8 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

মাতৃভাষা নিয়ে কিছু কথা

মাতৃভাষা নিয়ে কিছু কথা - the Bengali Times
ফাইল ছবি

মাতৃভাষা বা নিজের প্রথম ভাষা ভালো করে না জানলে অন্য কোনো ভাষাও ভালো করে জানা যায় না !
ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং বাংলা ভাষার জন্য যারা আজও কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে সম্মান জানিয়ে আমাদের মাতৃভাষা নিয়ে কিছু কথা।

৮ই ফাল্গুন (যদিও ২১সে ফেব্রুয়ারী বলতে আমরা বেশি অভস্ত) হতে কানাডাতে আর মাত্র ৭ ঘন্টা বাকি। আজকের দিনটি বাংলা ঠিক ৭ই ফাল্গুন কি না সেটি নিশ্চিত হতে একটি বাংলাদেশী অনলাইন প্রথম সারির দৈনিক খবরের কাগজ চেক করতে গিয়ে দেখলাম ওখানে শুধু ২০সে ফেব্রুয়ারী লেখা। বাংলা তারিখ খুঁজেই পেলাম না। অবশেষে ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে নিশ্চিত হলাম। এই দেশে থেকে বাংলা মাসের বা দিনের খোঁজ সাধারণত রাখা হয় না।

- Advertisement -

প্রথমে একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেকেই ইদানিং কোনো একটি দিবসকে কেন উদযাপন করা হয় সেটির কারণ ভুলতে বসেছি। যেমন ধরুন মা দিবস, বাবা দিবস বা ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি দিনগুলি মাত্র দিবসের বিষয়টিকে সম্মান দেখিয়ে উদযাপন করা হয়। কিন্তু আমরা ধরে নেই যে, এই নিদৃষ্ট দিনটি শুধু মাত্র উক্ত বিষয় স্মরণ করার দিন। যেমন ধরুন মা দিবস মানে এই না যে আপনি মাবাবাকে স্মরণ করবেন শুধু এই দিনে, অথবা ভালোবাসা দিবস মানে এই না যে আপনি শুধু ওই দিনেই আপনার প্রিয়জনকে ভালোবাসবেন। আসলে বিষয়টি তেমন নয়।

আবার আমরা যারা মুসলমান তারা শুক্রবারের দিনটাকে বিশেষ ভাবে দেখি এবং জুম্মার নামাজকে অনেক মর্যাদা দেই, তার মানে কি এই, যে অন্য দিনে নামাজ না পড়লেও চলবে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি কোনো বিশেষ কারণে যদি শুক্রবার ১/২ দুই দিন বাদও যায় কিন্তু আপনার প্রতিদিনের প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ঠিক থাকে তাহলে অনেক ভালো। কিন্তু শুধু মাত্র জুম্মার দিন নামাজ পড়ে সব পার করে দিলাম তাহলে কি খুব ভালো কাজ হবে ? ঠিক তেমনি কোনো দিবসকে দয়া করে ভাববেন না যে ওই নিদৃষ্ট দিনই ওই কাজের জন্য ধার্য, অন্য দিনগুলি কি তাহলে ফাও। আপনি অবশই প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করবেন এবং ধার্য করা দিবসটিতে স্মরণ করবেন যে, কাজটি আমাকে প্রতিদিন করতে হবে, সে মা-বাবার খোঁজ নেওয়া হোক, প্রিয়জনকে ভালোবাসা হোক বা নামাজ রোজা অর্থ্যাৎ ধর্মকর্মের ব্যাপারই হোক। সে জন্য নিদৃষ্ট কোনো দিবসকে নিয়ে তাচ্ছিল্ল না করে ওই দিবসের যে বার্তা সেটি প্রতিদিন পালন করুন।

শুধু মাত্র ৮ ই ফাল্গুন বা ২১সে ফেব্রুয়ারী হলেই বাংলা ভাষা নিয়ে মাতামাতি করবো আর বাকিদিনগুলি বাংলিশ আর হিংলা করে কাটাবো তাহলে ৮ ই ফাল্গুন বা ২১সে ফেব্রুয়ারীর বার্তা যেমন কাজে লাগবে না, তেমন ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের প্রতিও অবমাননা করা হবে বলে আমি মনে করি। ইউরোপে পড়াশুনাকালীন সময়ে আমার এক ইংরেজ সহপাঠী বলেছিলেন তুমি নিজের ভাষা ভালো না জানলে অন্য ভাষা ভালো করে শিখতে পারবে না। আমি নিজেও সেটি বিশ্বাস করি এবং বিগত বছরগুলিতে কানাডাতে ইমিগ্রান্ট বা অভিবাসী পেশাগত মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি। যাদের বাংলা ভাষার দখল কম তাদের এখনকার ভাষার পেশাগত দক্ষতা অর্জন করতেও কষ্ট হয়।

প্রথমে আমি “গুগলকে” ধন্যবাদ দেই আমাকে বাংলা ভাষাতে লিখতে সাহায্য করার জন্য। তারপর ধন্যবাদ দেই এখানকার FB ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রূপ, পরবাসী ব্লগ এবং সিবিএন, বাংলা কাগজ, নতুন দেশ ইত্যাদি প্রিন্টেড পত্রিকাগুলিকে কারণ তারা আমার বাংলা লেখাকে পোস্ট করে, আমাকে উৎসাহিত করে আমার মাতৃ ভাষাটি ভালো করে জানার এবং প্রতিনিয়ত ভুলগুলি সংশোধন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আর বিশেষভাবে সম্মান জানাই আমার অগণিত পাঠকদের যারা আমার লেখা পড়ে, গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাকে সাহায্য করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে দেশে বা বিদেশে আমাদের কমুনিটির কিছু কিছু মানুষ বাংলাভাষাকে পারলে ভুলে যেতে চান অথবা বাংলার মধ্যে ২/১ অন্য ভাষা না মিশালে অন্যকেUnsmart মনে করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা যা করেন করেন অন্যকে নিরুৎসাহিত করবেন না। বাংলাদেশের সমালোচনা করার মতো অনেক কিছুই আছে কিন্তু আমাদের ভাষা এবং দেশের মাটি কোনো অপরাধ করেনি। একজন ইংরেজ বা একজন ফরাসি তার মাকে মা, মাতা, মা জননী বলে ডাকে না। তারা তাদের ভাষাতেই ডাকে তাহলে আমরা কেন মাকে “মম”, “মাম্মি” ইত্যাদি বলে ডাকবো। যারা এইদেশে জন্মেছেন, এখানে পড়াশুনা করেন তারা হয়তো তাদের সহপাঠী বা বন্ধুবান্ধব থেকে এগুলি শিখতে পারে কিন্তু আমরা সহজেই তাদেরকে বিষয়টি শুধরে দিতে পারি। জিনিসটি খুব যে আপত্তিকর তা নয়, আমি ঠিক একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলাম। কোনো মা যদি ওই ডাকে শান্তি বোধ করেন তাহলে অসুবিধা নেই। আমি জানি আমার মা অন্তত ওই ডাকে ডাকলে অসহ্য বোধ করতেন।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে আমাদের দেশের কিছু সংবাদ পাঠক বা সংবাদিককে জানি এবং তাদের কেউকেউ এখানেও আছেন, উনারা আমাদের থেকে অনেক অনেক ভালো ইংরেজি জানেন কিন্তু উনাদের পেশাদার কাজ ছাড়াও দৈনন্দিন ক্ষেত্রেও উনাদের মুখ থেকে আমি খুব একটা বাংলিশ বা হিংলা শুনি না। সুযোগ পেলে উনাদের কথা শুনি বা উনাদের লেখা পড়ি কারণ তাতে করে নিজের অনেক ভুল ধরা পড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইদানিং মিডিয়ার কিছু লোকজন বাংলা অনুষ্ঠান, বাঙালি দর্শক-শ্রোতা তার পরেও বাংলার মধ্যে অন্য ভাষা ঢুকিয়ে দেন। হাঁ, কিছু কিছু টার্মস আছে যেগুলির হয়তো ঠিক একই রকম বাংলা হবে না, সে ক্ষেত্রে অবশই আপনি বোধগম্য শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু যেই শব্দটির খুব সুন্দর এবং শ্রুতিমধুর শব্দ আছে সেটিকে কেন অন্য ভাষাতে বলবো।

এখন পৃথিবী সবার হাতের মুঠোয় তাই ইচ্ছা করলেই নিজের মায়ের ভাষার দক্ষকতা বাড়ানো বা নিজের ভুলগুলি শোধরানো খুব একটা কঠিন কাজ না। আর, বাসাতে চেষ্টা করুন নিজের মায়ের ভাষাটি ব্যবহারের। আমাদের কিছু লোক আছে দুই একটি ইংরেজি মিশিয়ে বললে নিজেকে স্মার্ট মনে করেন। আমার এক আত্মীয় আছে যিনি তার বৌয়ের সাথে ঝগড়া হলে ফুট-ফাট ইংরেজি বলেন, যদিও তার ইংরেজি ভাষার দৌড় খুব একটা বেশি নয়। আরে ভাই, ইংরেজি তো ঝগড়া করার ভাষা নয়।
আসুন এই বিশেষ দিনকে সামনে রেখে আমরা আমাদের মাতৃভাষার প্রতি আরো যত্নবান হই এবং এখানকার নতুন প্রজন্মকে এই ভাষাটি শিখতে উৎসাহিত করি।
সবাই ভালো থাকুন।

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles