14.9 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল…

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল...
ফাইল ছবি

যুগের সাথে বাজারের লিস্ট বদলেছে। বউবাজারের কাঁচা বাজার ঠাঁই নিয়েছে এগোরা, স্বপ্ন কিংবা আলমাস সুপার শপে। সামর্থ্যবানেরা কারওয়ান বাজার ছেড়ে ছুটে যাচ্ছেন ইউনিমার্টে। খোলা বস্তার মুসুরির ডাল, চিনিগুড়া চাল ঠাঁই নিয়েছে সুদৃশ্য প্যাকেটে। কলুর বলদের ঘানি ভাঙা সরিষার তেল এখন লেবেল আঁটা বোতলে।

এ দৃশ্য কেবল ঢাকা মহানগরী নয়, দেশের গন্ডি ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার সব বড় শহরে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাঙালি খাবার যোগাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন দেশী গ্রোসারিতে।

- Advertisement -

দেশী গ্রোসারির অনেক কিছুই সুলভে বিদেশী ফ্রাঞ্চাইজ সুপারস্টোরে পাওয়া যায়। তবে দুর্লভ বস্তুটি হলো দেশী সরিষার তেল। নাকে দিয়ে ঘুমোবার জন্য নয়, নানাপদের ভর্তা খেতে তাঁরা ছুটে যান খাঁটি সরিষার তেল কিনতে।

আমি ভর্তা প্রিয় মানুষ। টাকি মাছ থেকে কাঁঠালের বীচি ভর্তা সবই খাই। তবে শর্ত হলো সরিষার তেলটা যেনো ঝাঁঝালো হয়। নাহলে
ম্যাড়মেড়ে পানসে ভর্তায় শিস দেয়া স্বাদ জমেনা।

ছুটির দিনে টরন্টোর বাঙালি গ্রোসারিতে গিয়েছিলাম সব্জি কিনতে। চোখে পড়লো লাল ছালে মোড়া শিলবিলাতি আলু। দামটাও লাল দাগের মতো চড়া। শৈশবে রংপুরে অনেক খেয়েছি। ওরিয়েন্টাল সিনেমা হলের উল্টোদিকের বাজারে খোলা ডালায় বিক্রী হতো। দ্বিতীয় চিন্তা না করে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের থলিতে পাঁচ পাউন্ড ভরে নিলাম।

এবার দরকার শিলবিলাতির ময়েশ্চারাইজিং লোশন! মানে খাঁটি সরিষার তেল।

দোকানের তেল রাখা তাকে তাকালাম। সারি সারি সাজানো ভোজ্যতেল। একপাশে নানান ব্র্যান্ডের সরিষার তেল। সবগুলোই চেখে দেখেছি। বেশ ঝাঁঝালো আর সুস্বাদু। একটা ব্র্যান্ডের নাম শুনলেও প্রথমবারের মতো হাতের নাগালে পেলাম। টাঙ্গাইলের একটি কল্যানধর্মী প্রতিষ্ঠানের তৈরী।

বেকারত্ব দূরীকরণ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য তৈরীর উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে এর যাত্রা শুরু। যার নামের সাথে জুড়ে আছে ‘আলোকিত’ শব্দটি। লভ্যাংশের ১৫% সরাসরি দান করা হয় আর্তমানবতার সেবায়। প্রথম সুযোগেই শপিং কার্টে ‘আলোকিত সরিষা’ তুলে নিলাম।
সরিষার তেলসহ গ্রোসারি করে বাড়ি ফিরতে দুপুর গড়িয়ে পড়েছে। সপরিবারে লাঞ্চ সারতে হয়েছে এক বাঙালি রেস্তোরাঁয়। ভরপেট খাবার পর রাতে খেতে হবে বলে ভাবিনি।

ডিনারে তাই হালকা আয়োজন। বউকে বললাম, শিলবিলাতি বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। ভাবছে ওদের কদর করছিনা। কষ্ট করে একটু তেল মেখে ওদের সমাদর করোনা।

শুরু হলো যৌথ আয়োজন। সিদ্ধ শিলবিলাতির লালমোড়ক খুলতে বেশ সময় লেগে গেলো। মাঝেমধ্যে ধৈর্য্যচ্যুতি হলেও শৈশবের স্বাদ স্মরণ করে জিভে জল এলো। আটার ডো’র মতো আলুর ডো’ প্রস্তুত হয়ে গেলো সহজেই। পাশের পিরিচে নুন মরিচ পিঁয়াজের শুভ মহরৎ।
সরিষার তেল মাখার পালা এবার। আলগোছে বোতলের মুখ খুললাম। ভেতর থেকে কলু বাড়ির তেলচে সুবাস। গরুর জোয়ালে বাঁধা ক্যাচকেচে ঘানিতে পেষা সরষে তেলের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ! ভাগ্যিস নাকের তলায় ঠোঁটদুটো বন্ধ। নইলে কখনযে লালচ গড়িয়ে নিচে পড়তো!
খাবার সারতে বেশ রাত হয়ে গেলো। ভাতেও টান পড়লো। হুশহাস ঝাঁঝটা এখনো জিভের তালু জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
আহা কতোকাল খাইনি এমন স্বাদের সরষে তেলে ভর্তা শিলবিলাতি। ধন্যবাদ আলোকিত পরিবার। ধন্যবাদ আলোকিত সরিষার তেল।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles