7 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

শীতকালে পাগলামি ছাড়া জমে না

শীতকালে পাগলামি ছাড়া জমে না - the Bengali Times
টরন্টোর উইন্টারছবিবনি আব্রাহাম

বড়ো মাপের উদ্যোক্তা দরকার। কেউ যদি রস ওয়ালাকে না ডাকে, সে তো এমনি এমনি হাঁড়ি হাতে হাজির হয়ে গ্লাসে ঢেলে দেবে না। ঠিক কিনা! দ্বিধাগ্রস্ত মানুষ দিয়ে দুনিয়ায় কিচ্ছু হয় না; মরার আগেও আফসোস করবে পঞ্চাশ বছর আগের সেই মিস করা ‘সুযোগ’। এদের মন ঠিকই চায় রস টানতে, কিন্তু ভুলেও লেপ থেকে বের হবে না। কেউ ডাকার পর আবার ঠিকই দেখবেন দাঁত কেলিয়ে নাচতে নাচতে ছুটে এসে ঘিরে ধরবে চাচা মিয়াকে। শুরু করবে মশকরা-“ও কাহা পানি বেশি দেননি তো?, দেকতি ‘ইশির’ মতো লাগে ক্যা?”।

রস টানার পর আরেক মহান উদ্যোক্তা যদি ঘোষণা দেয়- “সকালে ভাপা পিঠা দিয়ে নাস্তা হবে” ব্যাস, কেল্লা ফতে! লোক পাঠানো হবে সাদ্দাম বাজারে পান খাওয়া সেই কাকীর কাছে।
বাংলাদেশ এক আজব দেশ।

- Advertisement -

আকাশে বাতাসে ঘটনা। এমনি কি এতো কবি সাহিত্যিক জন্মায়? পেটে খেঁজুরের রস ঢেলে নিয়ে, গরম ভাপা পিঠা ভেঙে ঘ্রান নিলে মাথা দিয়ে হুড়মুড় করে কবিতা বের হবে না তো কি! প্রতিটা আতপের সেদ্ধ দানা যেন একেকটা মুক্তা, নারকেল কুঁচিগুলো যেন শিউলি ফুলের পাপড়ি। গরম ভাপা পিঠা ভাঙার মতো মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইহজগতে আর নাই। তপ্ত পাটালি গুড় যখন গড়িয়ে নামবে, মনে হবে সর্ষে ফুলের ঝিকিমিকি সোনালী মধুর ঝর্ণাধারার লহরীতে

ইরান দেশের উজ্জ্বল রক্তিম জাফরানের বর্ণচ্ছটা। পিঠার কোনায় কোনায় রয়েছে মায়াবী মা, নানী বা দাদির অদূরে হাতের মায়াবী স্পর্শ। আমি দেশের প্রেসিডেন্ট হলে ভাপা পিঠার আবিষ্কারককে মরণোত্তর গায়েবি নোবেল প্রাইজের জন্য রিকমেন্ড করতাম। কি আইডিয়া! মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারের চাইতে কম কি?
তারপর সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই কিসের যেন অভাব অনুভূত হবে। বাঙালিদের ঝাল আর মিষ্টি; দুটাই লাগে সমানে সমান। আরেক উদ্যোক্তা সাদ্দাম বাজার থেকে ঠোঙা ভর্তি করে নিয়ে আসবে আগুন গরম কলিজার সিঙ্গারা। শুরু হবে উৎসব! গুনে গুনে দুটা বাদাম সাইজের কলিজা থাকে প্রতি সিঙ্গারায়। কিন্তু কি ক্ষমতা! মুখ পুড়বেই। ওটা শেষ হতে না হতেই আরেক কোনো মহিলা উদ্যোক্তা ঘরের কোনায় পড়ে থাকা কাঁচা পাকা বরই শিলপাটায় ছেঁচে এনে যখন সামনে দেবে মা গো মা.. সারা বাড়ি মৌ মৌ করবে বরই এর কষের সাথে কাঁচা মরিচ-ধনিয়ার নেশা ধরানো গন্ধে। আচ্ছা, বিজ্ঞানীরা বরই এর জিনের মধ্যে ধনিয়া পাতা আর কাঁচা মরিচের জীন ঢুকিয়ে দিলেই পারে? গাছ থেকে বরই পেরে শুধু একটু লবন দিয়ে চিবালে কি অবস্থাটা দাঁড়াবে তখন!

তারপর চলে আসবে কনডেন্সড মিল্কের ঘন চা! এ সময় চিনি একটু বেশি না হলে মন ভরবেই না!
পেপার হাতে আর আলসেমি চলবে না।

বাজারে যেতেই হবে, অলরেডি লেট। সাড়ে এগারোটার দিকে মাছের বাজার ফাঁকা হতে শুরু করবে। কিছুটা বৈচিত্র আনতে আরেক উদ্যোক্তা সাহস করে কিনে ফেলবে কেজি খানেক ফলই মাছ। যদিও এ মাছে প্রচুর কাটা। আস্ত রেখে, একটু ভেজে নিয়ে সিম, মটরশুঁটি, আলুর ফালি, টমেটো, ধনিয়া পাতা দিয়ে ঝোল করলে ভাই রে ভাই.. বেহেস্তি খানা একেই বলে। লাল মোটা চালের মাড় গালা ঝরঝরে ভাত, মুলার শাক (কচি মুলা শুদ্ধ) ভাজি, মাসকালাইয়ের ডাল দিয়ে.. ও খোদা! কতবার যে ‘এই শেষ’ বলে ভাত নিতে হবে কোনো ঠিক নাই। বারবার প্রমিজ ভঙ্গ হবে। গরম ডাল টনিকের মতো কাজ করবে। শরীরে হিট তুলে ঘাম ঝরিয়েই ছাড়বে। খাওয়ার মধ্যেই এঁটো হাত দিয়ে কৌশলে সোয়েটার খুলে আবার আরাম করে চেয়ারে পা তুলে বসে
শেষ খাবলা ভাত না নিলেই না।

বিকালে চাচা-মামারা ভাস্তি-ভাগ্নিদের ডেকে আরেক মহান উদ্যোগ নেবে। বলবে- নৌকায় চড়বি কে কে হাত তোল! দেখবেন সবাই দুইপায়ে খাড়া। উদ্যোক্তারাই শেষ পর্যন্ত রেডি হতে লেট করবে। তারপর নদীর ধারে পিচ্চি-পাচ্চার হাতে কিনে দিবে হাওয়াই মিঠাই। নৌকায় চড়ে ঘুরবে। কেউ সাহস করে বলবে, ও চাচা ইকটু চরে ভিড়ান তো? ব্যাস! আর পায় কোথায়, বাচ্চা-কাচ্চারা বালু চরে যে লাফালাফি করবে; শেষে মেরে ধরে আবার নৌকায় তোলা লাগবে।

সবচাইতে আর্টিস্টিক মহিলা উদ্যোক্তা বের হয় বিকালবেলা। কচি মটরশুঁটি ছিলে বলগুলো বের করে বেসনে হলুদ, কাঁচামরিচ আর লবন গুলিয়ে ডাল তোলা চামচ দিয়ে তুলে ডুবো তেলে ভেজে ফেলবে সুপার স্বাদের বড়া। পাতলা পাকান পিঠার মতো দেখতে ওগুলো বেগুনির মতো যত খুশি খাওয়া যায়। জিনিসটার নাম কারো জানা থাকলে একটু বইলেন তো?

**[বিঃ দ্রঃ: আমাকে কেউ শীতের সবজি দিয়ে নলা মাছের ঝোল খাওয়াতে চাইলে দয়া করে কোনো শর্ত দিবেন না। মাসকালাইয়ের ডাল থাকলে চামচ দিয়ে ভাত তোলা আমার পোষায় না। গামলায় কব্জি পর্যন্ত হাত ঢুকিয়ে খাবলা মেরে বুলডোজারের মতো ভাত না তুললে খায়েশ মেটে না। কারও সূচিবায়ু বা অন্য কোনো বায়ু থাকলে মাফ করে দিবেন]

তারপর সাইকেলটা হাতে বের হয়ে ছুটবো উদ্যেশ্যহীনভাবে দক্ষিণে। বটতৈল মোড় ছাড়িয়ে যতদূর যাওয়া যায়.. কোনো স’মিলের পাশে ছাপড়া দোকানে পরপর দুই কাপ মালাই চা মেরে দিয়ে বাসায় ফিরে সরাসরি ছাদে। যেখানে খুব মন খারাপ করা অস্থিরতা পেয়ে বসবে। জোৎস্নার সাগরে ডুব মেরে লোহার চেয়ারটায় বসে কত খাপছাড়া চিন্তা..

তবে এই মোহ ভাঙতেও সময় লাগবে না। যখন রডলাইটের আলোতে শুরু হয়ে যাবে “আজ রবিবার” নাটক!
হাসতে হাসতে শেষ..
সত্যি, আজব একটা দেশ!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles