9.2 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার লেখালেখি কীভাবে শুরু হয়েছিল

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার লেখালেখি কীভাবে শুরু হয়েছিল
ফাইল ছবি

আমি লেখালেখি শুরু করি ১৯৯২ সালের দিকে। তার আগে যেমনটি সকলের হয়, আমার ঘরেও রবীন্দ্রনাথের লেখা এবং তাঁকে নিয়ে লেখা বেশ কিছু বই জমেছিল। অন্য বিষয় নিয়ে শুরুতে লিখতে আরম্ভ করলেও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখার কথা ভাবিনি কখনও। কারণ একটাই, মনে হতো তাঁর সব কিছু নিয়ে বহুজন বহু কিছু লিখে গেছেন। আমি আর কিই-বা লিখতে পারি নতুন করে! কেননা, ততোদিনেই আমি সাহিত্য-সমালোচকের প্রধান দুটি কাজ – সাহিত্যের ভিন্নতর কোনো মূল্যায়ন অথবা অজানিত কোনো তথ্য-সংবাদ পরিবেশন বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছি।
পূর্বে আমার বাসাতে রবীন্দ্র-রচনাবলী ছিল না। ইতোমধ্যে ঐতিহ্য প্রকাশনী রবীন্দ্র-রচনাবলী ছাপলো বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো সেবারই রবীন্দ্র রচনাবলী ছাপা হলো। আমার এক নিকটজনের কাছ থেকে উপহার পেলাম এক সেট রবীন্দ্র-রচনাবলী। অন্যরকম করে রবীন্দ্রনাথ পড়াও শুরু হলো।

কলেজে ইংরেজি পড়ানোর সুবাদে ইতোমধ্যে আমি কাজ শুরু করেছিলাম ইংরেজি শেখানোর কায়দা কানুন নিয়ে। সেসব নিয়ে পত্র-পত্রিকাতে লিখতেও শুরু করেছিলাম বাংলা এবং ইংরেজিতে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাতে এক লেখা পড়ে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কমিউনিকেটিভ ইংরেজি বই রচনা প্রজেক্টের সাথে যুক্ত টম হান্টার নামের একজন ফোন দিলেন। ইংল্যন্ডের সেন্ট মার্ক এ্যান্ড জন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টম অফিস করতেন ব্রিটিশ কাউন্সিলে। দেখা করলাম। জানলাম তিনি ওই প্রোজেক্টের কো-অরডিনেটর। আস্তে আস্তে ঘনিষ্টতা হলো। একদিন কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি শেখানোর বইগুলোতে কমিউনিকেটিভ মেথডের কথা তাঁকে বললাম। তিনি শুনে বিস্মিত। রচনাবলীতে ইংরেজি শেখানো নিয়ে কবির বই দেখে তাঁর বিস্ময়ের সীমা থাকে না। বললেন ১৯৪০ এর আগে পৃথিবীতে কেউ এমন চিন্তা করেনি, অথচ টেগোর ১৯০২ সালে নিজের স্কুলের জন্যে এমন পাঠ্যপুস্তক লিখেছিলেন কীভাবে? বুঝলাম আমি তাহলে ভুল বুঝিনি। দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখলাম … ছাপা হলো কলকাতার রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটির ‘জার্নাল অব এজুকেশন’-এ (https://www.academia.edu/…/Rabindranath_s_Methodology…)।
সেটাই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আমার প্রথম লেখা । এরপর আবার দীর্ঘ বিরতি।

- Advertisement -

২০০৭-৮ সালের কথা। তখন আমি মহাভারত নিয়ে কাজ করছি। শ্রীমঙ্গলের নৃপেন্দ্রলাল দাশ দাদা আমাকে ফোন করে জানালেন তাঁরা কবিকে নিয়ে একটি বিশেষ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করবেন। আমি যেহেতু মহাভারত নিয়ে কাজ করছি তাই রবীন্দ্রনাথের সাথে মহাভারতের সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে দিতে পারি কি না। রাজি হলাম। লিখলাম। অনেক আনন্দ হতে লাগলো…
এই লেখাটি করতে গিয়ে আমি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ইংরেজিতে অনেক লেখা পড়তে থাকি। যেহেতু বাসাতে ততদিনে জমেছে রবি নিয়ে বিপুল সংখ্যক গ্রন্থ, রচনাবলী, সবকটি জীবনী, তাই তুলনামূলক বিচারে নেমে গেলাম আস্তে আস্তে … দেখলাম সর্বশেষ জীবনীতেও নেই এমন বহু বিষয় আমি জানতে শুরু করেছি। ক্রমে ক্রমে অজানা তেমন সব বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা প্রবন্ধ লিখতে শুরু করলাম। বুঝতে পারলাম প্রবীণ যারা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কাজ করেছেন তাঁদের সম্বল শুধুমাত্র মুদ্রিত এবং সংগৃহীত পত্র-পত্রিকা। সংগ্রহের বাইরে তো রয়ে গিয়েছিল আরো হাজার হাজার দলিল সেটা তারা বুঝতে পারেননি। সেগুলো আস্তে আস্তে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্টারনেট আর্কাইভে নতুন শতাব্দীতে তোলা হচ্ছে যা থেকে আমরা পড়ছি। কিন্তু সেগুলো থেকে পাঠ প্রবীণদের জন্য অনেকটাই দুঃসাধ্য।

মাসের পর মাস অনলাইনে সেগুলো পড়েছি আর নোট নিয়েছি। বইয়ের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখেছি। কমতিগুলোকে ধরার চেষ্টা করেছি। এটাও খেয়াল করতে শুরু করেছি বাংলাদেশে যাঁরা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে লেখালেখি করেন তাঁদের অধিকাংশই চর্বিত-চর্বণ করেন। সেখানে নতুন মূল্যায়ন, নতুন ভাবনার বড়ো অভাব। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আমার আবিষ্কৃত অজানা বিষয়গুলো নিয়ে আমার লিখিত প্রবন্ধগুলো একসাথে করে নাম দিলাম ‘রবীন্দ্রনাথ: কম-জানা, অজানা’।

ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে মূর্ধন্য প্রকাশনী রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে বিশাল এক সিরিজ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিল। আমিও যুক্ত হলাম। আগের দুটি প্রবন্ধকে বইয়ে রূপ দিলাম। নাম হলো ‘রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ: ইংরেজি শেখানো’। বই তিনটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল বছরের শুরুতেই যদিও সবগুলো একসাথে প্রকাশিত হলো ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে অর্থাৎ ২০১২-র বইমেলাতে।

ইতোমধ্যে আরও একটি কাণ্ড ঘটেছে। জাপান-প্রবাসী প্রবীরদার ‘রবীন্দ্রনাথ ও জাপান’ গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করার অফার পেলাম। অনুবাদ করতে গিয়ে যেমন জাপানে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রবীরদার গবেষণার গভীরতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই, তেমনি রবি-প্রসঙ্গটি আমার কাছে আরও স্পষ্ট হতে থাকলো। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত চললো অনুবাদের কাজটি। সেপ্টেম্বরেই প্রকাশিত হলো ‘Rabindranth Tagore: India-Japan Cooperation Perspective’।

এরপর আরো খানিক কাজ করলাম। নিজের লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোকে ইংরেজি করতে শুরু করলাম। ছাপা হতে শুরু হলো ডেইলি স্টার, ডেইলি সান এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায়। পুরোটা শেষ হলে ইংরেজি বইটার জন্যে কোনো প্রকাশকের দ্বারে ধরনা দিইনি। নিজেই তুলে দিয়েছি এমাজনের কিন্ডল এডিশনে। নাম দিলাম Rabindranath Tagore: Less-known Facts.
বইটির অনেকগুলো প্রবন্ধের একটি হলো আমেরিকাতে কবির যে সঙ্কট হয়েছিল তা নিয়ে। আমার ইংরেজি প্রবন্ধটি ছাপাতে অনুমতি চেয়েছিল ইংল্যন্ডের একটি টেগোর সেন্টার। ই-মেইল পেয়ে ভালো লেগেছিল। এমন ছোটোখাটো ভালোলাগাই হয়তো আমাদের মতো ক্ষুদ্র লেখকদের পুরস্কার।

ইস্টইয়র্ক, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles