14.4 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

নবুহিকো

নবুহিকো - the Bengali Times
নবুহিকো

তার নাম নবুহিকো।আমি তাকে নবু বলে ডাকতাম। নবু জাপানের ছেলে।ইংল্যান্ডের কিল ইউনিভার্সিটিতে যেদিন আমি পৌছুলাম সেদিনই তার সাথে পরিচয়।ঢাকা লন্ডন, লন্ডন ম্যানচেষ্টার মোট ১৫/১৬ ঘন্টার বিমান যাত্রা এবং ১ ঘন্টার ট্রেন যাত্রা শেষে আমি যখন কিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছুলাম তখন বিকাল ৩ টার মতো সময় হবে।হোষ্টেলের রুমে গিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম একই কাপড়ে। সন্ধার আঁধারে কোন কিছুর শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল চোখ খুলে দেখি আমার ঘরের দরজাটা খুলে কে যেন উকি দিচ্ছে।আমাকে পরিচয় দিয়ে জানালো সে জাপান থেকে এসেছে।বললো আমি যদি যাই তাহলে সে আমাকে ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখাবে। আমার দরকার খাবারের তাই উঠে পড়লাম।বললাম কোন ষ্টোরে নিয়ে চলো আগে কিছু খাবার কিনবো।

ইউনিভার্সিটির ষ্টোর থেকে রুটি, মাখন, চিনি, ডিম কিনলাম। ভেতরে ভেতরে চিন্তা কাজ করছে -আমি রান্না জানিনা কিভাবে আমার দিন কাটবে। যাহোক শনিবার,রবিবার রুটি, ডিম, মাখন আর চিনির উপর দিয়ে কাটলো।সোমবার প্রথম ক্লাসে গেলাম।আমার সুপারভাইজারকে ত্রানকর্তার মতো মনে হলো। দূরের একটা বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট থেকে খাইয়ে নিয়ে এলেন এবং শহরটা চিনিয়ে দিলেন যেন আমরা নিজে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারি। কিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিরিবিলি পরিবেশে শহর থেকে দূরে পাহাড়ী এলাকায়।নবুর সাথে আমার বন্ধুত্ব ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে লাগলো।একটু একটু করে রান্না শিখে ফেললাম নিজে থেকেই ট্রায়াল দিতে দিতেই।প্রতিদিন সন্ধায় রান্না করি তখন নবু এসে আমার সাথে গল্প করতে বসে।মনে হলো প্রতিদিন সে ঐ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ওর মাধ্যমেই ওর ক্লাসের ছেলে মেয়েদের চিনে ফেল্লাম।ওর সাথে ছিলো কিছু ভারতীয়,আফ্রিকান আর স্থানীয়।সময় পার হয় আর আমরা আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ি এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে, সেই সাথে কম্পিউটার নিয়ে কাজ তো রয়েছেই। কম্পিউটার মূলত ঐ কিল থেকে শেখা কারন নির্দেশ ছিলো এ্যাসাইনমেন্ট অবশ্যই ছাপার অক্ষরে জমা দিতে হবে।প্রতিদিন বিকালে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে কম্পিউটার নিয়ে টাইপ করতে বসে যেতাম আর আশে পাশে যাকে পেতাম তাকে দিয়ে দেখিয়ে নিতাম কম্পিউটার পরিচালনা পদ্ধতি।এভাবেই অল্পদিনেই কম্পিউটার চালনা মোটামুটি শিখে ফেললাম। একদিন নবুকে বললাম-তোমার কাছে জাপানী গান আছে? বললাম- পৃথিবীর সব ভাষার গানই আমি শোনার চেষ্টা করি।গান তো বুঝিনা কিন্ত্ত সুন্দর গানের সুর, অর্কেষ্ট্রা আমার মনকে দোলা দেয়।নবু সানন্দে একটা কাগজের বক্স এনে আমার হাতে দিলো তাতে একটা সিডি।গান গুলো শুনলাম এবং কয়েকটি গান আমার ভালো লেগে গেল।প্রতিদিনই ঐ গান শুনি। এভাবে বেশ কদিন পেরিয়ে গেল্ নবু বুঝতে পেরেছে ততোদিনে যে তার গানগুলি আমার ভালো লেগেছে তাই হয়তো তার সিডিটি ফেরত চাইছেনা।আমিই একদিন তা ফিরিয়ে দিলাম।

- Advertisement -

নবু মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলে যে তার ক্লাসের উমুক ছেলের সাথে উমুক মেয়ে প্রেম করে। উমুক মেয়ের সাথে উমুক ছেলে প্রেম করে।ওর সমস্যা ও ভালো করে ইংরাজী বলতে পারেনা তাই স্বাভাবিকভাবেই ওর বন্ধুর সংখ্যাই কম।একদিন নালিস দিলো ভারতীয় ক্লাসমেট তাকে মারতে উদ্যত হয়েছিলো।বিষয়টা আমার বুঝতে বাকী ছিলনা কারন ঐ ছেলের বান্ধবীকে নবুর ভালো লাগতো বলে সে আমাকে একদিন বলেছিলো। যাহোক তাকে একদিন ঠাট্টার ছলে বল্লাম-তোমার বাবা তোমাকে পয়সা খরচ করে ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছে কি এখানে কে কার সাথে প্রেম করে তা দেখার জন্য? নবু কোন উত্তর দিলোনা। বেশ কিছুদিন হলো আমার সাথে কথা বলেনা। আমার এক বন্ধু একদিন আমাকে জানালো যে নবু অভিযোগ করেছে সে আগে আমার ইংরাজী ভালো বুঝতো কিন্ত্ত এখন বুঝতে পারেনা।একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। বন্ধুকে বললাম আমি বুঝতে পারিনি যে ইংরাজীতে আমার কথা বলা আগের থেকে একটু দ্রুত হয়ে গেছে আর এ কারনে আমার সাথে কথা বলতে ওর কষ্ট হচ্ছে। নবুর ইংরাজীতে কথা বলা খুব বেশী ইমপ্রুভ হয়নি।

আমাদের কোর্স এর মেয়াদ শেষের পথে। সবাই গোছগাছ করছে। একদিন দুপুর বেলায় আমার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে খুলে দেখি নবু দাঁড়িয়ে আর তার দুহাতে ধরা সেই সিডি। একটু কাপা কাপা স্বরে সে বললো-ডাক্তার আজ রাতে আমি চলে যাবো। আমি জানি তুমি আমাদের গানও শুনতে পচ্ছন্দ করো।তাই এই সিডিটি তুমি রেখে দাও।অবাক হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।মাথা চুলকে বললো-তোমার সাথে অনেক সময় ঠিকমতো আচরণ করিনি। থামিয়ে দিয়ে বললাম-তুমি আমার অনেক উপকার করেছিলো সেদিন যেদিন আমি প্রথম এসেছিলাম এখানে।বললাম-তোমার সিডি আমার সাথে থাকবে।আমি একটা বাংলা গানের সেডি নবু কে দিয়ে বললাম।গান না শুনলেও বন্ধুত্বের প্রতিক হিসাবে ওটা রেখে দিয়ো।নবু চলে গেল।আমি বাংলাদেশে ফিরে গেলাম। তার সিডির গান আমি প্রায়ই শুনতাম।দেশ থেকে কানাডা আসার সময় সব রেখে চলে এসেছিলাম। সেই সিডিও রয়ে গিয়েছিলো।কোথায় হারিয়ে গেছে কেউ জানেনা।জাপানী গান এখনও শুনি ইউটিউবে। তখন নবুর কথা আমার খুব মনে পড়ে। আমার সহজ সরল জাপানী বন্ধু নবুহিকো অটসুকা।
ইনুভিক রিজিওনাল হসপিটাল, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles