12.2 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন নয়

ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন নয় - the Bengali Times

ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্র নিয়ে আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না। এ সম্পর্কিত দেড় শ বছরের পুরনো আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ভুক্তভোগী নারীদের হেনস্তা হওয়া কমবে বলে আশা করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। ধর্ষণ মামলার শুনানিকালে বিদ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণ আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারার ক্ষমতাবলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ভুক্তভোগীকে ‘খারাপ মেয়ে’ বা ‘দুশ্চরিত্রা’ প্রমাণের চেষ্টা করেন। ইংরেজদের করা এ আইনের ধারা অনুযায়ী মামলার জেরার সময় ধর্ষণের শিকার নারীকে অনেক অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয়। ‘দুশ্চরিত্রা’ প্রমাণ করতে পারলেই ধর্ষণের অভিযোগ থেকে বেঁচে যেতে পারে ধর্ষক। দীর্ঘদিন ধরে এ ধারাটি বাতিলের দাবিও জানিয়ে আসছেন নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান আইনটির বিতর্কিত ১৫৫ ধারার ৪ উপধারা বাতিল ও ডিজিটাল রেকর্ড, ফরেনসিক সাক্ষ্যসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হতে পারে।

- Advertisement -

বিতর্কিত এ ধারা বাতিলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন ‘এটি বহুদিনের কাক্সিক্ষত সংশোধন প্রস্তাব। সংশোধনটি কার্যকর হলে ধর্ষণ মামলার বিচারের সময় ভুক্তভোগী নারীদের হেনস্তা হওয়া কিছুটা হলেও কমবে। দেরিতে হলেও এ সংশোধন প্রস্তাব করার জন্য মন্ত্রিসভা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার।’

নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ- যৌন নির্যাতনের বিচার ব্যাপারে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য-প্রমাণ আইনে যে ধারা রয়েছে সেখানে আইনগতভাবেই ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারীকেই দুশ্চরিত্রা প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২-এর ১৫৫ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে- ‘যখন ধর্ষণের জন্য বা বলাৎকার করিবার প্রচেষ্টার জন্য কোনো ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়, তখন ইহা দর্শান যাইতে পারে যে, অভিযোগকারিণী সাধারণত ভ্রষ্ট চরিত্রের ছিল।’ এজন্যই আইনের এ ধারা বাতিলের দাবি নিয়ে ঢাকার রাজপথে পদযাত্রাও করেছেন আন্দোলনকারীরা। এঁদের অন্যতম একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া ইসলাম মুক্তি বলেন, ‘এ ধরনের বিধানের কারণে যৌন নিপীড়ককেই রেহাই পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এখানে আসলে একজন ভিকটিম ন্যায়বিচার পাচ্ছেন কি না তার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর চরিত্র। তাই এটি বাতিল এখন সময়ের দাবি।’ মন্ত্রিসভায় পাঠানো সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে- সমাজ ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপরিমেয় ব্যবহারের ফলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহারক্রমে সংগৃহীত ও প্রাপ্ত ঘটনা, যোগসূত্র ইত্যাদি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধ ও অপরাধকারীকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার বিধান নেই বিদ্যমান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২-এ। কোনো বিষয়ে অভিযোগ আনয়ন, নির্ধারণ ও প্রমাণের প্রথম ধাপ হলো সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত। তদন্ত কর্মকর্তা আলোচ্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইনি বিধান না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কী করণীয় এবং কী পদ্ধতিতে তিনি তদন্ত সম্পন্ন করবেন সে বিষয়ে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তা ছাড়া সংঘটিত অনেক অপরাধ ডিজিটাল পদ্ধতিতে শনাক্ত ও প্রমাণ করা সম্ভব। অন্যদিকে অপরাধী শনাক্ত করতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাপ্ত শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য সাক্ষী হিসেবে এখনো স্বীকৃত নয়। ফলে বিচার কার্যক্রমে ডিজিটাল রেকর্ড এবং ফরেনসিক সাক্ষের অপরিসীম গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের বিদ্যমান এভিডেন্স অ্যাক্টে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক সাক্ষ্য, এদের সাক্ষ্যমূল্য এবং এতদসম্পর্কিত অন্যান্য বিধান সংযোজন প্রয়োজন।

বর্তমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ই-কমার্স বা ই-ট্রেড পরিচালিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত তথ্যাদি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ বা এর সাক্ষ্যমূল্য নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান না থাকায় কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাম্প্রতিক প্রণীত বিশেষ আইনসমূহের অধীন তদন্তকার্য পরিচালনা এবং ডিজিটাল ফরেনসিক সেবাবিষয়ক দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক সাক্ষ্য বিষয়ে কোনো সর্বজনীন বিধান না থাকায় এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮, ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এ সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণের বিশেষ বিধান সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকার্স বহি সাক্ষ্য আইন, ২০২১-এ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এও ডিজিটাল প্রযুক্তিসংক্রান্ত নানা বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, করোনা মহামারির মধ্যে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদানকালে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আদালতকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে এ আইনের অধীন মানুষ আদালতের বিচারিক সুবিধা পাচ্ছে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত আইনসমূহের বিধানাবলি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে বিদ্যমান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ যুগোপযোগী করতে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক সাক্ষ্য, এদের সাক্ষ্যমূল্য, বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles