2.9 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

ডিম পোচ রেসিপি

ডিম পোচ রেসিপি - the Bengali Times
ফাইল ছবি

অতীতে সহজ রেসিপি দিতে গিয়ে দুনিয়ার বকবকানি করে শেষে দেখা গেছে রেসিপি আসলে দুই লাইনের। বাংলাদেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেওয়ার মতো; সেই যে লিস্ট ধরে ‘ধন্যবাদ’ দেওয়া শুরু করে গো..। আজকে তাই সরাসরি আলোচনায় যাচ্ছি। যারা ভাবছেন এসব জাভেদ আগেও বলছে, আর বেলতলায় যাবেন না; তাদের কাছে প্রমিজ করছি, অন্তত ট্র্যাকে থাকবো।

[শুধু একটা ছোট্ট জিজ্ঞাসা ছিল- আচ্ছা, বেল তলায় গেলে শুধু ন্যাড়ার মাথায়ই বেল পড়ে? যাদের মাথায় ঘন চুল, তাদের মাথায় পড়ে না? আজাইড়া এইসব কথা আবিষ্কার করছেটা কে? আর আমরাও অন্ধের মতো উগড়াই। মানুষ বর্ণবাদী ঠিক আছে, তাই বলে গাছও?]

- Advertisement -

ডিম পোচের প্রকার:
১. পানি পোচ
২. রেগুলার পোচ
৩. তেল ছাড়া পোচ।
মনে রাখবেন, একটা ডিমে গড়ে ৭৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। তেল দিয়ে ভাজলে এর সাথে আরও প্রায় ৩০ ক্যালোরি যোগ করতে পারেন।
উপকরণ:
১. ডিম একটা
২. লবন
৩. তেল
৪. খুনতি
৫. তাওয়া
৬. পিরিচ

প্রণালী:
ধাপ-১ তাওয়া প্রিপারেশন: ডিম পোচ করতে গেলে মানুষ যে মারামারি শুরু করে রে বাবা..। অনেকে খুনতি দিয়ে হাজার চেষ্টা করেও ডিম তুলতে পারে না, ডিম জোঁকের মতো তাওয়া কামড়িয়ে ধরে। এর থেকে উৎরানোর উপায় হলো পরিষ্কার ননস্টিক তাওয়া ব্যবহার করা। না থাকলে ভালো করে মাটি/বালি দিয়ে লোহা/এলুমিনিয়ামের তাওয়া ডোলে ধুয়ে নিবেন।
ধাপ-২ ডিম ভাঙা: তেল ভালোমত গরম হলে তবেই ডিম ভেঙে ছেড়ে দিন [খোসা বাদে]।

ধাপ-৩ লবন ছিটানো: এক চিমটিরও কম লবন ছিটাবেন সারা ডিম জুড়ে। দায়সারাভাবে শুধু কুসুমের উপর ছিটাবেন না। ডিমের স্বাদ লবণ ডিস্ট্রিবিউশনের উপরও নির্ভরশীল।

ধাপ-৪ ডিম উল্টানো: ডিম উল্টাতে গিয়ে হয় যত বিপত্তি। কুসুম ভেঙে গেলে বাচ্চা-কাচ্চা বাড়ি মাথায় তুলবে; বলবে আরেকটা ভেজে আনো। *[আর লাটসাহেবগণ, দয়া করে আপনার গিন্নির সাধের ননস্টিক প্যানে লোহার খুনতি দিয়ে ঘষাঘষি করে চলটা তুলে ফেলবেন না। আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে স্ক্র্যাচ পড়লে কেমন লাগবে?] যাই হোক, যখন দেখবেন ডিমের সাদা অংশে আর কোনো স্বচ্ছ অংশ নাই তখন উল্টাবেন। তলায় ধরবে না। উল্টিয়ে সাথে সাথে প্লেটে তুলে ফেলবেন না। অন্য পিঠ গরম হতে কমপক্ষে তিরিশ সেকেন্ড লাগে। ডিম ভালোমত না ভেজে খেলে টাইফয়েডের জীবাণু থেকে যেতে পারে। আমার এক কাজিন এমন কাঁচা করে ডিম ভাজে..। ঐ ডিমে আঙ্গুল দিয়ে কুসুম ছুঁলে মনে হয় যেন মরা মানুষের গায়ে হাত দিচ্ছি; এমন ঠান্ডা। ডিমের মধ্যে বিজলা বিজলা স্বচ্ছ অংশ থেকেই যায়। আমার এমন ঘিন্না লাগে..

ধাপ-৫ ডিম প্লেটে তোলা: ভাই বোনেরা, তীরে এসে যেন তরী না ডোবে। পিরিচে উঠানোর সময় কুসুম ফাটলে পুরা বেইজ্জতি। তাই প্রশস্ত আকারের খুনতি দিয়ে ডিম তুলবেন।

[একটা মজার কথা মনে হয় আপনাদের বলা উচিত। বাঁশখালীতে থাকতে আব্বার এক অর্ডারলী ছিল, নিরঞ্জন কাকু। আমাদের বাসায় মোরগ রান্না হলেই তাকে ডাকা হতো। সে অতি আগ্রহে মোরগের কাঁচা আন্ডা দুইটা লবন দিয়ে খেয়ে ফেলতো। আমরা ঘিরে ধরে দেখতাম। এতে নাকি “…” বাড়ে]
ডিম পোচ কী দিয়ে খাওয়া যায়?
১. বেস্ট হচ্ছে দুইটা পাউরুটি টোস্ট করে ভেতরে রেখে খাওয়া। কুসুম গড়িয়ে কনুই পর্যন্ত নেমে আসবে। গরম কুসুমের ভাপ আপনার নাসিকা রন্ধ্রে প্রবেশ করে এমন সুখ দেবে; চোখ আলগোসে বন্ধ হয়ে যাবে..!
২. রুটি/পরোটা আর পটল ভাজির সাথে।
৩. সাদা ইরি ধানের গরম ভাতের মধ্যে একটু গাওয়া ঘি আর কিঞ্চিৎ লবন ছিটিয়ে ডিম পোচ দিয়ে খেতে অসাধারণ লাগে।
৪. এমনি এমনি।

আর বাচ্চাদের জন্য ডিম পোচের কোনো বিকল্প নাই। বেড়াতে গেলে বা বাসায়; এরচাইতে পুষ্টিকর আর কিছু নাই। আর পুরুষ ভাইদের একটু সাবধান করতে চাই। আট নয় মাসের বাচ্চারা হলো দুনিয়ার ফাজিল। আমার ধারণা এরা ইচ্ছা করে শুয়ে কাটায়, অলসের বাচ্চা। আর যদি বাপ কোলে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়; তখন হাত পা ছুঁড়ে এমন গগনবিদারী চিৎকার শুরু করে দেয় রে ভাই! তখন সুযোগ পেলেই বাপের “…”য় ধাঁই করে পায়ের গোড়ালি দিয়ে এমন বাড়ি দেবে! বাপ চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকবে। বাচ্চার দাদার নাম পর্যন্ত ভুলে যাবে। এতো ব্যাথা!
আজকে আশা করি এখনো ট্র্যাক হারাইনি, আন্ডার সাথেই আছি।
FAQ [Frequently Asked Questions]:
প্রশ্ন ১: ডিম পোচ করতে গেলে কড়াইয়ের তলায় আটকিয়ে যায় কেন?
উত্তর: এতক্ষন কী বললাম? ধাপ ২ পড়িস নাই?

প্রশ্ন ২: দিনে কয়টা করে ডিম খাওয়া যায়?
উত্তর: বয়স চল্লিশের বেশি হলে দিনে একটা করে ডিম খাওয়া যায়। আর কুসুম বাদে দুই-তিনটাও খাওয়া যায়; যদি প্রোটিন [ডিমের সাদা অংশ] খেতে ডাক্তারের নিষেধ না থাকে। আর শ্বশুরবাড়িতে জামাই এলে সকালে দুইটা ডিম দেওয়াই ভালো।
প্রশ্ন ৩: ভাইয়া, পানি পোচ করতে গেলে ডিম ছ্যাড়া-ম্যারা হয়ে যায় কেন?
উত্তর: হাঁড়ির পানি ফুটানোর পর চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে যখন পানি ফুটা/নড়াচড়া থামবে, তখন ডিম ছেড়ে দিয়ে দেখো তো?
প্রশ্ন ৪: আংকেল, সবাই বলে অঙ্ক পরীক্ষার আগে ডিম খেলে নাকি পরীক্ষায় আন্ডা পায়?
উত্তর: এইসব ঘোড়ার ডিম মার্কা চিন্তা বাদ দিয়ে অঙ্ক করতে বসো।

প্রশ্ন ৫: দুলাভাই, মেহমান আসলে কি নাস্তায় ডিম পোচ দেওয়া যাবে?
উত্তর : যাবে। তবে আরো ভালো হবে যদি ইনস্ট্যান্ট নুডুলস বানিয়ে উপরে একটা পোচ বসিয়ে দাও।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles