ছেলে মাদকাসক্ত। তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বাবা-মা। মাদক থেকে ছেলেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করছিলেন ব্যবসায়ী বাবা। মাদকাসক্ত সেই ছেলে একজনকে দিয়ে বাবাকে খবর পাঠায় তাকে পুলিশে ধরেছে। ছেলের এমন খবর পেয়ে ছুটে আসেন বাবা। ছেলের পরিকল্পনায় হন নির্মম খুনের শিকার।
নিহতের নাম আব্দুল আজিজ। পেশায় ব্যবসায়ী আজিজ ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাকে হত্যার ঘটনায় তিন যুবক আটক হলেও ছেলে তরিকুল ইসলাম বিপ্লবসহ তিন আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
র্যাব-১৪ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর আখের মুহম্মদ জয় বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে ব্যবসায়ী আজিজ হত্যার ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
র্যাব জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর তরিকুল ইসলাম বিপ্লব তার বাবা আব্দুল আজিজকে নেত্রকোনার পূর্বধলায় ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে ভাড়া করা খুনি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
মেজর আখের মুহম্মদ জয় জানান, এ ঘটনায় উপজেলার ময়লাকান্দা গ্রাম থেকে বিজয় কর্মকার (১৯), মো. তরিকুল ইসলাম রানা (১৮) ও মো. আজাহার মিয়াকে (৩৫) আটক করা হয় । নিহতের ছেলে বিপ্লবসহ আরও ৩ আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।
র্যাব-১৪ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর আখের বলেন, ‘নিহত আব্দুল আজিজের ছেলে তরিকুল ইসলাম বিপ্লব একজন মাদকাসক্ত। মাদক সেবন করে প্রায় সময় বাড়িতে মাতলামি করত। এতে ছেলেকে মাদক সেবন থেকে বিরত রাখতে বাবা শাসন ও ধমকসহ মারপিট করত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলে বিপ্লব বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’
‘ঘটনার দুইদিন আগে ৩০ আগস্ট সন্ধ্যার সময় শ্যামগঞ্জ বাজারে একটি দোকানের পেছনে বসে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিপ্লব তার বন্ধু বিজয়, রানা, আজাহার, রাসেল ও সাধনকে নগদ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। হত্যার মিশন সফল করার জন্য তার সহযোগী বিজয়কে দুইটি চাইনিজ কুড়াল কেনার জন্য ১৫শ টাকাও দেন বিপ্লব।’
র্যাব কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের আগে বিপ্লব তার সহযোগী রানাকে দিয়ে বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায়, তাকে পুলিশ ধরেছে, ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। ছেলের এমন খবরে আজিজ ঘটনাস্থলে ছুটে যান বাবা।
‘সেখানে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিকল্পনা মতো বিপ্লব এবং আজহার পেছন দিক থেকে ভিকটিমের হাত ধরে এবং রাসেল ও সাধন গামছা দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে দুই দিক থেকে টেনে ধরলে বিজয় ও রানা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ভিকটিমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আজিজকে রক্তাক্ত গুরুতর অবস্থায় মাটিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়’—বলেন মেজর আখের।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, হত্যার পর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় পাশের একটি পুকুরে চাইনিজ কুড়াল দুইটি ফেলে রেখে যায়। পরে ছেলে বিপ্লব নিজেই তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ছেলে বিপ্লব, রাসেল ও সাধনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র : ঢাকাটাইমস