14.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

রেলওয়ের ৭ হাজার অস্থায়ী শ্রমিকের মাথায় হাত

রেলওয়ের ৭ হাজার অস্থায়ী শ্রমিকের মাথায় হাত

যত ঘণ্টা কাজ করেন তত ঘণ্টার মজুরি পান রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিকরা। দীর্ঘ ১০ বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

- Advertisement -

কিন্তু ২০২০ সালের নিয়োগ বিধিতে তাদেরকে বেসরকারিভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রেলওয়ের প্রায় ৭ হাজার টিএলআর শ্রমিক। পরিবার নিয়ে কাটছে তাদের মানবেতর জীবন।

এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের কাছেও গেছে আবেদন।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ মিছিল করে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার আগে শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতারা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ করেন। সর্বশেষ বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছেন তারা।

আরও পড়ুন :: সব চিটারের দলের সর্দার আমি: রাজশাহীর ছাত্রলীগ সভাপতি

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে স্থায়ী শূন্যপদের বিপরীতে অস্থায়ী দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত প্রায় ৭ হাজার টিএলআর শ্রমিককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রেলওয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সকল টিএলআর শ্রমিকরা কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। বর্তমানে জুন মাস পর্যন্ত টিএলআর শ্রমিকদের সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে কোনও বাজেট বরাদ্দ বা চাকরির মঞ্জুরি এখনো হয়নি। বেতন ছাড়া ৩ থেকে ৪ মাস শ্রমিকেরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারপরও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

রেলওয়ে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে পূর্ব/পশ্চিম অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে ৩ বছরের অধিক সময় কর্মরত অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে। এরপর রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অস্থায়ী (টিআরএল) শ্রমিকদের বেশিরভাগই রেলওয়ের গেইট কিপার, পয়েন্টস ম্যান, পোর্টার, বিদ্যুৎ, ক্যারেজ ও অন্যান্য অপারেশনাল কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তাই তারা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গত ৩০ জুন এক চিঠির মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিআরবিতে হিসাব বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ৮০ জন অস্থায়ী শ্রমিক, কারখানায় বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন দফতরের ১৩০ জনকে এবং লালমনিরহাট ডিভিশনের ক্যারেজ শাখা, চট্টগ্রাম ডিভিশনের সিজিপিওয়াই লোকো শাখাসহ সারাদেশে অস্থায়ী শ্রমিকদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। যা অমানবিক। এতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, রেলওয়ের নতুন নিয়োগ বিধিতে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া এনে রেলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে একটি মহল। যার কারণে প্রায় ৭ হাজার দক্ষ শ্রমিককে ছাঁটাই করার পাঁয়তারা করছে। এর ফলে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিং বন্ধ হয়ে যাবে। অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগের কারণে বাড়তে পারে রেল দুর্ঘটনা। পাশাপাশি অপারেশনাল কর্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিক পরিষদের নেতা শফিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ অস্থায়ী টিএলআর হিসেবে রাজস্ব খাতের অনুকূলে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিককে অব্যাহতি দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে রেলওয়ের ৪টি ডিভিশনাল কার্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। সকল বিভাগীয় ব্যবস্থাপককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।

টিএলআর শ্রমিকদের দাবি- দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে রাজস্ব খাতে কর্মরত সকল অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিকদের রেলওয়েতে চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে। আউটসোর্সিং এর নামে রেলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। রেলওয়েতে প্রচলিত টিএলআর প্রথা বহাল রাখতে হবে। রেলওয়েতে আউটসোর্সিং সিস্টেম বাতিল করতে হবে। রেলওয়ে নিয়োগ বিধি ২০২০ সংশোধন করতে হবে। স্থায়ী নিয়োগ কিংবা অস্থায়ী নিয়োগ সর্বক্ষেত্রে রেল পোষ্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রেলের অনেক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মচারীদের। নিয়োজিত টিএলআররা নানা বিষয়ে আন্তরিকতাসহ রেলের সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। রেলওয়ের স্বার্থ ও মানবিক বিবেচনায় শুরু থেকেই বলেছি আমরা আউটসোর্সিং চাই না। রেলের নতুন আইনে এটা বাতিল করতেও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিকদের সংগঠনগুলো এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছে। সকল টিএলআর শ্রমিকদের চাকরি বহাল করে তাদের স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

সূত্র : বাংলা নিউজ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles