1.8 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

বাংলার সৌরভ নিতে চাইলে…

বাংলার সৌরভ নিতে চাইলে...
ছবিতাসিন ইসলাম

বাংলাদেশে সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত কিংবা ভোরের নিজস্ব গন্ধ আছে। সবচাইতে প্রখর ভোরের সুবাসে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস, কুয়াশা-শিশির মাখানো গন্ধ। সাথে মিশে থাকে বুনো লতানো গাছের মিষ্টি ফুল আর ভেজা ঘাসে সিক্ত মাটির সুবাস। একজন মানুষকে হঠাৎ এরকম আবহাওয়ায় দাড় করিয়ে দিলে সে চোখ বুজে বলে বসবে এটা ভোর বেলা।
.
তারপর মিশতে থাকবে রোদের গন্ধ, মাটির চুলোয় পাটখড়ি গোবর শুকনো পাতা পোড়ানোর গন্ধ। মাটির হাঁড়ি থেকে ছুটবে মোটা চালের সেদ্ধ ভাতের ক্ষুধা সৃষ্টি করা গন্ধ। যেন কাউকে ডেকে বলছে, এবার বাছা মাড়টুকু ঢালতে পারো..
.
বাংলার সৌরভ নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে ধান-চালের আড়ৎ বা রাইসমিল এলাকায়। নিরানব্বইভাগ রাইসমিলে বানান থাকবে ভুল; রাইসের ‘স’ এর বদলে থাকবে ‘ছ’ কিংবা ‘চ’। বিরাট ড্রামের মধ্যে চলবে ধান সেদ্ধ। সেই সুবাস কয়েক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে চালাবে মহাতান্ডব। দশ-পনের’জন মা-ঝি হাত ধরাধরি করে পা দিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ধান শুকাবে। সদ্য সেদ্ধ মোটা ধান হাতের তালুতে নিয়ে নখ দিয়ে ছিলে ভেতর থেকে মিষ্টি শাঁস বের করে চিবালে পাবেন সেই এক অনুভূতি! স্বর্গীয় সুবাস আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। যারা এখনো এ গন্ধ পাননি, তাদের বলবো কোনো রাইস মিলে অপেক্ষা করবেন; যখন ড্রাম বা হাঁড়ি থেকে সেদ্ধ চাল উঠোনে ঢালা হবে, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাদা ধোঁয়া প্রাণ ভরে ফুসফুসে নিতে হবে বারবার!
.
সকাল আটটার দিকে খিদেটা একটু জেঁকে বসলে কোনো এক ছাপড়া দোকানে চলে যাবেন। যেখানে মাত্র কয়েকজন কাস্টমার থাকবে, থাকবে না কোনো মুরগির লটপটি, খাসির স্যুপ, পায়া। থাকবে শুধু পরোটা, ছোলার ডাল আর ডিমভাজা। তাই অনেক যত্ন করে মমতা নিয়ে আপনাকে খাওয়াবে। ডিমগুলো যথেষ্ট পিঁয়াজ-কাঁচামরিচ দিয়ে ভালো করে ডলে নিয়ে গোলাবে। টিপকল থেকে পানি ভরে জগটা আপনার সামনে আস্তে করে রেখে যাবে। পানিতে আয়রনের গন্ধ, ঠান্ডা পানির ফ্লেভার আপনাকে চাঙ্গা করবার জন্য যথেষ্ট। এসব হোটেলে সাধারণত চা থাকে না; আপনাকে পাশের দোকান থেকে এনে খাওয়াবে। আতিথেয়তার কোনো কমতি পাবেন না। আর যা বিল আসবে, সেটা দেখে আপনার মন কিছুটা খারাপই হবে; সামান্য ক’টাকা লাভ করলো দেখে। এখানে দুপুরবেলা খাওয়াটা আরো মজার। চালকুমড়া বা কাঁকরোল দিয়ে হাঁসের ডিমের ঝোল, সাথে ডাঁটা বা লাল শাক ভাজা আর পানির মতো টলটলে পাতলা ডাল। বেশিরভাগ কাস্টমার সাইকেল মেকানিক আর রিক্সা/ভ্যানআলা।

এদের খাওয়া দেখতে খুব ভালো লাগে।
.
তারপর বাসায় ঢুকে দৈনিক খবরের কাগজের হেডলাইনগুলোয় চোখ বুলিয়ে বাজারে গিয়ে কিনে আনবেন দুই আঁটি লাল শাক, একটা মাঝারি সাইজের জ্যান্ত কাতল মাছ, কিছু ফ্রেশ আলু, লেবু আর পটল। মাছটা ভেজে নিয়ে আলু পটলের ঝোল করা হবে, সাথে লাল শাক আর মসুরের ডাল। দুপুরবেলায় গরমে ঘেমে লেবু চিপে টিউবয়েলের ঠান্ডা পানি খেতে খেতে ভাত শেষ করবেন। মাছের মাথাটা ভেঙে মগজটুকু চুষন দিয়ে শাক মিশ্রিত লালচে ডালের স্যুপ সশব্দে ফিনিশ করে বলবেন- আলহামদুলিল্লাহ!
.
সিমেন্টে লাল রেড অক্সাইড মেশানো ঘরের মেঝে প্রতিদিন দুইবার করে ডলে মুছতে মুছতে এমন চকচকে হয়ে যাবে, ত্যালত্যালে অবস্থা। সিলিং ফ্যান চালিয়ে খালি গায়ে ঠান্ডা শানের উপর শিমুল তুলার বালিশে মাথা রেখে দিবেন একটা শান্তির ঘুম। পিঠের নিচে ঠান্ডা পরিষ্কার মেঝের মতো আরামের বিছানা এ জগতে পাবেন না।
.
তারপর ঘুম ভাঙলেই পাবেন বিকালবেলার গন্ধ।
হয়তো দূর থেকে ভেসে আসবে কদম ফুলের সুবাস, কিংবা ধুলো মিশ্রিত বাতাস। বাড়ির পাশে নিমগাছের তলায় কবরটার বাঁশের বেড়া থেকেও ছুটবে গন্ধ। সাথে শিউলি গাছটার খসখসে পাতা, মাটিতে পড়ে থাকা গলিত নিমফল, স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, সুপারি ফলের সুবাস।
.
কবরস্থানেও আছে সুশীতল, ছায়াময়, শান্তির একটা ঠান্ডা ঠান্ডা গন্ধ!
মনটাকে করে ফেলবে পবিত্র, শান্ত, নম্র, বিনয়ী..
যেখানে যেতে হবে আমাদের সবাইকে l

- Advertisement -

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles