11.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

দুনিয়াকে অবহেলা করা ইসলামের শিক্ষা নয়

দুনিয়াকে অবহেলা করা ইসলামের শিক্ষা নয় - the Bengali Times

আজকাল অহঙ্কার, দুনিয়ার মহব্বত, মন্দ স্বভাব এবং মৃত্যুকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা অধিকাংশ মুসলিম নর-নারীর মনে এক বিরাট হতাশা, হীনতা, দৈন্যতা আর নৈরাশ্যের জন্ম দিয়েছে। তাদের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, পৃথিবীতে তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আর উপায় নেই। এর থেকেও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মানুষ এইসব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে বর্তমান বাস্তবতাকে যেনো সন্তুষ্ট চিত্তেই গ্রহণ করে নিয়েছে । যার কারণে আজ আমরা আত্মপরিচয় ভুলে গিয়ে, নিজেদের অতীত গৌরব থেকে বিস্মৃত হয়ে অন্যের সঙ্গে প্রতারণা কিংবা জুলুম করে হলেও এক তুচ্ছ ও নীচ জাতের জীবনধারা গ্রহণ করে নিয়েছি । ভুল ও ভ্রান্তির সামনে যেনো আজ আমরা বড় অসহায় ।

- Advertisement -

অথচ ইসলাম বারংবার আমাদের ডাক দিয়ে বলে যায়, দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে বস্তুত কোনো পার্থ্যক্য করা উচিত হবে না । দুনিয়া ও আখেরাতের উদাহরণ হলো আত্মা ও দেহের মতো । আত্মা ছাড়া দেহ যেমন বিকল, তেমনি দেহবিহীন আত্মার উপস্থিতিও অসম্ভব ব্যাপার বৈকি । এ জন্যেই দুনিয়াতে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্যে মানুষের প্রয়োজন হলো ঈমান, আর ঈমানের প্রতিদান জান্নাত । এখানে কোনোটাকে আলাদা ভাবার অবকাশ নেই । এ কারণেই দুনিয়াতে সন্ন্যাসের প্রতি কিছুতেই ইসলাম সাপোর্ট করে না । কেননা, সন্ন্যাসের স্বভাব প্রকৃত অর্থে মানুষের জীবনকে আরো বিশৃঙ্খল ও কোণঠাসা করে ফেলে। আত্মাকে অবজ্ঞা করা কিংবা আত্মার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেহকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ ইসলাম রাখে নি ।

সবাইকে পরিষ্কার বুঝে নিতে হবে, মুসলিম উম্মাহের জন্যে দুনিয়ার সামাজিক জীবন এবং জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখার কোনো গত্যন্তর নেই । আমাদের মুসলিম আলোচকবৃন্দও যেনো বিষয়টি মনে রাখেন। কেননা, আল্লাহ তায়ালা সাত আসমান ও আসমানের যাবতীয় গ্রহরাজি এবং এই পৃথিবীর সাত স্তরের জমিন ও জমিনের উপরে বিচরণকারী সকল বস্তু ও প্রাণীকে আপন আদেশে মানুষের সেবার জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছন। যদি পৃথিবীর বিষয়াদি মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না-ই হয়ে থাকে তাহলে এসবের কোনো অর্থ থাকে না । বলুন, তাহলে কেনো এখানে ন্যায় ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তার নবি ও রসুলদের পাঠালেন? এজন্যেই কি নয় যে, এই স্থানটাই মানুষের কাজ করার একমাত্র ক্ষেত্র । আখেরাত তো কেবল প্রতিদান আর ভোগের জন্যে । মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর কাজ থেকেই ইবাদত ও বন্দেগি নিরুপণ করা হয়ে থাকে । এটা কোনো কাজ নয় যে, আপনাকে যেখানে পাঠানো হলো, সেটাকে আপনি অবহেলা করলেন । বরং আপনি যা করার এখানেই করবেন, তবে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান জেনে তাকে ভয় করে চলবেন, ব্যস ।

পৃথিবীতে আপনি কাজ করবেন, ইবাদত করবেন- এ সবই করবেন স্বাধীনভাবে, রাজার মতো মনোভাব নিয়ে, পৃথিবীর কোনো বস্তুর অনুগত না হয়ে । কেননা, সমস্ত সৃষ্টি মানুষের অনুগত থাকবে, মানুষ তাদের অনুগত হবে, তা নয় । আপনি পৃথিবীর অনুগত হবেন না, বরং অনুগত হবেন আল্লাহর । যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি পৃথিবীকেও সৃষ্টি করেছেন, তবে পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন আপনার অনুগত করে । সুতরাং স্রষ্টা হিসেবে সবার পক্ষ থেকে, হোক সে অনুসৃত কিংবা অনুগত, সবার কাছ থেকেই ইবাদতের যোগ্য হলেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তোমরা কি দেখো না, পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহ তোমাদের সেবায় নিযুক্ত করে রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? অথচ এমন লোকও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিবাদ করে বেড়ায়।” (সুরা লোকমান, আয়াত ২০)

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, জেনে রাখবেন, এই পৃথিবী অনর্থক কোনো কৌতুকের বিষয় নয়, বরং পৃথিবী আল্লাহর অপার নেয়ামত । যার কৃতজ্ঞতা আদায় করা সবার জন্যে জরুরি । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তিনি তাঁর বান্দাদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না । কিন্তু যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা-ই পছন্দ করেন।” (সুরা যুমার, আয়াত ৭) সুতরাং আমাদের হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই দুনিয়ার আয়োজনকে গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করতে হবে । লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্যে প্রচুর সাধনা ও আকাঙ্ক্ষা রাখতে হবে । আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করা যাবে না । আমরা নিজেদেরকে যখন পৃথিবীর থেকে বড় এবং পৃথিবীর যাবতীয় আয়োজনকে আমাদের অনুগত বলে ভাবতে শিখবো, আর পৃথিবীর আনুগত্য ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি ধাবিত হবো, তখন আমরাই এক অবিস্মরণীয় মহত্ত্ব্ব অর্জন করে পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে পারবো । যতদিন আমাদের মধ্যে এ দুইটি বৈশিষ্ট্য বজায় থাকবে, ততদিন আমরা মাথা উঁচু করে টিকে থাকবো । এটাই হলো পৃথিবীর নেজাম এবং আল্লাহর শাশ্বত বিধান।

এ জন্যে আল্লাহর কিতাব, তাঁর রাসুলের সুন্নাহ এবং ইতিহাসের লিখিত প্রামাণ্য গ্রন্থাবলির আলোকে দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাস ও বাস্তব ঘটনাবলি আমাদের গভীরভাবে অধ্যয়ন করে দেখতে হবে । পৃথিবীর ইতিহাস বলে, কোনো জাতি ঠিক যখনই তার মূলকাজ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের ধন-সম্পদের অনুগত হয়ে পড়ে, তখনই তাদের দুয়ারে পতনের ঘণ্টা বেজে ওঠে । দুনিয়ায় তখন আর তাদের রাজত্ব চলে না, বরং তারাই হয়ে পড়ে দুনিয়ার নগণ্য প্রজা । অতএব হতাশা, হীনতা, দৈন্যতা আর নৈরাশ্য ঝেরে ফেলে আসুন, আমরা দুনিয়াকে বুঝতে চেষ্টা করি, পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতরাজি নিয়ে গবেষণা করি । আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ে মনোযোগী হই । তাহলে আখেরাতে আমাদের শান্তির পথ সুগম হবে । “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনে ভোগের উপকরণ অতি অল্প।” (সূরা তওবা : ৩৮) কেননা, ভোগের নয়, বরং কাজের ক্ষেত্র হলো দুনিয়া ।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles