
আজ ২২ শ্রাবণ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস । আজ আমি রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে কিছু লিখতে চাই বলতে চাই। কিন্তু কি বলবো ? আমাকে যদি কেউ বলে সাগরের গভীরতা কিংবা আকাশের অসীমতা কতোটুকু নির্ণয় করো । আমার পক্ষে কি সম্ভব তা নির্ণয় করা। আজকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখতে বসে আমার মনে হচ্ছে এতো টুকু একটি লেখার মাঝে আমি কি করে রবীন্দ্রনাথকে তুলে আনবো । রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ পঁয়ষট্টি বছর ধরে সাহিত্য সাধনার কালে তার মোট গানের সংখ্যা ২২৩০।
সমাজ, প্রকৃতি, প্রেম,পুজা নানা বিষয়ে তিনি লিখেছেন। তাঁর প্রকৃতিকে নিয়ে লেখা কবিতা গান শুনলে মনে হয় মনে হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার একটা সুযোগ পেলাম। প্রেমের কবিতা গান শুনলে মনে হয়, প্রেমের যে কতো রঙ সেটা যেন রবিন্দ্রনাথ ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারেন নি।
খুব অল্প বয়েস থেকে প্রেমের গান কবিতা লিখতে শুরু করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়েসে তিনি রচনা করেন মায়ার খেলা গীতি নাট্যটি । মায়ার খেলা গীতি নাট্যর, না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখির জলে গানটি রচনা করেন তাছাড়া ১৭ বয়েস থেকে ১৯ বছর বয়েসে কবি বহু প্রেমের গান রচনা করেছেন। তার মধ্যে ‘সখি ভাবনা কাহাকে বলে, ভালোবেসে যদি সুখও নাহি, তবে কেন মিছে ভালো বাসা। এ সমস্ত গানের মাঝে তিনি প্রেমের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরেছিলেন।
১৮৬১ সালের মে মাসের ৬ তারিখ বাংলার ২৫ বৈশাখ জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ জন্ম গ্রহন করেন। বাবা দেবন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবীর ১৪ জন সন্তানের মধ্যে রবিন্দ্রনাথ ছিলেন নবম। কবির জীবন কেটেছে স্কুল শাসনের বাইরে। বহু স্কুল পরিবর্তনের পর যখন তিনি কোনো স্কুলেই টিকতে পারলেন না তখন রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর মা পরিবারের সবাইকে নিয়ে মিটিং করেন। কি করা যায় রবিকে নিয়ে? তখন সবার পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, রবীন্দ্রনাথ বাড়ীতেই পড়া শুনা করবেন। তাঁর জন্য বাড়ীতে আসবেন নানা বিষয়ের শিক্ষক ।
তিনি স্কুল পলাতকে ও তার চরিত্রে বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলো । হয়তো এজন্য তিনি সামাজিক হবার যথেষ্ট প্রশিক্ষণ লাভ করেননি। তিনি এই সম্পর্কে বলেছেন,”আরো একটা কারন আমাকে খাপ ছাড়া করেছিলো আমি স্কুল পালানো ছেলে, পরীক্ষা দেই নি পাস করিনি।
১৮৯৩ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত তিনি ৭ টি কবিতার বই লেখেন। তার মধ্যে ক্ষণিকা ও সোনার তরী বইটি উল্লেখযোগ্য । তিনি ১৯০১ সালে বিশ্ব ভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময় ১৯২১ সালে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়। গীতাঞ্জলি প্রকাশের পর ইউরোপ আমেরিকাতে তার নাম ছড়িয়ে পরে। গীতাঞ্জলী লিখে তিনি ১৯১৩ সালে নবেল পুরুস্কার লাভ করেন। তার অনেক কবিতা পরবর্তীতে গানে পরিনত হয়। নভেল পুরুস্কারের টাকা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যার নাম” শান্তি নিকেতন’”। কলকাতা থেকে নব্বই মেইল দূরে।
১৮৮৪ সালে তাঁর প্রিয় বৌঠান মাত্র পঁচিশ বছর বয়েসে আত্মহত্যা করেন। বৌদি চলে যাবার পর তিনি লিখলেন ,” আমার প্রানের পরে চলে গেলো কে বসন্তের বাতাসগুলোর মতো । রবীন্দ্রনাথ যখন গান কবিতা লিখেছেন সে গান কবিতা মাতিয়ে তুলেছিলো এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলার মানুষকে । রবীন্দ্রনাথের প্রভাব তার জীবিত থাকা অবস্থাতেই বিপুল ছিলো ।
১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ ইহকাল ত্যাগ করেন ৮০ বছর বয়েসে । পেছনে রেখে যান তাঁর হাজারো গান কবিতা এবং অসংখ্য রচনা। যা বাংলা সাহিত্য চিরো জীবিত রাখবে।
ম্যালটন, কানাডা