11.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

‘সিন্ডিকেটে বেকায়দায়’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি

‘সিন্ডিকেটে বেকায়দায়’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি

সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে। দ্রুত গতিতে চলছে ওয়ার্ড, ইউনিট থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম। আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে নানাবিধ তৎপরতা শুরুর অংশ হিসেবে ওয়ার্ড থেকে থানা পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে ত্যাগী ও যোগ্যদের নেতৃত্বে আনার কার্যক্রম শেষ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

- Advertisement -

এরই মধ্যে ৭১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ ভোটের ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণের ওয়ার্ড কাউন্সিলও দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে চাইছেন নেতারা।

তবে আন্দোলন-সংগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় একটি সিন্ডিকেটের কারণে বেকায়দায় পড়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষনেতারা।

বর্তমান কমিটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে একটি বলয় উত্তর বিএনপির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে মাঠের নেতাদের উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ মহানগর উত্তরের নেতাদের। এর মধ্যে তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠজন কারাগারে আটক গিয়াস আল মামুন এবং ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান কমিটির এক নেতা জানান, এ কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই একে ব্যর্থ করার মিশন শুরু করেছে একটি সিন্ডিকেট। যদিও এসব তৎপরতাকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, সংগঠনকে সংগঠনের পথে চলতে দেওয়া উচিত। যারা এসব করছেন তারা না বুঝে করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে অবগত রয়েছেন। কেউ ষড়যন্ত্র করে পার পাবেন না।

গত বছরের ২ আগস্ট ঘোষণা করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। দক্ষিণে আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। আর উত্তরে ৪৭ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আমানউল্লাহ আমানকে এবং সদস্য সচিব করা হয় সাবেক ফুটবলার আমিনুল হককে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা জানান, নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর এ সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় প্রত্যেক ইউনিট ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনতে উত্তরে ও দক্ষিণে আটটি করে সাংগঠনিক টিম গঠন করেন নেতারা।

দুই ইউনিটে কর্মীদের জন্য বিতরণ করা হয় প্রায় এক লাখ সদস্য সংগ্রহ ফরম। প্রত্যেক ওয়ার্ডে করা হয় কর্মীসভা। এসব তথ্য ফরম ও আর কর্মীসভার মাধ্যমে বিগত দিনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে উত্তরে ৭১টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৭৪টি ওয়ার্ড আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত এসব কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তরে পাড়া-মহল্লা ও বাজারভিত্তিক ৬২০টি ইউনিট কমিটি গঠন করতে সক্ষম হন বলে জানান দায়িত্বশীল নেতারা।

একইভাবে দক্ষিণেও ৭০২টি ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিলের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

নেতাকর্মীরা জানান, মহানগর কমিটিতে কাউন্সিল প্রক্রিয়া শুরু করায় উজ্জীবিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে দল থেকে ঘোষণা করা হয়েছে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নগর নেতৃত্ব নির্বাচিত হব। তারা জানান, আগে নেতাদের কাছে কর্মীরা যেতেন। কিন্তু বিএনপির এই কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় নেতারা এখন কর্মীদের কছে যাচ্ছেন, ভোট চাইছেন। দলকে সংগঠিত করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এতে তাদের অনেক ভালো লাগছে। দলের মধ্যে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক ধারা বইছে।

সিন্ডিকেট তৎপরতা

জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকেই একটি পক্ষ নতুন কমিটির বিরোধিতা শুরু করে। এদের তৎপরতাতেই নতুন কমিটির নেতারা গত বছরের ১৭ আগস্ট দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে গেলে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। ওই দিন পুলিশের গুলিতে সংগঠনের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ পঞ্চাশের অধিক নেতাকর্মী আহত হন।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, মূলত যারা মহানগর উত্তর কমিটির নেতৃত্ব আসতে পারেননি তাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সাথে যোগসাজশ করে হামলার ঘটনা ঘটায়। সেই কোন্দলে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন গিয়াস আল মামুনের শ্যালক পরিচয় দানকারী ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী।

নগর উত্তর নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির কোনোকালে কোনো পদে না থেকেও ওই পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে দলের অঙ্গসংগঠনের কমিটি বাগিয়ে নিয়েছেন বাহাউদ্দিন সাদী। এবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিতেও তার পছন্দের লোকজনকে পদায়ন করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন তিনি। কিন্তু সেটা করতে না পেরে মহানগর উত্তর বিএনপির কার্যক্রমকেই রুখে দেয়ার ষড়যন্ত্রের লিপ্ত।

এর মধ্যে ৫ জুন মহানগর উত্তর বিএনপির ১ এবং ৫১ ওয়ার্ড কাউন্সিলে হামলা করে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের আহত করার পাশাপাশি কাউন্সিলে আগতদের জন্য আয়োজন করা খাবার নষ্ট করে দেন তার অনুসারীরা। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দল। বহিষ্কার করা হয় তাদের।

এরপর মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে তার অনুসারী দিয়ে মিছিল করান বাহাউদ্দীন সাদী। এসব কর্মকাণ্ডে তার ইন্ধন এবং সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাওয়ায় বিএনপি থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে বলা হয়- ‘বাহাউদ্দিন সাদী বিএনপির কেউ নয়।’

দলের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়- বাহাউদ্দিন সাদী আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তাই তার সঙ্গে দলের কেউ যাতে যোগাযোগ না রাখে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও গিয়াস আল মামুনের প্রভাব খাটিয়ে তিনি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নেতাকর্মীরা জানান, এই বাহাউদ্দিন সাদীর বিরুদ্ধে এর আগে উপনির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরার বাসায় ডিম মারার অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনায় বিএনপির ১৪ জন নেতাকর্মীকে ওই সময়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০২০ সালে ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন দেয় দল। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ঝাড়ু–মিছিল, কালো পতাকা মিছিল, নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সব আয়োজন করেন বাহাউদ্দিন সাদী, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

‘সিন্ডিকেটে বেকায়দায়’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাহাউদ্দীন সাদী বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নই।’

বর্তমান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি একটি বলয় সৃষ্টি করছেন— এমন অভিযোগের জবাবে সাদী বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। আমি উত্তর বিএনপির সঙ্গে জড়িত নই।’

তিনি বিএনপির কেউ নন, দলের এমন একটি চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সাদী বলেন, চিঠি যারা দিয়েছে তারাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। তবে, চিঠির দুই মাস পর কেন এ বিষয়ে কথা উঠছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাহাউদ্দীন সাদী।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, এবার বাহাউদ্দিন সাদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের দায়িত্ব পান তিনি।

একই পদের প্রত্যাশী ছিলেন যুবদল নেতা মিল্টন। আমিনুল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তাকে বিএনপির হাইকমান্ড ও কর্মীদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন তিনি। সম্প্রতি পল্লবী এলাকায় বিএনপির একজন নেতাকে কে বা কারা মেরেছেন এমন অভিযোগ তুলে আমিনুলের বিরুদ্ধে মিছিল করানোর নেপথ্যে কারিগর ছিলেন মিল্টন ও সাদী।

অভিযোগ উঠেছে, ওই মিছিলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করতে মিল্টন যুবদলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে যুবদল কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের তিনি এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং গুলশান যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, আমিনুলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার জন্য মিল্টন সরাসরি তাদের নির্দেশনা দেন। আগামীতে মহানগর উত্তর যুবদলের কমিটিতে স্থান পেতে তার ওই আদেশে অনেকেই আমিনুলের বিরুদ্ধে পোস্ট দিলেও তারা এখন পর্যন্ত দেননি।

এসব বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও মিল্টন সাড়া দেননি। এমনকি মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি এই যুবদল নেতা।

২০২০ সালে ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও যুবদলের সাবেক নেতা এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাহাউদ্দীন সাদীর নাম শুনেছি, ওনাকে চিনি না।’

সাদী বিএনপির কেউ নন এমন চিঠির বিষয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি চিঠির বিষয় শুনেছি। আমি মাঠের কর্মী। মাঠের কর্মীদের চিনি। যে পর্দার আড়ালে থেকে খেলে তাকে আমার চেনার কথা নয়।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মতো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিতেও সিন্ডিকেট তৎপর। তবে তা তত ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কমিটি গঠনের কাজ করছেন মহানগর নেতারা।

বিগত দিনে মহানগরের দুই বলয় মির্জা আব্বাস ও খোকা বলয়কে সমন্বয় রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষনেতাদের। অনেকে পুরনো সেই কোন্দলকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তেমন সফল হতে পারেননি বলে নেতাকর্মীরা জানান।

মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘আমরা সবার সমন্বয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে নগর উত্তর বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের গণতান্ত্রিক সঙ্কটের মধ্যে বিএনপি অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা করছে জানিয়ে আমিনুল বলেন, ‘এভাবেই সাধারণ মানুষের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার কথা। কিন্তু দেশে এখন ভোটাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। আগামী আন্দোলনে তৃণমূল এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।’

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, দক্ষিণে ৮টি সাংগঠনিক জোনভিত্তিক এলাকা গঠন করে কাউন্সিল করা হচ্ছে। দলকে সংগঠিত করতে সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতারা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles