14.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

গণভবনের সামনে নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা

গণভবনের সামনে নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা

বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাস গণভবনের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক নারী। তাঁর নাম শিরিন খান। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গণভবনের উত্তর পাশের সড়কের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ৩ বছর বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারের পর শিরিন খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ৩৫ বছর বয়সী এ নারী জানান, প্রতারণার শিকার হয়ে একমাত্র সম্বল বসতবাড়ি হারাতে বসেছেন তিনি। কোথাও বিচার পাননি। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। বাস্তুভিটা রক্ষা না হলে আত্মহত্যা করবেন।

- Advertisement -

শিরিন খানের বাবার বাড়ি বরিশালের চরমোনাই। শ্বশুরবাড়ি ছিল ঢাকার মাতুয়াইলে। ৮ বছর আগে মাতুয়াইলের যৎসামান্য জমি বিক্রি করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর বরপার সুতালারায় ৬ শতক জায়গা কেনেন ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। দুইতলা বাড়ি তোলেন সেখানে। আট মাস আগে উচ্ছেদ নোটিশে জানতে পারেন- জমিটি বেসিক ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখার বন্ধকি সম্পত্তি। ঋণ আদায়ে জমি নিলামে বিক্রি করতে চায় ব্যাংক।

বসতবাড়ি হারালে অসুস্থ স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। বাড়ি রক্ষায় গত রোববার আসেন গণভবনের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আশায়।

শিরিন খান জানান, তাঁর স্বামী জুনায়েদ আহমদ খান লিভারের রোগী। শাশুড়ি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের চিকিৎসার টাকা নেই। ব্যাংক থেকে জমি ছুটিয়ে দেবে- এ আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় দালালরা তিন লাখ টাকা নিয়েছে। আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করছে। দুটি ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে ১২ হাজার টাকা পান। এ টাকায় স্বামী ও শাশুড়ির চিকিৎসা, ১৫ বছর বয়সী মেয়ে ও ১২ বছর বয়সী ছেলের পড়াশোনা খরচ এবং সংসার চালাতে হয়। বিলাপ করে বলেন, ‘মরে গেলে, দুধের মাইয়্যা কারে মা ডাকব? মাইয়্যাডারে ভালো খাওন দিতে পারি না।’ শিরিন খান জানান, স্থানীয় আবদুল হান্নান ওরফে হান্নান সৌদির কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। মধ্যস্থতা করেন আয়েস আলী ভূঁইয়া নামে আরেকজন। সোনারগাঁর বৈদ্যেরবাজার ভূমি অফিসে করা দলিলে সাক্ষী হয়েছিলেন স্থানীয় ফজলুল হক ও সালাম শিকার। জমির মূল দলিল ব্যাংকের কাছে বন্ধক জেনেও তাঁরা নকল দলিলে জমি বিক্রি করেন। ব্যাংক বলেছে, বর্তমান মৌজার দরের সমপরিমাণ টাকা দিলে দলিল দিয়ে দেবে।

ব্যাংকে বন্ধক সম্পত্তি কীভাবে বিক্রি করলেন- এ প্রশ্নে হান্নান সৌদি সমকালকে জানান, শিরিনের কাছে বিক্রি করা ৬ শতাংশ সম্পত্তিসহ আশপাশের আটটি প্লটের মালিক জহিরুল ইসলাম জয়। জমিটি বিক্রি করে দিতে জয় তাঁকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন ২০১২ সালে। সেই ক্ষমতাবলে শিরিনের কাছে জমি বিক্রি করেন। কিন্তু জানা ছিল না- জয় আগেই এসব জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এর পর জয় বিদেশ চলে গেছেন। শিরিনের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। শিরিন খান জানিয়েছেন, বিচার চাওয়ায় আয়েস আলী তাঁর নামে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক রাজু আহমেদ সমকালকে জানিয়েছন, মামলা নয়; সাধারণ ডায়েরি হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্তে পাওয়া গেছে, শিরিন খানই ভুক্তভোগী।

২০০৯ থেকে ‘১৪ সাল পর্যন্ত আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে বেসিক ব্যাংকে বহু ঋণ জালিয়াতি হয়। এসব ঘটনায় ৫৬টি মামলা করেছে দুদক। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সেই সময়েই আরেকজনের নামে স্বত্ব দেওয়া জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন জয়। পরে তা কিনে বিপাকে পড়েছেন শিরিন খানের মতো সাধারণ মানুষ।

গণভবনের নিরাপত্তা বাহিনী শিরিন খানকে শেরেবাংলা নগর থানায় দিয়েছে। রাত ৯টার দিকে তিনি সমকালকে জানান, অভুক্ত সন্তানকে নিয়ে থানায় বসে আছেন। তাঁর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- প্রশ্নে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। রাত পৌনে ১১টার দিকে মেরিনাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles