রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁডিয়েছে,দিনাজপুরের কিংবদন্তী ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদ।সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই মসজিদকে ঐতিহ্যবাহী প্রতœতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিলেও তিন বছর পরও এটি সংস্কারে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি এখনো।স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে মসজিদটি পরিস্কার করে এর দেয়াল ঘেঁষে টিনসেট আর বেড়া দিয়ে মসজিদের অংশ সম্প্রসারণ করে নামাজ আদায় করছেন। কিন্তু,এভাবে আর কতোদিন ? এখন আবার নতুন করে মসজিদটির দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মূহূর্তে ধবসে পড়ার আশংকা রয়েছে।
সজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান,প্রায় ২৫৪ বছর আগে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলা বেলান নদীর তীরে মীর্জার মাঠের সীমানায় চিকন ইট ও দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি নির্মাণ করেন মির্জা লাল বেগ।প্রতিষ্ঠার সময় মসজিদটির নাম কী রাখা হয়েছিল তা কেউ এখনো বলতে পারেন না। তবে, কেউ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। তা শুনে স্থানীয়রা ভাবতেন মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে স্থানীয় শব্দ ‘আওকরা’ (কথা বলা)-এর সঙ্গে মিলিয়ে মসজিদের নাম রাখা হয় ‘আওকরা মসজিদ’।
আরও পড়ুন :: প্রেমের টানে পরিবারসহ চাঁদপুরে মালয়েশিয়ান তরুণী
মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান আলী এ প্রতিবেদক শাহ্ আলম শাহী’কে জানান, ‘ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজ আদায় করা শুরু করেছি আমরা। সরকার দ্রুত মসজিটি সংস্কার করলে আমার ঝুঁকিমুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম।’
এখনো প্রতিধ্বনি শোনার আশায় মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় শব্দ করে কথা বলেন, অসংখ্য মানুষ। কিন্তু মসজিদের দেওয়াল ফেটে নষ্ট হওয়ায় এবং গায়ে আগাছা জন্মানোয়, আগের মতো আর আওয়াজ হয় না এখন।
স্থানীয় সাংবাদিক নুপুন নাহার চৌধুরী তাজ জানান,এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। তখন মির্জা লাল বেগ এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিল বলে লোকমুখে শুনছি। ব্রিটিশ সরকারের আমলে মুসলিমরা মসজিটির আশপাশের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযতœ অবহেলায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। এ মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এলাকার আজিজুল ইসলাম জানান,এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী তোলা হয়েছে। কিন্তু, দেয়ালের ফাটলের কারণে আতঙ্কে থাকতে হয় মুসল্লিদের।তার দাবী, প্রত্নতত্ব বিভাগ মুসজিসটিতে দ্রুত সংস্কার কাজে হাত দিলে এটি দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হতে পারে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মফিজ উদ্দিন জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদটি পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি, মাইক ও নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। এখন নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে মসজিদটি। কিন্তু, দ্রুত সংস্কার না হলে ঐতিহ্যবাহী নির্দশনটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান আলী জানান, এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজ আদায় করা শুরু করেছি আমরা। মসজিটি সরকার দ্রুত সংস্কার করলে আমারা ঝুঁকিমুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের টীম পরিদর্শন শেষে দ্রুত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।