মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান। একসময় সার্জারি চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। নিজে নিউরো বা কসমেটিকস সার্জন না হলেও পরিচয় দিতেন স্বীকৃত মেডিকেলের চিকিৎসক হিসেবে। ভুয়া পরিচয়ে রাজধানীর মালিবাগের হাসান টাওয়ারে খুলেছিলেন লেজার বিউটি পার্লার। যেখানে টাকার বিনিময়ে অনেক পুরুষকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করতেন।
শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে হাদিউজ্জামান, তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার ও তাদের দুই সহযোগী নুর ইসলাম এবং জনি আহমেদ। জব্দ করা হয় সার্জিক্যাল সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র।
ডিবি বলছে, ভিক্ষাবৃত্তি আর নিজেদের দল ভারি করতে তৃতীয় লিঙ্গদের মধ্যে একটি গ্রুপ প্রলোভন দেখিয়ে পুরুষের লিঙ্গ কেটে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করে। আর এই কাজটা করছিল হাদিউজ্জামান চক্র। শুধু তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর নয়, শরীর ফর্সা করা এবং সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্লান্টে কাজ করত চক্রটি।
অভিযুক্ত হাদিউজ্জামান জানান, একসময় তিনি খুলনায় একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করতেন। সেখান থেকেই তিনি এসব সার্জারি শিখেছেন। খুলনায় থাকতে বেশ কয়েকজনের সম্পর্ক থাকায় রাজধানীতে এই ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকে (খুলনা) অনেকে তার কাছে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করতে আসত। এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ওষুধ সব চীন থেকে নিয়ে এসেছেন।
সার্জারি চিকিৎসক না হলেও হাদিউজ্জামান অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করতে জনপ্রতি এক লাখ করে টাকা নিতেন। শতাধিক মানুষকে এভাবে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেছেন। আর সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্লান্টসহ বিভিন্ন অবৈধ সার্জিক্যাল কাজও করেছেন হাদিউজ্জামান।
একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমন ব্যবসা করে আসছিল এই ভুয়া চিকিৎসক। মূলত তার নেতৃত্বে একটি চক্র মানুষের লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকে। আর পরিবর্তিত লিঙ্গের এসব মানুষ বিভিন্ন জায়গায় হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি ও ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাদিউজ্জামান জানিয়েছেন, সার্জারির আগে হরমোন প্রয়োগ করে তাদের নারীসুলভ শরীর করা হয়। এরপর সার্জারি করা হয়। এসব সার্জারি সে নিজেই করত। এছাড়া কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপন ও ঠোঁটের আকার পরিবর্তন করতেন টাকার বিনিময়ে।
ডিবিপ্রধান হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের সমাজে যারা একটু মেয়েলিপনার মতো, দেখা যায় তারা তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে মেশেন। তাদের একজন গুরু মা রয়েছেন। সেই মা তাদেরকে চাপ সৃষ্টি করে মালিবাগের লেজার বিউটি পার্লারে নিয়ে আসতেন। এরপর সেখানে টাকার বিনিময়ে ওইসব মানুষদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করতেন।’ তদন্ত করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান হারুন।
গুরু মায়েদের খোঁজা হচ্ছে:
চক্রের সঙ্গে জড়িত তৃতীয় লিঙ্গের যেসব ‘গুরু মা’ জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিবি। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক জানান, এর সঙ্গে আর কারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সূত্র : ঢাকাটাইমস