরের ৫ জন এবং পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের এ সভায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা হয়েছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা এবং সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরের নেতাদের এ কর্মসূচির সার্বিক সমন্বয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রের চিঠিতে আরও যেসব নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১০ দফা ও ২৭ দফার রূপরেখা স্থানীয় পর্যায়ে ছাপাতে বলা হয়েছে। এরপর এগুলো সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পেশাজীবী-ধর্মীয় নেতা, সাংস্কৃতিক-মানবাধিকার কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বিতরণ করতে বলা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে ১০ দিন বিতরণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জনসভা, কর্মিসভা, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১০ দফা ও ২৭ দফার পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে তৃণমূল নেতাদের।

আজ সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কর্মসূচি শুরু করবেন। প্রথমদিন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এ সংক্রান্ত সভা হবে। উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে বেলা ৩টায় কর্মসূচি শুরু হবে।

ড. মোশাররফ হোসেন আগামী ৫ জানুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে ৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ১০ জানুয়ারি রাজশাহী জেলা ও মহানগরের কর্মসূচিতে থাকবেন গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। ড. আবদুল মঈন খান ৩ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ, নজরুল ইসলাম খান ৮ জানুয়ারি কুমিল্লা, মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর, ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও, ৪ জানুয়ারি নীলফামারী এবং সৈয়দপুরের কর্মসূচিতে থাকবেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ৩ জানুয়ারি জামালপুর, ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের কর্মসূচিতে থাকবেন। সেলিমা রহমান থাকবেন ঢাকা জেলার কর্মসূচিতে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু থাকবেন ৮ ও ৯ জানুয়ারি বগুড়ার কর্মসূচিতে। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles