7.3 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি, হাসপাতালের অতি গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি বিভাগের মিনি ওটিগুলো চলছে মোবাইল ফোনের টর্চ লাইট ও মোমবাতির আলোয়। দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ আছে সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা। এমন দুরবস্থা আগামী সপ্তাহ জুড়ে চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

- Advertisement -

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বি ব্লকের নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এতে প্রথম তলায় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব, বঙ্গবন্ধু ক্লাব ও যুব রেড ক্রিসেন্ট এবং মানসিক ওয়ার্ডের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ওই ব্লকের দ্বিতীয় তলার গুরুত্বপূর্ণ রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ আছে সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা। বি ব্লকের তৃতীয় তলায় মেডিসিন-১ ইউনিট, চতুর্থ তলায় মহিলা মেডিসিন-১, ২, ৩ ও ৪ ইউনিটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে হাসপাতালের বি ব্লকের মতো জি ব্লকের প্রথম তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সেই থেকে ওই ব্লকের প্রথম তলার মেডিসিন আউটডোর, টিকাদান কেন্দ্র, গাইনি বহির্বিভাগ, জেনারেল স্টোর কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। সেই জি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় গাইনি পেয়িং বেড, তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলায় সার্জারি ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ইউনিট এবং ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার জি ব্লকের তৃতীয় তলায় সার্জারি-২ ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীরা আছেন অন্ধকারে। ওই ইউনিটে শুক্রবার ছিল রোগী ভর্তির রোস্টার। কোনো শয্যা খালি নেই। নতুন রোগী ভর্তি হলে তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে মেঝেতে। সেখানেও অন্ধকার। রোগী ও তাদের স্বজনরা মোবাইল ফোনের টর্চ ও মোমবাতি আলোয় চলাফেরা করছেন। এমনকি নার্স ও চিকিৎসকরা মোবাইলের টর্চ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

সার্জারি-২ ইউনিটের ইনচার্জ নার্সিং কর্মকর্তা রিতা বাড়ৈই বলেন, ‘সকালে আমরা যারা উিউটিতে এসেছি, তাদের মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ মোবাইলের টর্চ অন করে কাজ করতে হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এ অবস্থা বিরজ করছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের পাশাপাশি আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অন্ধকারে চুরিও বাড়ছে।’

একই ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিক্যাল অফিসার মো. সৈকত বলেন, ‘বুধবার আমাদের ইউনিটে রোগী ভর্তির দিন। সকাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। জরুরি ভিত্তিতে তাদের অপারেশন করা প্রয়োজন। কিন্তু, বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের অপারেশন করা খুবই দুরুহ। বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ কিংবা মোমবাতির আলোতে অপারেশন করছি।’

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম জানান, গত ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে হাসপাতালের ভেতরে অস্বাভাবিকভাবে পানি প্রবেশ করে নিচ তলার প্রায় দুই ফুট প্লাবিত হয়। এ কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে (মাটির নিচে) বিদ্যুৎ সংযোগের তার বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ওই সময় (২৫ অক্টোবর) দুটি ফেজ পুড়ে যায়। ফলে, হাসপাতালের বি ব্লকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। মেরামতের পর ওই ফেজ ঠিক হলেও তা স্থায়ী হয়নি। গত ৯ নভেম্বর বিকেলে জি ব্লকের ফেজ দুটি বিকল হয়। জোড়া-তালি দিয়ে এই চারটি ফেজ মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

তিনি আরও জানান, এই হাসপাতালের বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। প্রতিষ্ঠাকালে এই হাসপাতালের সব বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ থেকে নেওয়া হয়েছিল। বয়সের কারণে লাইনের তারগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। তাই, এখন আর মাটির নিচ থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হবে না। ভবনের ভেতরেই সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু, এ কাজে অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন।

মো. ফিরোজ আলম বলেন, ‘বর্তমানে যে দুটি ব্লকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেগুলো মেরামত করতে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। আশা করি, চলতি সপ্তাহে মেরামতের কাজ শুরু হবে। তবে, আগামী সপ্তাহ ছাড়া এ সমস্য সমাধান সম্ভব নয়।’

হাসপাতালে টর্চ-মোমবাতির আলোয় চলছে চিকিৎসা

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের জি ও বি ব্লকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ফলে, ওই দুই ব্লকে মেডিসিন, সার্জারি, ডেন্টাল, মানসিক ও রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। জরুরি ভিত্তিতে ওই ওয়ার্ডগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করতে গণপূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছে। কিন্তু, এ কাজ করতে সময় প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেছে।

সূত্র : রাইজিংবিডি

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles