দুই বছর ধরে চালানো এক তদন্তে বিখ্যাত ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে না বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেখানে অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে শুধু তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং অনেকের বিরুদ্ধে এমনকি কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয় না।
আল জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট (আই-ইউনিট) এর চালানো ওই তদন্তে দুইজন অধ্যাপককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা বলেছেন যে তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে যৌন নিপীড়ন এবং মাতাল আচরণ করেছেন। খবর দেশরূপান্তরের।
এ তদন্তে আরও ফাঁস হয় যে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদেরকে শিক্ষকদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে পারে না।
‘যৌন শিকারী হিসেবে ব্যক্তিগত কুখ্যাতি’
এই বছর ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে অর্জন করা অক্সফোর্ডে অ্যান্ডি অর্চার্ড নামে একজন অধ্যাপক আছেন যিনি অ্যাংলো স্যাক্সন পড়ান। তার পূর্বসূরিদের মধ্যে একজন ছিলেন জে আর আর টলকিয়েন, যিনি হবিট এবং লর্ড অফ দ্য রিংস লেখার সময় একই পদে ছিলেন।
অর্চার্ডের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল অক্সফোর্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং সেখানেই ১৯৯০-র দশকে দুই নারী তাঁর নিপীড়নের শিকার হন। ওই দুই নারীও এখন অত্যন্ত সম্মানিত শিক্ষাবিদ।
তাদেরই একজন বর্তমানে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ফাইন আর্টের প্রধান অধ্যাপক ক্যাথরিন কার্কভ বলেন, ‘তার একাডেমিক খ্যাতি ছিল অনেক উচ্চ, তার ব্যক্তিগত খ্যাতি ছিল মদ্যপ এবং যৌন শিকারী। তিনি তার অফিসের পরিবর্তে মদের পাবে সভা করতেন, তাই তিনি মিটিংয়ের সময় অনেকবার মাতাল হয়ে পড়েছিলেন’।
ওই দুই নারীর আরেকজন লন্ডনের কিংস কলেজে বর্তমানে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক অনন্যা কবির তার পিএইচডি করার জন্য কেমব্রিজকে বেছে নিয়েছিলেন যাতে তাকে অর্চার্ডের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। অর্চার্ড মধ্যযুগ বিষয়ে একজন পণ্ডিত হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
তিনি বলেন, আরেকজন স্নাতকোত্তর নারী শিক্ষার্থী অর্চার্ডের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করার পর অর্চার্ড সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল। ওই নারী শিক্ষার্থী তাকে বলেন যে, অর্চার্ডের সঙ্গে তিনি যৌন সম্পর্কে আছেন এবং ভবিষ্যত পরিণতির ভয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না।
কবির বলেন, ‘এই ধরণের সম্পর্ক দুঃস্বপ্নের মতো। এটি একটি সম্পূর্ণ অসম ক্ষমতার সম্পর্ক। আপনার পিএইচডি সুপারভাইজার হলেন আপনার পুরো পৃথিবী’।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আল জাজিরার আই-ইউনিটের তদন্তে শিক্ষকদের এই ক্ষমতার অপব্যবহার খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক ছাত্রীই তাদের পুরুষ সুপারভাইজারদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যেতে বাধ্য হয়। কারণ একাডেমিতে তারাই তাদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের গেটকিপার। সুপারভাইজারদের সুপারিশ ছাড়া চাকরিতে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
কবির এবং কারকভ বলেন যে, তারা অর্চার্ডের ওই যৌন নিপীড়ন এবং তার মদ্যপানের বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা সিনিয়র শিক্ষাবিদদের কাছে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।