6.3 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ : বিড়াল খুলে দিল রহস্যের দরজা!

প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ : বিড়াল খুলে দিল রহস্যের দরজা!
নিহত শিক্ষক দম্পতি একেএম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার জলি

একেএম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার জলি, শিক্ষক দম্পতি। গাজীপুরের দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় গত ১৮ আগস্ট নিজেদের প্রাইভেটকারেই মেলে তাঁদের নিথর দেহ। দু’জনের কারও শরীরে ছিল না আঘাতের কোনো দাগ। তদন্তে নেমে পুলিশের একাধিক সংস্থা প্রায় আড়াই মাস জোড়া লাশের রহস্য খুঁজতে খুঁজতে হয়রান!

শুরু থেকেই একটি ‘ধারণা’ তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের মাথায় গেঁথেছিল- ওই দম্পতির মৃত্যু হতে পারে গাড়ির ভেতরে নির্গত বিষাক্ত কোনো গ্যাস থেকে। সম্প্রতি ওই প্রাইভেটকারে একটি বিড়াল ঢোকানোর পরই সেটি ছটফট শুরু করলে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের সেই ‘ধারণা’ নতুন মাত্রা পায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিড়ালটি মরমর পরিস্থিতিতে পড়লে সেটিকে দ্রুত বের করে আনা হয়। বিষাক্ত গ্যাসের ক্রিয়ায় বিড়ালের রীতিমতো মরণদশা হয়েছিল।

- Advertisement -

বিড়ালবাজিতে জিতে তদন্তে ফেরে প্রাণ। এখন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিড়াল-সূত্র ধরে এগোলেই খুলতে পারে দম্পতি মৃত্যুর রহস্যের দরজা।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিড়াল ঘিরে এমন রহস্য ভেদ হওয়ার পর গাড়ির ভেতর-বাইরের নানা আলামত পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।

রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন পুলিশের এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, গাড়ির ফুয়েল সিস্টেমে ত্রুটি থাকলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। গাড়িতে কোনো কারণে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হলে যাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটবে। কোনো জায়গায় অক্সিজেন কম থাকলে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরির শঙ্কা থাকে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়ির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাড়ির ভেতরের গ্যাসজনিত কিছু ত্রুটি মিলেছে। এ কারণে শিক্ষক দম্পতি মারা গেছেন কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গাড়ির এসি ও গ্যাসের আরও বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে পুলিশ। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিড়ালকে ওই প্রাইভেটকারে ঢোকানোর বিষয়টি মাথায় আসে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের। বিড়াল গাড়িতে ঢুকে ছটফট করতে থাকলে দ্রুত বের করে আনা হয়। সে সময় বিড়ালটির মরণদশা হলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হন, সেখানে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে। বিষক্রিয়ার পাশাপাশি এটি পরিকল্পিত হত্যা কিনা সেটাও তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ পুলিশের হাতে আসেনি।

জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদাও একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন।

ওই দম্পতির স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে কামারজুরি এলাকার বাড়ি থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বের হন ওই দম্পতি। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন জিয়াউর রহমান নিজেই। স্কুল ছুটি শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন স্বামী-স্ত্রী। এর পর থেকে তাঁদের আর খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না। ভোরে মহানগরের দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁদের গাড়ির ভেতর চালকের আসনে প্রধান শিক্ষক ও পাশের আসনেই স্ত্রীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে জানান এলাকাবাসী। প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁদের। পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে গেল ২৫ জুলাই সিলেটের ওসমানীনগরের বড় ধিরারাই গ্রামে প্রায় একই ধরনের বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্য থেকে ফেরার পর প্রবাসী রফিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে বাসার একটি কক্ষে ঘুমান। অন্য দুটি কক্ষে শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে অনেক ডাকাডাকির পরও রফিকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোনো সাড়া মিলছিল না। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। রফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ দিন পর মারা যান রফিকুলের মেয়ে সামিরা।

তদন্তের ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সব আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। এটি হত্যা নয়, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের মৃত্যুর কারণ কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles