1.8 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

‘প্রেমের টান’ এর পরিণতি কী?

‘প্রেমের টান’ এর পরিণতি কী?

২০১৭ সালের ঘটনা। প্রেমের টানে টাঙ্গাইলের সখিপুরে এসেছিলেন মালয়েশিয়ান তরুণী জুলিজা বিনতে কামিস। বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের মনিরুলকে। বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে জানা যায় মালয়েশিয়াতে তার ঘর-সংসার, সন্তান রয়েছে। তরুণী দেশে ফিরে যান বটে কিন্তু ১৫ দিনে মনিরুলের পরিবার তার পেছনে ৮০ হাজারের বেশি টাকা খরচ করে এখনও ঋণগ্রস্ত।

- Advertisement -

ভিন্নচিত্রও আছে। ২০১৭ সালেরই ঘটনা। প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে সুখেই আছেন ভিয়েতনামের নাগরিক টিউ থিতু। দিব্যি সংসার করছেন। যার টানে এসেছেন এই দেশে তিনি এখন প্রবাসী। টিউ এখন বাংলায় কথা বলতে শিখেছেন। তার মতে, বাংলাদেশ খুবই সুন্দর। এছাড়া তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরাও খুবই ভালো। তবে বাঙালি পরিবারের সদস্য হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান তিনি।

২০১৬ সালের পর থেকে হঠাৎই গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায়-প্রেমের টানে আসছেন তরুণ-তরুণীরা। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন ওঠে কেন মফস্বল শহরগুলোতে তারা ছুটে আসছেন? এ ধরনের ঘটনাগুলোর পরিণতি জানতে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এদের অনেকেই দেশে ফিরে গেছেন। বেশিরভাগেরই আর যোগাযোগ নেই। কেউ কেউ বিয়ে করে বরকে সঙ্গে নিয়ে ফিরেছেন। বিদেশে গিয়ে কেমন আছেন তারা, সে বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বেশিরভাগ পরিচয় বিদেশেই
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জুঙ্গলী গ্রামের লিয়াকত হোসেনের ছেলে পাভেল (২৭)। ২০১৪ সালে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে পরিচয় হয় ফাতেমা নামের এক তরুণীর সঙ্গে। পাঁচ বছর পর পাভেল ফিরে আসেন দেশে। পাভেলের ভালোবাসার টানে সে সময় ওই তরুণীও চলে আসেন কুমারখালীতে। গ্রামে ধুমধাম করে বিয়েও হয় পাভেল-ফাতেমার। এরপর ভালোবাসার গল্পটা বেশি দূর এগোয়নি। মাত্র ২৬ দিনের সংসার ফেলে সিঙ্গাপুর চলে যান ফাতেমা। পাভেলের কাছে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে সময় করোনাভাইরাসের লকডাউনে ফিরতে পারেননি। পরে স্বামীকে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেন ফাতেমা।

ফাতেমার মতো অনেকগুলো ঘটনায় দেখা গেছে, প্রবাসে কাজ নিয়ে যাওয়ার পরে পরিচয় এবং কোনও কারণে দেশে ফিরে এলে তাদের জন্য বাংলাদেশে আসেন বিদেশি নারীরা। কিন্তু এসে আর থাকতে না পেরে ফিরে গেছেন।

যে তিনটি কারণ চিহ্নিত করা যায়
সেলফোনের যুগে পুরো বিশ্ব এখন আপনার হাতের মুঠোয়। ফেসবুকে যে কেউ আপনাকে নক করতে পারেন। বিদেশে পরিচিত হয়ে ফিরে আসার পরে সম্পর্ক এগুনোর পাশাপাশি আরও দুই কারণে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। প্রথমত, বিয়ে করে সহজে বিদেশ যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এবং ‘উপমহাদেশের বাইরে নারীরা সহজে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে’—এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে। ভুক্তভোগী একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে ভাষাগত সমস্যা ছিল। অনেকে গুগল ট্রান্সলেটরের ব্যবহার শিখিয়ে আলাপ এগিয়ে নিয়েছে। তাদের একাকীত্বের কথা শুনে মনে হয়নি কোনওভাবে বিয়ের পর ছেড়ে যাবে। বাংলাদেশের একাধিকজন স্বীকার করেছেন, তারা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়ে আগে প্রেমিকাদের জানাননি।

সতর্কতা দরকার
বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরে সেটি আর টিকে না থাকার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন চাঁদপুর সদরের ২ নম্বর আশিকাটি ইউনিয়নের শাহাদাত হোসেন। জুন মাসে তার বিয়ে হয় মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে। বিয়ের পর ১৫ দিনের মতো দেশে ছিলেন জিইনাবচন। এরপর আর যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এধরনের ঘটনায় সামাজিকভাবে হেয় হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে আরও অন্তত চার জনের। তাদের প্রত্যেকে জানিয়েছেন, বিদেশি নাগরিক আসায় সংবাদ হয়েছে, পুরো গ্রাম দেখতে এসেছে আমাদের। এরপর তারা ফিরে যাওয়ায় নানা হয়রানিতে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।

মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা দরকার। সেখানে এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভাষাগত বাধা, সাংস্কৃতিক বাধা থাকে। দূরবর্তী জানাশোনার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় এবং বাংলাদেশের মফস্বলের জীবনের সম্পর্কে বাইরের নাগরিকদের তেমন ধারণা না থাকায় তারা স্বাভাবিকভাবেই আসার পরে আর সম্পর্ক ধরে রাখতে চান না। এ কারণে অল্পদিনেই বিচ্ছেদ হয় বা বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles